জেলা পরিষদ নির্বাচন-প্রতিষ্ঠানটি জনমুখী করে তোলা হোক

নিয়ম অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান, ১৫ সদস্য এবং ৫ জন সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য নিয়ে গঠিত হওয়ার কথা জেলা পরিষদ। চেয়ারম্যান, সদস্য ও মহিলা সদস্যরা নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে নির্বাচিত হবেন এবং পরিষদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। কিন্তু দুঃখের বিষয়, গত ২০ বছরেও কোথাও কোনো জেলা পরিষদের নির্বাচন হয়নি। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার এ প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কার্যক্রম জেলা পরিষদ আইন ২০০০ অনুযায়ী চলছে জেলা পরিষদ উন্নয়ন সমন্বয় কমিটিকে দিয়ে।


এ কমিটির আহ্বায়ক থাকছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। বর্তমানে ৬১ জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের এ প্রতিষ্ঠানের আট সদস্যের কমিটির কেউই নির্বাচিত প্রতিনিধি নন, জনগণের কাছেও তাঁদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাঁরা সবাই সরকারি কর্মকর্তা। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করে থাকেন জেলা পরিষদ সচিব। তবে পত্রিকা রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, এ বছর প্রথম দিকে জেলা পরিষদ প্রশাসক নিয়োগ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে এবং ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবটির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। গত এপ্রিল মাসে নতুন করে প্রশাসক নিয়োগের উদ্যোগ মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের আপত্তির কারণে ভেস্তে গেছে। পত্রিকার রিপোর্ট জানিয়েছে, এবার সরকার জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। তবে সে নির্বাচন হবে মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে।
আমরা দীর্ঘকাল ধরে লক্ষ করে আসছি, স্থানীয় সরকারের এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দলীয় আনুগত্যের বিবেচনায় কমিটি এবং কমিটির দ্বারা প্রশাসক নিয়োগ চলে আসছে। এতে জেলা পরিষদের কার্যক্রম যথেষ্ট জনমুখী হচ্ছে না। এর কার্যক্রম হয়ে পড়ছে সঙ্কুচিত। চলছে অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে। এমন পরিস্থিতিতে জেলা পরিষদ নির্বাচন-সংক্রান্ত সংবাদ নিশ্চয়ই ইতিবাচক। তবে সে নির্বাচনের উদ্দেশ্য যদি হয় জেলা পরিষদকে শক্তিশালী করা তাহলেই সেটাকে ইতিবাচক বলা যাবে। অন্যথায় নয়। কারণ দেশবাসীর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন এবং চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা খর্ব হওয়ার অভিজ্ঞতাটি মোটেই ভালো নয়। আমরা মনে করি, জেলা পরিষদে স্বচ্ছ নির্বাচন করে, এই প্রতিষ্ঠানটিকে এখন আবার গণমুখী করে তোলা প্রয়োজন। জেলা পরিষদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসন এবং অন্যান্য স্থানীয় অপরাপর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে এই প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের নিবিড়ভাবে জনসেবায় নিয়োজিত করা সম্ভব। কিন্তু যদি দলীয় লোকদের জায়গা করে দেওয়াই হয় প্রধান উদ্দেশ্য তাহলে জেলা পরিষদের নামে অর্থই ব্যয় হবে, এ প্রতিষ্ঠান বা জনগণের কোনো কাজে আসবে না। দ্বিতীয়ত, মৌলিক গণতন্ত্র ধরনের নির্বাচন জেলা পরিষদ ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য হতে পারে। এতে আপত্তির কিছু নেই। আপত্তি আছে প্রতিষ্ঠানটিকে রাজনীতিসর্বস্ব করে ফেলার ব্যাপারে। আমরা আশা করব সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল জেলা পরিষদকে গণমুখী প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চেয়ারম্যান এবং সদস্য নির্বাচনে সহায়তা দেবে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকেও অধিক শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।


No comments

Powered by Blogger.