রাষ্ট্রপতির সংলাপ-ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ

বিদমান নানা ইস্যুতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে যখন আলাপ-আলোচনা দূরে থাকুক, পরস্পরের মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ তখন রাষ্ট্রপতির ডাকে সাড়া দিয়ে বড় দলগুলোর বঙ্গভবনে যাওয়ার ঘটনা যথেষ্ট আশাবাদের সৃষ্টি করেছে। এ কথা সত্য, রাষ্ট্রপতি একটি প্রতিষ্ঠান_ দলমত নির্বিশেষে সকলের অভিভাবক তিনি। তার আহ্বানে সাড়া দেওয়া প্রত্যেকের নৈতিক কর্তব্য। তারপরও নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির তরফে সংলাপের ডাক দেওয়ার পর এ সংলাপের সফলতা নিয়ে অনেকেই সংশয় ব্যক্ত করেছিলেন।


সংবিধান অনুসারে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে তিনি এ দায়িত্ব পালন করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে, প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। দেশের বিবদমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির এ মনোভাব খুবই ইতিবাচক ফল দিয়েছে। ভবিষ্যতের বিবাদ মিটিয়ে ফেলার জন্যও একটি রোডম্যাপের আভাস পাওয়া গেছে। শুরুতে সংশয় থাকলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি রাষ্ট্রপতির সংলাপে গিয়েছে। খুবই আন্তরিক ও সন্তোষজনক পরিবেশে দলটি তাদের মত রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছে। বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল মনে করে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন উদ্ভূত রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে। বিএনপি ও সমমনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক জোট এ দাবিতে আন্দোলন করছে। এমন অবস্থান সত্ত্বেও সংলাপে উপস্থিত হয়ে অবস্থান জানানোর বিষয়টি সাধুবাদযোগ্য। অন্যদিকে কিছু রাজনৈতিক দল জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন করা জরুরি_ যাতে আইন অনুসারে সংবিধানসম্মতভাবে যোগ্য ব্যক্তিরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। নির্বাচন কমিশনারকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার পক্ষেও অনেকে মত দিয়েছেন। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বর্তমান ব্যবস্থাতেই নতুন কমিশনার নিয়োগের পক্ষে মত দিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে স্পষ্ট হয়েছে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে আইন প্রণয়নের আহ্বান জানাতে পারেন রাষ্ট্রপতি। আওয়ামী লীগের তরফে বিষয়টিকে স্বাগত জানানোর আভাসও মিলেছে। আইন প্রণীত হলে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ নিয়ে অতীতে যেসব ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না বলেই আশা করা যায়। পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও তৎপর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এসব উদ্যোগের পাশাপাশি, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের কমিশনার হিসেবে নিয়োগদানের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। সংলাপের চূড়ান্ত সফলতা অর্জিত হবে তখনই, যখন সবাই নতুন কমিশনারদের স্বাগত জানাবে। রাষ্ট্রপতির ডাকে আয়োজিত সংলাপের প্রাথমিক সফলতার পর সকলের মনে আশা জেগেছে। সংঘাত-সংঘর্ষ, রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামের বদলে যদি সংলাপেই সমাধান হয় তবে কেন বৃথা অপচয়ের দিকে যাবে রাজনৈতিক দলগুলো? নাগরিকরা মনে করে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে উদ্যোগের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। রাষ্ট্রপতিও সব রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় ডাকতে পারেন। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো সহিষ্ণু ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসবে বলেই সবাই আশা করে। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রপতির সংলাপের মধ্য দিয়ে যে ইতিবাচক ধারা শুরু হলো, তা অব্যাহত থাকুক। আমাদের রাজনীতি থেকে জ্বালাও-পোড়াও, সংঘাত-সংঘর্ষ চিরতরে দূর হোক। গঠনমূলক রাজনীতির পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।

No comments

Powered by Blogger.