নতুন আইনের প্রস্তাব দেবেন রাষ্ট্রপতি

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে নতুন আইন প্রস্তাব আকারে সংসদে পাঠাবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান। এ আইনের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সংবিধানের অস্পষ্টতাগুলো দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতির নতুন আইন প্রণয়নের এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপকালে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান এ তথ্য জানান। এ সময় আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সংলাপের উদ্যোগকে 'উদার' ও 'মহানুভব' প্রয়াস হিসেবে আখ্যায়িত করে স্বাগত এবং ধন্যবাদ জানায়। একই সঙ্গে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বানও জানান তারা।
সকাল ১১টা থেকে এক ঘণ্টার এ সংলাপে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবদুল জলিল এমপি, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি, কাজী জাফরউল্লাহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ
নাসিম, সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ ছাড়া দলের উপদফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাসও উপস্থিত ছিলেন। তবে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ এমপির সংলাপে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি যেতে পারেননি বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সংলাপের সূচনা বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন গঠন অর্থাৎ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান। আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সুবিবেচনাপ্রসূত মতামত নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানম ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আরও জানান, সংলাপকালে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, স্বাধীনতার ৪০ বছর পার হলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী দেশে এখনও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট আইন তৈরি হয়নি। তিনি শিগগির এ সংক্রান্ত একটি আইনের প্রস্তাব সংসদে পাঠাবেন। ওই আইনকে সর্বজনীন করারও কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। সংসদে এলে তার এ প্রস্তাব অবশ্যই বিবেচনা করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি জানান, সংলাপে বর্তমান কমিশনারদের মেয়াদ বাড়ানো বিষয়ে রাষ্ট্রপতি কোনো কথা বলেননি। আওয়ামী লীগের কাছে তিনি কোনো নির্বাচন কমিশনারের নাম চাননি। আওয়ামী লীগও কোনো নাম দেয়নি। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবও দলের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, সংবিধানের ১১৮(ক) অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে রাষ্ট্রপতিকে একক ক্ষমতা দেওয়া হলেও ১৪৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি এ নিয়োগ দেবেন। রাষ্ট্রপতির নতুন আইনের প্রস্তাবে এ বিষয়টিও সুস্পষ্ট করে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতিকে তার সব প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছে। যদিও জানি না তার প্রস্তাবে কী থাকছে। তা ছাড়া আজই প্রথম তিনি নতুন আইনের প্রস্তাব দিলেন। আইন করতে হলে সংসদেই করতে হবে। যৌক্তিক হলে অবশ্যই সংসদে ওই আইন পাস করা হবে। তবে আমরা আশা করছি রাষ্ট্রপতি এমন কোনো প্রস্তাব দেবেন না যা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হলেও রাষ্ট্রপতির আইন প্রণয়নের উদ্যোগে সাংবিধানিক এসব পদ শূন্য থাকার সম্ভাবনা নেই কিংবা সংবিধানের ব্যত্যয়ও হবে না। সংসদ অধিবেশন না থাকলে রাষ্ট্রপতির প্রস্তাব প্রয়োজনে অধ্যাদেশ আকারে গ্রহণ করা হবে। পরে সংসদে আইন আকারে পাস করা হবে।
সংলাপে বিএনপি ও ড. কামাল হোসেনের নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জাতীয় নির্বাচনের জন্য এবং জাতীয় নির্বাচনের আগেই তা গঠন করতে হয়। অন্যদিকে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে। সামনে ডিসিসি, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, নব গঠিত ও প্রস্তাবিত অন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং শরীয়তপুর উপনির্বাচনের মতো সারাদেশে ?অসংখ্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও উপনির্বাচন রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের অপেক্ষায় তো এসব নির্বাচন ফেলে রাখা যায় না।
তিনি বলেন, বিরোধী দলের সংলাপে অংশগ্রহণ শুভ লক্ষণ। এ কারণে আমরা তাদের স্বাগত জানিয়েছি; কিন্তু সংলাপে গিয়ে যে প্রস্তাব তারা দিয়েছেন, তা অসৎ ও অশুভ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাষ্ট্রপতি তাদের লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশন গঠনের পরামর্শের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো এজেন্ডা ছিল না। অথচ তারা এজেন্ডা বহির্ভূত আলোচনা করেছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়েও বলা হয়েছে_ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সংবিধান সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ ছাড়া কোনো বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে পারবেন না বলে আদালতের রায়ে বলা হয়েছে। এতে এ নিয়ে সংকট যে তিমিরে ছিল, সেখানেই রয়ে গেছে। এসব বিবেচনা করেই আমরা সংবিধান সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছিলাম।
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে এখনও একাত্তরের মতো বিভক্তি রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও এদেশে স্বাধীনতার বিপক্ষের একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী রয়ে গেছে, যারা কখনোই বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। অথচ রাজনৈতিকভাবে তারা প্রতিষ্ঠিত, যার নজির পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। যারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করে না, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রশ্নে তাদের সঙ্গে ঐকমত্য কীভাবে সম্ভব?
এর আগে সংলাপ শেষে বঙ্গভবনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, বিরোধী দল ঘোড়ার আগে গাড়ি চায়। বেগুনের দোকানে গিয়ে তারা ওষুধ চায়। রাষ্ট্রপতি তাদের ডেকেছেন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিষয়ে। কিন্তু তারা এসে তত্ত্বাবধায়কের কথা বলেছেন। তত্ত্বাবধায়কের ব্যাপারে কথা বলতে হলে সংসদে আসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.