শ্বাসরুদ্ধ হয়ে প্রাণ হারাল একই পরিবারের ৫ জন-চট্টগ্রামে ভয়াবহ অগি্নকাণ্ড

ট্টগ্রামে ভয়াবহ অগি্নকাণ্ডে বুধবার গভীর রাতে একই পরিবারের পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আগুনের ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে নিহতদের মধ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূও রয়েছেন। অগি্নকাণ্ডের কবলে পড়া ওই ভবনের আরও তিন পরিবারের লোকজন অল্পের জন্য মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার মাসুম কুটির নামে ভবনটির নিচতলার ভাই ভাই ডিপার্টমেন্ট স্টোরে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এ অগি্নকাণ্ডের সূত্রপাত বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।


ভবনটির বিকল্প সিঁড়ি না থাকায়, নিচতলার প্রধান ফটক ও ছাদে যাওয়ার দরজায় তালা থাকায় এবং আগুনের উত্তাপ ও ধোঁয়ার কারণে চার তলার পরিবারের কেউ বের হতে পারেননি বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এখন মাসুম কুটিরে চলছে শোকের মাতম।
নিহত পাঁচজন হলেন_ মোঃ জাবের ইকবাল (৩০), তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী তামান্না বেগম (২৫), জাবেরের সেজো ভাই আবদুুল মুমিন মোদাচ্ছির (১৯), ভাগ্নে শাওন (৮) ও গৃহপরিচারিকা রুমী আক্তার (২৫)। গৃহকর্তা জাবের ইকবাল স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের হাটহাজারী উপজেলার চৌধুরীহাট শাখার কর্মকর্তা। তার স্ত্রী তামান্না সরকারি হাজি মুহাম্মদ মহসীন কলেজের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শেষ বর্ষের ছাত্রী। জাবেরের সেজো ভাই মোদাচ্ছির মেট্রোপলিটন কমার্স কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। ভাগ্নে শাওন লোহাগাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। নিহতদের গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলায়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে হয়েছিল জাবের ইকবাল ও তামান্নার। পৃথিবীর মুখ দেখা হলো না এই দম্পতির নতুন অতিথির।
ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত ২টা ৫৫ মিনিটে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার এ ব্লকের এক নম্বর রোডের ওয়াই/তিন নম্বর ভবন মাসুম কুটিরের নিচতলার ভাই ভাই ডিপার্টমেন্ট স্টোরে আগুন লাগে। এক ইউনিটের চার তলা বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। মুহূর্তেই আগুনের শিখা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে নিচতলার গ্যারেজে থাকা মাইক্রোবাসেও আগুন লাগে। এ সময় বিকট শব্দে মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এতে ভবনের লোকজনের ঘুম ভেঙে যায়। তারা আগুনের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একমাত্র সিঁড়ি ব্যবহার করার চেষ্টা করেও আগুনের উত্তাপ ও ধোঁয়ার কারণে বাইরে বের হতে পারেননি। উপায়ান্তর না দেখে নিচতলার ভাড়াটিয়া ও ম্যানিলা বিউটি পার্লারের মালিক মোঃ ইদ্রিস তার স্ত্রী ও দু'সন্তানকে নিয়ে পেছনের একটি দরজা দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসেন। দু'তলার ভাড়াটিয়া পরিবারের সদস্যরা বারান্দা দিয়ে লাফিয়ে বাইরে বের হয়ে আসেন। ভবনটির মালিক পারভেজ মোল্লা তার পরিবার নিয়ে তৃতীয় তলায় থাকেন। তিনিও বারান্দা দিয়ে প্রথমে দু'তলার বারান্দায় পরিবারের লোকজন নিয়ে নেমে আসেন। এর পর তারা সেখান থেকে লাফিয়ে নিচে নেমে আগুনের কবল থেকে রক্ষা পান। চার তলার ভাড়াটিয়া জাবের ইকবাল ও তার পরিবারের লোকজন আগুনের উত্তাপ ও ধোঁয়ার কারণে সিঁড়ি দিয়ে নামতে না পেরে আটকে যান। এক পর্যায়ে অক্সিজেনের অভাবে দম বন্ধ হয়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন তারা। অবশ্য জাবেরের মেজো ভাই জোবায়ের ও ছোট ভাই আফরান ইকবাল জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চার তলার বারান্দা দিয়ে প্রথমে তিন তলার বারান্দায় এবং এর পর দু'তলার বারান্দা দিয়ে লাফিয়ে নিচে নেমে আসেন।
ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি গাড়ি নিয়ে ফায়ার কর্মীরা প্রায় দু'ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। এর পর তারা চারতলা থেকে জাবের ইকবাল ও তার পরিবারের লোকজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাদের লাশ মর্গে নিয়ে ময়নাতদন্ত শেষে লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় নগরীর চান্দগাঁও থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। অগি্নকাণ্ড তদন্তে কমিটি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক রুহুল আমিন। তিনি জানান, এটি ব্যক্তিগত ভবন। তাই বিকল্প সিঁড়ি না থাকা কিংবা প্রধান ফটকে তালা থাকার ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে না।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নিহতদের লোহাগাড়ায় কবর দেওয়া হয়েছে।
৫ জনের মৃত্যু সংবাদ সকালে পেঁৗছলে পুরো লোহাগাড়াবাসী শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল নিহত সবার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেছেন, এই শোক পুরো লোহাগাড়াবাসীকে বইতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.