গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ঘাটতি কেন? by মোহাম্মদ মতিন উদ্দিন

বাইকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের এ লেখা শুরু করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু পারছি না। সত্যিকার অর্থে নিজের মনে এক বেদনাদায়ক অনুভূতি কাজ করছে। বিশেষত পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দে সময় কাটানোর জন্য ছুটে চলা মানুষের করুণ মৃত্যুর কথা শুনে মনটা বিষণ্ন হয়ে পড়েছে।
লঞ্চডুবি, বাস-ট্রাকে বহনকারী মানুষের দুর্ঘটনায় মৃত্যু দেখে মনে হয়েছে এদেশের জনগণের নিরাপত্তার বড় অভাব। দেশের শাসন কাঠামোর যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা যেমন কথায় এবং কাজে বিশৃঙ্খল, দেশের সব কিছুতেই যেন তার প্রভাব অহরহ বেড়েই চলেছে। অথচ আমরা একথা জানি, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মৌলিক বিষয় হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে জনগণের জানমাল, বৈষয়িক জীবন, নির্ভয়ে চলাচলের ব্যবস্থাসহ জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মর্যাদা প্রদান করার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ এক অদ্ভুত দেশ, যে দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন নেতৃত্বের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব যে পরিমাণ মনোযোগী—জনগণের ক্ষেত্রে এ প্রশ্নে কঠিন উদাসীনতা। দেখেশুনে মনে হয় এ দেশের রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব যেন এদেশের জনগণের জন্য নয়, অন্য কারও জন্য।
ডিজিটাল টাইমের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার ঘোষণা যেভাবে দেয়া হয়েছিল তাতে করে মনে হয়েছিল হয়তোবা অক্টোবরের ১৯ তারিখ ২০০৯-এর পালা শেষ হবে। কিন্তু তা হলো না। জনজীবনে এর ভোগান্তি যে কী-রূপ গ্রহণ করেছে তা দেখার ফুরসত মনে হয় এদেশের শাসকদের থাকে না। ছোট-ছোট শিশু ঘুমন্ত অবস্থায় চলছে মায়ের কোলে বসে স্কুলে এটেন্ড করার জন্য। এ যাত্রাও নিরাপদ নয়, এমনিতেই এ সময়টায় যানবাহনের সঙ্কট থাকে, তার ওপর পথেঘাটে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ার ভয়। এসব বিষয় নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি যে হচ্ছে না তা নয়; কিন্তু নীতিনির্ধারিকদের এক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা। যে শিশুরা দেশের ভবিষ্যত্, ডিজিটাল টাইম মেইনটেইন করার জন্য তারা যে অসুস্থ হয়ে পড়ছে—এ কথা কি এদেশের শাসকদের কানে ওঠে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিশুদের মায়েরা একদিন পথে নামবে, বিক্ষোভ-সমাবেশ করবে, তখন হয়তোবা শাসকগোষ্ঠীর টনক নড়তে পারে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ থাকলে আজকেই এই তথাকথিত ডিজিটাল টাইমের, যে ডিজিটাল টাইম দেশের ভবিষ্যত্ কারিগরদের অসুস্থ করে ফেলছে, মায়েদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলছে, মা-শিশু উভয়ের জীবনকে নিরাপত্তাহীন করে তুলছে তার সমাপ্তি ঘোষণা করা দরকার। যে সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে দেশের ভবিষ্যত্ সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার অবসান ঘটানো গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল শাসকগোষ্ঠীর অবশ্য করণীয় হয়ে পড়ে। কিন্তু এদেশে সেটা হচ্ছে না। মুখে গণতন্ত্রের নামে বড় বড় কথা বলা আর কাজে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতি চরম অবহেলা প্রদর্শন কেবল নীতিনৈতিকতাহীন শাসকগোষ্ঠীই করতে পারে।
‘ফুটপাতে রমরমা চাঁদাবাজি’—এই শিরোনামে ২৫ নভেম্বর ২০০৯ দৈনিক নয়া দিগন্তে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। কর্মসংস্থানের সীমাহীন সঙ্কটের মাঝে বৈষয়িক জীবনের প্রয়োজনে নিজেই নিজের ব্যবস্থা করার জন্য যে হকাররা কাজ করছে, তারাও চাঁদাবাজদের হাত থেকে মুক্ত নয়। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের চাঁদাবাজি যে চলতে পারে না একথা অনেকেই জানেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের নাগের ডগায় যখন এসব ঘটনা ঘটে তখন জনগণের নিরাপত্তাদানে কার্যরত সংস্থাগুলো মনে হয় নাকে তেল দিয়ে ঘুমায় অথবা নিজেদের স্বার্থে দেখেও না দেখার ভান করে। রাজধানীর মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররম, পল্টন, স্টেডিয়াম, জিপিও, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, গোলাপশাহ মাজারসহ গুলিস্তান এলাকায় এসব চাঁদাবাজি চলে। এসব এলাকায় কাদের নেতৃত্বে চাঁদাবাজি চলে এই রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছে। তার পরও এর প্রতিকারে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন কতটুকু কার্যকর ভূমিকা পালন করছে সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে এসব চাঁদাবাজি চলতে পারে না, কিন্তু চলছে এটাই বাস্তবতা।
প্রতি বছর লঞ্চডুবির মতো ঘটনা ঘটে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, আত্মীয়স্বজনের বুকফাটা কান্না দেখলে মনটা এমনিতেই বিষণ্ন হয়ে যায়; কিন্তু আমার মনে হয় এসব বিষয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থার কোনো দায়িত্বশীলতা নেই। আত্মীয়স্বজনের বুকফাটা কান্না মনে হয় সংস্থার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কানে ঢোকে না, যদি ঢোকে তবে লঞ্চ পরিবহনে যে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে তার অবসান হয় না কেন? দেখেশুনে মনে হয় জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের প্রশ্নে সচেষ্ট হওয়া এদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়া রাস্তাঘাটের যানবাহনের দুর্ঘটনা এক নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কে গাড়ি চালাবে আর কে চালাবে না এ প্রশ্নে মনে হয় কর্তৃপক্ষের কোনো আইন নেই, অথবা আইন থাকলেও তার কার্যকারিতা নেই। এরকম এক দেশে আমরা বাস করছি। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বড় অভাব এই দেশে। কিন্তু কেন?
