পার্থ টেস্ট-সব ছাপিয়ে উইকেট

ব্যর্থতা কি তবে দার্শনিক বানিয়ে ছাড়ল মহেন্দ্র সিং ধোনিকে! বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, আরেকটি ধবলধোলাই স্রেফ সময়ের ব্যাপার। সত্যিই সেটা হলে, কোনটি বেশি বেদনাদায়ক হবে, ইংল্যান্ডে ধবলধোলাই না অস্ট্রেলিয়ায়? ভারত অধিনায়কের উত্তর, ‘মৃত্যু সব সময়ই মৃত্যু, ভালোভাবে মৃত্যু বলে কিছু নেই।’ তার মানে এই নয় যে, সম্ভাব্য পরিণতি মেনে নিয়ে বসে আছেন ধোনি। অস্ট্রেলিয়ায় সর্বশেষ সিরিজেও ভারত পার্থে এসেছিল ২-০ পিছিয়ে থেকে।


সেবারও ধারণা করা হচ্ছিল পার্থে পাত্তা পাবে না ভারত। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে ভারত জিতেছিল ৭২ রানে। অনিল কুম্বলের দলের ওই স্মৃতিই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ধোনির দলের। আবার সেই পার্থ থেকেই বিধ্বস্ত দলটি শুরু করতে চায় ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। কিন্তু এবার যে পাল্টে গেছে প্রেক্ষাপট!
গতবার পার্থ টেস্টের আগে দুই শিবিরে বারুদ ছড়িয়েছিল ‘মাঙ্কিগেট’ কেলেঙ্কারি। যুদ্ধংদেহী মেজাজে পার্থে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ভারত। এবারও পার্থ টেস্টের আগে কথার লড়াই খানিকটা জমেছে। গতবার হরভজন-সাইমন্ডস বিতর্কে এককাট্টা ছিল ভারত, এবার সেই দলে নানা রকম অন্তঃকলহের গুঞ্জন। তবে সব ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে ভারতের ভঙ্গুর ব্যাটিং লাইনআপ, অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণ আর ওয়াকার উইকেট। একসময় বিশ্বের সবচেয়ে গতিময় উইকেট মাঝে হঠাৎই যেন হারিয়ে ফেলেছিল নিজের চরিত্র। ৪১৪ তাড়া করে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় কিংবা ভারতের ওই জয়ে বড় অবদান ছিল ওই ভোল পাল্টে ফেলা উইকেটের। কিন্তু গত বছর থেকেই পুরোনো চেহারায় ফিরেছে ওয়াকার উইকেট। ম্যাচের আগে সবচেয়ে বেশি আলোচনা তাই উইকেট, আর সেই সূত্রে দুই দলেরই ‘অল পেস অ্যাটাক’ নিয়ে নামার সম্ভাবনা!
দুঃস্বপ্নের গত অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র সুখস্মৃতি ছিল পার্থ টেস্ট। চার পেসার নিয়ে খেলেই উড়িয়ে দিয়েছিল ইংলিশদের, ম্যাচে ৯ উইকেট করে পেয়েছিলেন রায়ান হ্যারিস ও মিচেল জনসন। চোটের কারণে এবার জনসন নেই, একই কারণে নেই সময়ের আলোচিত পেসার জেমস প্যাটিনসনও। তবে চোট কাটিয়ে ফিরেছেন হ্যারিস। সিডল ও হিলফেনহসও আছেন দারুণ ফর্মে। সঙ্গে দেখা যেতে পারে বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ককেও। মাইকেল ক্লার্কের কথায় মিলল এমন ইঙ্গিতই, ‘টস জিতে ফিল্ডিং নিতে আমি খুব একটা পছন্দ করি না। কন্ডিশন যেমনই হোক, পছন্দ করি না স্পিনার ছাড়া মাঠে নামতেও। কিন্তু দলের জয়ের জন্য যেটা সবচেয়ে ভালো, সেটাই তো করতে হবে। কন্ডিশন অবশ্যই ফাস্ট বোলিং উপযোগী, বিশেষ করে প্রথম দিনে। কন্ডিশন বুঝে আমাকে গোটা দুই ভালো সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
কিউরেটর ক্যামেরন সাদারল্যান্ড অবশ্য বলেছেন, উইকেটে অনেক ঘাস থাকলেও সেটি বিশেষ ধরনের বলে সিম মুভমেন্ট খুব বেশি থাকবে না। তবে বাউন্স অনেক থাকবে, এমনকি টার্ন পেতে পারেন স্পিনাররা। তার পরও চার পেসার খেলানোর কথা ভাবছে ভারতও। তা-ই যদি হয়, তাহলে সম্ভবত অভিষেক হবে বিনয় কুমারের। তবে স্পিনার না খেলালে একটা সমস্যাও হবে, হারাতে হবে সিরিজে তাদের দ্বিতীয় সেরা ব্যাটসম্যান রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে! ধোনি অবশ্য সিদ্ধান্ত নিতে চান শেষ মুহূর্তে, ‘আমাদের দেখতে হবে কতটা ঘাস ছেঁটে ফেলা হয়, রোলিং কতটা করা হয় আর উইকেট কতটা শক্ত থাকে। দেখতে হবে স্পিনাররা আদৌ কোনো সহায়তা পাবে কি না। উইকেট বুঝেই বোলিং আক্রমণ সাজাব।’
প্রথম দিন ব্যাট করতে হলে অস্বস্তিতে পড়তে পারে অস্ট্রেলিয়া। টপ-অর্ডারে তিন অনভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে বেশ অসহায় মনে হয়েছে জহির খানের সুইংয়ে। ভারতের ভাবনা অবশ্য গোটা ব্যাটিং লাইনআপ নিয়েই। গম্ভীর-শেবাগ-দ্রাবিড়-লক্ষ্মণ-কোহলি কেউই অস্ট্রেলিয়ান পেস আক্রমণের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারেননি। যিনি খানিকটা পেরেছেন, সেই শচীন টেন্ডুলকারকে নিয়ে যথারীতি ঘুরপাক খাচ্ছে পুরোনো প্রশ্নটা—পার্থেই কি দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটানো সেই শততম সেঞ্চুরি? তথ্যসূত্র: এএফপি ও ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.