চরাচর-সুন্দরবনে কুমির নিরাপদ নয় by আলম শাইন

বিশ্বের অন্যান্য দেশ, যেমন_ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং আফ্রিকা মহাদেশের নদনদীতে প্রচুর কুমির বাস করে। একমাত্র বাংলাদেশেই একটু ব্যতিক্রম। এখানে সুন্দরবন ছাড়া (পালিত ছাড়া) আর কোথাও যত্রতত্র কুমির দেখা যায় না। বাংলাদেশের এই অঞ্চলের কুমিরকে বলতে হয় সুন্দরবনের জলাধার রক্ষণের অতন্দ্র প্রহরী। এদের হিংস্রতার কারণে দুষ্কৃতকারীরা অবাধে সুন্দরবনের জলাশয়ে বিচরণ করার সুযোগ পাচ্ছে না।
প্রাণীটি না থাকলে বোধ করি সুন্দরবনের জলাশয় মৎস্যশূন্য হয়ে পড়ত এত দিনে এবং আকাল পড়ে যেত মৎস্যসম্পদের। ফলে ব্যাহত হতো আমাদের আমিষের চাহিদা। কুমির সরীসৃপ প্রাণী। লম্বায় সাধারণত ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত হয়। এদের শরীর শক্ত কাঁটাওয়ালা আঁশে আবৃত। কুমিরের পা চারটি, প্রতিটি পায়ে পাঁচটি আঙুল। আঙুলের মাথায় ধারালো নখ থাকে। সামনের পা পেছনের পায়ের চেয়ে সামান্য ছোট। কুমির উভচর প্রাণী। মিঠা ও নোনা_উভয় জলে এদের বাস। স্বভাবে খুবই হিংস্র প্রকৃতির। বলা যায়, হিংস্রতায় বাঘের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয় এরা। কুমির বছরে একবারই ১৫ থেকে ২০টি ডিম পাড়ে। মা কুমির মুরগির মতো ডিমে তা দেয়। ৪০ থেকে ৪৫ দিন তা দিলে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। জন্মের সময় বাচ্চারা ১০ ইঞ্চির মতো লম্বা থাকে। এত লম্বা হয়ে জন্মানোর পরও তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে না। বাবা কুমির এদের গলাধঃকরণ করে। আশ্চর্য হলেও সত্য, কুমির শীতকালে কোনো খাবারই গ্রহণ করে না। কুমিরের আয়ুষ্কালেও রহস্য লুকিয়ে আছে। এদের আয়ুষ্কাল ৫০০ বছর! বিষয়টি ভাবলে ভিরমি খেতে হয়। কিন্তু চোরাশিকারিদের কারণে খুব কম কুমিরই তার আয়ুষ্কাল পূর্ণ করতে পেরেছে। বলে রাখা ভালো, এই দীর্ঘ আয়ুষ্কালই এদের বিপদ ডেকে এনেছে। গবেষকরা কুমিরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়েই আলাদাভাবে রীতিমতো গবেষণা করছেন। কিভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ বানানো যায়, সে প্রতিযোগিতায় নেমেছে আন্তর্জাতিক ওষুধ কম্পানিগুলো। ফলে বিশ্ববাজারে এদের ব্যাপক চাহিদা থাকায় চোরাকারবারিরা সুন্দরবনে ঢুকে অবাধে কুমির শিকার করছে। বেশ অভিনব পদ্ধতিতে কুমির শিকার করছে তারা। এক. বিষাক্ত বল্লম ছুড়ে। দুই. রাতের আঁধারে কুমির যখন পানির ওপর ভেসে ওঠে তখন এদের চোখে টর্চের আলো ধরে রাখে শিকারির দল। তির্যক আলোকরশ্মি চোখে পড়লে কুমির আর নড়াচড়া করতে পারে না। সেই সুযোগে শিকারিরা দূর থেকে বল্লম ছুড়ে কুমির বধ করে। এভাবেই সুন্দরবনের কুমির মানুষের পৈশাচিকতার কাছে হার মানতে বাধ্য হচ্ছে। চোরাশিকারিরা একবারও ভাবছে না যে এটি আমাদের জাতীয় সম্পদ। তারা যৎসামান্য অর্থের বিনিময়ে অমন মহামূল্য সম্পদটি ভিনদেশিদের হাতে তুলে দিতে কেন কার্পণ্য করছে না, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। তাই বলতে হয়, এখনো সময় আছে_আসুন, আমরা সোচ্চার হই এবং যেকোনো উপায়ে কুমির শিকারিদের প্রতিহত করে জাতীয় সম্পদ তথা উপকারী বন্ধুদের বাঁচিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করি।
আলম শাইন

No comments

Powered by Blogger.