মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ড-জবানবন্দি শেষে কারাগারে আশরাফ-আলম গ্রেপ্তার, কবির আটক by সুমন বর্মণ,

রসিংদী পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন হত্যা মামলায় শহর যুবলীগের সভাপতি আশরাফ হোসেন সরকারের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জবানবন্দি শেষে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান।এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন শহরের সাটিরপাড়ার কুমিল্লা কলোনি থেকে কাজী আলমকে গ্রেপ্তার ও কবির হোসেনকে আটকের কথা স্বীকার


করেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, লোকমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যের ভিত্তিতে কাজী আলমকে গ্রেপ্তার ও কবির হোসেনকে আটক করা হয়েছে। তারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।
কাজী আলমকে গ্রেপ্তারের ফলে লোকমান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল সাতজনে। তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত মাত্র একজন। অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তিনজনকে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ফারুক, মাহফুজ ও শাহিন রিমান্ডে রয়েছে। আশরাফ হোসেন সরকার, হাজি সেলিম, কাজী টিপ্পন ও নাসির কারাগারে এবং কাজী আলম গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে। আশরাফ হোসেন সরকার ও হাজি সেলিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গোয়েন্দা পুলিশ গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় আশরাফ হোসেন সরকারকে নরসিংদী আদালতে হাজির করে। সকাল ১০টায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার জন্য তাঁকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিহাবুল ইসলামের কক্ষে হাজির করা হয়। দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা জবানবন্দি নেওয়া শেষে বিকেল ৪টায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ জন্য আদালতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ।
আশরাফ হোসেন সরকারের আইনজীবী শরফুদ্দীন খান মুকুল দাবি করেন, 'আমাদের মক্কেল আশরাফ হোসেন সরকারকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়ার জন্য সকাল ৯টায় ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে ঢুকানো হয়। আমি তাঁর জামিন আবেদনের জন্য আদালতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। কিন্তু পুলিশ কৌশলে তাঁকে টয়লেটের কথা বলে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। আশরাফকে এজলাসে তোলা হয়নি। তাই আমরা তাঁর জামিনের আবেদন করতে পারিনি। এভাবে কৌশলে আসামিকে কারাগারে পাঠানো আইনবহির্ভূত কাজ।'
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, লোকমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যের ভিত্তিতে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আশরাফ হোসেন সরকারকে ১৬ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে প্রথম দফায় ১০ দিনের এবং দ্বিতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ডে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন এবং হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। তাই গতকাল তাঁর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, কুমিল্লা কলোনি থেকে গ্রেপ্তারকৃত কাজী আলম লোকমান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি মোবারক হোসেন মোবার ছোট বোনের স্বামী। মোবারককে লোকমান হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে পুলিশ সন্দেহ করছে। কাজী আলম পাইকারি কাপড়ের ব্যবসা করে। তার বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা ও একটি অপহরণ মামলা রয়েছে। এ ছাড়া পলাশ থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা রয়েছে। লোকমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তারকৃত কাজী টিপ্পনের বাড়ি একই এলাকায়। তার সঙ্গে কাজী আলমের সখ্য রয়েছে।
কবির হোসেন নরসিংদী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। ছোট বেলা থেকে সে আলমের বাসায় থাকে। বাড়ির পাশেই তার একটি টেলিকমের দোকান রয়েছে।
পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আশরাফ পুলিশের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। কিন্তু ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কী বলেছে_প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার আগে সে সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না।'
তিনি বলেন, 'লোকমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এই ঘটনায় কাজী আলমের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করেই তাকে গ্রেপ্তার করেছি। তাকে আগামীকাল (আজ) বুধবার আদালতে তোলা হবে।'
হত্যাকাণ্ডে কবির হোসেনের সংশ্লিষ্টতা এখনো পাওয়া যায়নি। তাই তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
উল্লেখ্য, ১ নভেম্বর নরসিংদী পৌর মেয়র লোকমান হোসেন সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই কামরুজ্জামান বাদী হয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ছোট ভাই সালাহ উদ্দিন আহমেদকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামিদের মধ্যে দুজন ছাড়া সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে আরো একটি মামলা করে।

No comments

Powered by Blogger.