আমার মনে হয়, রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের উত্পাদন বিমুখ চরিত্র আর দেশপ্রেমহীনতা এর মূল কারণ। ক্ষমতার প্রশ্নে জনগণকে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতে যেমন এদের বাধে না, ঠিক তেমনই এসব প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতেও তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র সংকোচ কাজ করে না। উত্পাদন থেকে বিচ্ছিন্ন পথে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার প্রবণতা থেকেই চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কমিশন বাণিজ্য, জবর-দখল ইত্যাদি এরা করে থাকে। এ প্রবণতার মাঝে কোনো গঠনমূলক চরিত্র কাজ করে না, ফলে অন্যান্য জীবনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার বিষয়ও এর মধ্যে গড়ে ওঠে না। অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার ক্ষেত্রে উত্পাদনমুখী প্রবণতা যাদের মধ্যে কাজ করে তাদের মধ্যে স্বাভাবিক কারণেই গঠনমূলক মানসিকতা গড়ে ওঠে, কারণ উত্পাদন সংগঠিত করতে হলে উত্পাদনের শর্তগুলোকে সংগঠিত করতে হয়। দায়িত্বশীল আচরণ না করলে উত্পাদন কার্যক্রম সংগঠিত করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে, আর এসব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে উত্পাদনী কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে অর্থবিত্তের মালিক হওয়াটাও কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাভাবিক কারণেই রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের উত্পাদনশীল চরিত্র গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য অপরিহার্য একটি বিষয়। ঐতিহাসিক কারণেই আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে উত্পাদনশীল চরিত্র এবং দেশপ্রেম প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
আমার এ কথা শুনলে অনেকে রাগান্বিত হতে পারেন; কিন্তু এ দেশের বাস্তব অবস্থার দিকে দৃষ্টি দিলে মনে হয় এ রাগের কোনো কারণ থাকবে না। আমাদের দেশের দেশীয় উত্পাদনশীল ক্ষেত্রগুলো যা এদেশীয় বাজারের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে, সেগুলোর প্রতি এদেশের রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব যত্নশীল নয়। প্রথমেই ধরুন, সুতাকলগুলোর কথা। সুতা উত্পাদন করে তারা এদেশের বাজারে সুতা বিক্রি করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশীয় বাজার দেশীয় শিল্পগুলোর জন্য সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে মনোযোগী হলে সুতাকলগুলো এ অবস্থায় পড়ত না। যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ তৈরির শিল্পের ক্ষেত্রে এবং প্লাস্টিক শিল্পের ক্ষেত্রে একই অবস্থা। সর্বত্রই একটা অমনোযোগী অবস্থা। যে দেশের শাসকরা প্রতিষ্ঠিত পাটকলকে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে ধ্বংস করার ব্যবস্থা নেয়, সেই শাসকদের কাছ থেকে দেশীয় শিল্পরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মনোযোগ আশা করা বাতুলতা মাত্র। এ কারণেই এদেশের কৃষকরা তাদের উত্পাদিত পণ্য উত্পাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের উত্পাদনশীল চরিত্র এবং দেশপ্রেম থাকলে বাংলাদেশের কৃষকদের এ অবস্থা হতো না। উত্পাদন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে যারা নিয়োজিত তাদের প্রতি যদি সত্যই অনুকূল অবস্থা বজায় থাকত এবং বাজার ব্যবস্থাও তাদের স্বার্থে বিন্যস্ত থাকত তাহলে এদেশের কৃষক সমাজ উপকৃত হতো, দেশের কৃষি আরও বিকশিত হতো। কিন্তু সেটা হচ্ছে না বাংলাদেশের শাসক শ্রেণীর উত্পাদনবিমুখ চরিত্রের কারণে। আমাদের দেশের শাসক শ্রেণীর চরিত্র উত্পাদনবিমুখ কেন হলো—এ বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে বোঝা দরকার। অবশ্য এ বিষয়টি স্বল্পপরিসরে আলোচনা করা দুরূহ ব্যাপার। হয়তোবা আলোচনা করা যাবে, কিন্তু পাঠকসমাজকে খুশি করা যাবে না।
খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে বলতে হয় পৃথিবীতে উন্নত দেশগুলো কর্তৃক অনুন্নত দেশগুলোকে জবর-দখল করে উপনিবেশে পরিণত করার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেই উপনিবেশে পরিণীত দেশগুলোর শাসক শ্রেণীর উত্পাদনবিমুখ চরিত্রের মূল রহস্য নিহিত। উন্নত দেশগুলো নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থে অনুন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক বিকাশে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, জন্ম দিয়েছে এমন এক রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের— যে নেতৃত্ব উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্বার্থেই গোলামে ব্যবহৃত হয়। এই গোলামি চরিত্রের কারণে নিজ দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থকে তারা উন্নত দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের অধীন করে ফেলেছে। এ কারণে উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রয়োজনে গড়ে ওঠা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাতবরিকে তারা বিনা দ্বিধায় মেনে নেয়। শুধু তাই নয়, উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রয়োজনে নিজ দেশীয় রাষ্ট্রযন্ত্রের নতুন নতুন সংস্কারে তারা মনোযোগী হয়। এ অবস্থার কারণে আমাদের মতো দেশগুলোর অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বও আজ নামেমাত্র বিরাজ করছে। নামেমাত্র বিরাজমান অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় স্বার্বভৌমত্বের কারণে এদেশীয় উত্পাদনশীল খাতের স্বাধীন বিকাশ হচ্ছে বাদাগ্রস্ত। উত্পাদন খাতের এই পরাধীন চরিত্রের কারণে এদেশে গণতন্ত্রের চর্চাও পরিণত হয়েছে নামেমাত্র। একটা দেশের অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের স্বাধীন চরিত্র ছাড়া যেমন গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না, তেমনই হতে পারে না গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ। এ কারণেই এদেশে জনগণের জানমাল, বৈষয়িক জীবন, নির্ভয়ে চলাচলের ব্যবস্থাসহ জনগণের আকাঙ্ক্ষা নিরাপত্তাহীনতার খাদে পড়ে আছে। উত্পাদনবিমুখ রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের কর্তৃত্ব অবসান করা ছাড়া এ অবস্থা পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই।
শুধু আমাদের দেশেই নয়, যে কোনো দেশের রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি হয় উত্পাদন বিমুখ চরিত্রের তাহলে সেসব দেশেও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ হবে বাধাগ্রস্ত, জনগণের জীবন হবে নিরাপত্তাহীনতার শিকার। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার প্রয়োজন প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের বিষয়টিকে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। আর এ কাজটি হতে পারে যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্নকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই করার যোগসূত্র স্থাপন করে এবং এই লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আপসহীন চরিত্র অর্জন করে। এ আপসহীন লড়াইয়ের চরিত্র যত শক্তিশালী হতে থাকবে বিশ্বে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চার ধারা ততটাই বিকশিত হবে।
এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো বুদ্ধিবৃত্তির ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশের জন্য উন্নত কিন্তু আগ্রাসী শক্তিগুলোর স্বার্থের বিশ্বায়নের বিপক্ষে জনমতকে শক্তিশালীভাবে সংগঠিত করা। প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বকে স্বাধীন চরিত্র দানের বিরুদ্ধে কার্যরত শক্তি তথা নিয়ম-কানুনকে প্রতিহত করা। কেননা এ প্রক্রিয়ার সফল পরিণতি বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশকে করবে উন্মুক্ত, জনগণের জানমাল, বৈষয়িক জীবন, স্বাধীনভাবে চলাচলের ব্যবস্থাসহ জনগণের আকাঙ্ক্ষা পাবে নিরাপত্তার গ্যারান্টি। আধিপত্যবাদী বিশ্বায়নের অবসান ঘটবে, জন্ম নেবে গণতান্ত্রিক বিশ্বায়নের, আর এই গণতান্ত্রিক বিশ্বায়নের বিকাশ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশকে নতুন পর্যায়ে এগিয়ে নেবে। এ ধরনের একটি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার কাজে আমরা যতটা এগিয়ে যেতে পারব আমাদের দেশের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অভাব মোচনের বিষয়টিও ততটাই এগিয়ে যাবে। এটা ছাড়া এদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অভাববোধ তথা জনগণের জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি সুদীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকবে। আমরা নিশ্চয় এটা চাই না।

No comments

Powered by Blogger.