আমেরিকার মালিক কে? by আবু এন এম ওয়াহিদ

দানীং 'হু ওউনস আমেরিকা' বলে ইংরেজিতে একটি কথা শোনা যায়। তারই অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, 'আমেরিকার মালিক কে'? প্রশ্নটি শোনামাত্র যে কেউ উত্তর দিতে পারেন, 'যারাই আমেরিকাকে ভোগদখল করে খাচ্ছে তারাই আমেরিকার মালিক'_অর্থাৎ 'আমেরিকার জনগণই আমেরিকার মালিক।' উত্তরটি সঠিক। তবে এটি বর্তমানকালের পরিপ্রেক্ষিতে। একই প্রশ্নের আরেকটি মাজেজা থাকতে পারে এবং সেটি ভবিষ্যৎকালের জন্য।


ওই পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরও হবে ভিন্ন, যেমন_'যে আমেরিকাকে কিনতে পারবে সে-ই হবে আমেরিকার মালিক।' আমেরিকাকে কিনতে গেলে স্বভাবতই দ্বিতীয় প্রশ্ন উঠবে_আমেরিকার দাম কত? যেকোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা কম্পানির দাম নির্ভর করে তার নেট ওয়ার্থের (যাবতীয় সম্পদের মূল্য বিয়োগ দায়দেনা) ওপর। একইভাবে আমেরিকার বাজার দাম নির্ভর করবে তার নিট সম্পদের পরিমাণ বা নেট ওয়ার্থের ওপর। প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে যত দূর জানা যায়, সব আমেরিকানের নেট ওয়ার্থের পরিমাণ সর্বসাকল্যে প্রায় ৬৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শুধু আমেরিকার ফেডারেল গভর্নমেন্টের ঋণ হলো ১৪.৩ ট্রিলিয়ন ডলার, তার ওপর স্টেট এবং লোকাল গভর্নমেন্টগুলোর ঋণ যোগ করলে এ অঙ্ক হয়তো বা ১৫ ট্রিলিয়নে গিয়ে ঠেকবে। সরকারগুলোর এ পরিমাণ দায়দেনা বাদ দিলে আমেরিকার নেট ওয়ার্থ হবে ৪৮ ট্রিলিয়ন ডলার। ট্রিলিয়ন একটি বিশাল সংখ্যা। এক লাখ কোটিতে হয় এক ট্রিলিয়ন। অঙ্কটি লিখতে গেলে একের পরে বসাতে হয় একাধারে বারোটি শূন্য (১,০০০,০০০,০০০,০০০)। এক ট্রিলিয়ন ডলার কত, তা বোঝানোর জন্য একটি উদাহরণই যথেষ্ট। প্রতি মিনিটে ১০০ ডলার করে খরচ করলে এক ট্রিলিয়ন ডলার ওড়াতে কত দিন লাগবে? পাঠক একবার অনুমান করুন। আপনারা জেনে অবাক হবেন, প্রতি মিনিটে ১০০ ডলার করে খরচ করলেও দীর্ঘ ১৯ হাজার বছরেও এক ট্রিলিয়ন ডলার শেষ করা সম্ভব নয়।
যে দেশের দাম ৪৮ ট্রিলিয়ন ডলার, সে দেশকে কোনো ব্যক্তি বা জাতির পক্ষেই কেনা সম্ভব নয়। এর প্রশ্নই ওঠে না। তার পরও আধুনিক অর্থনীতি এবং ব্যবসার ভাষায় আমেরিকার মালিক কে বলতে বোঝায় আমেরিকার ঋণ কার কাছে? বা আমেরিকা কার কাছ থেকে ঋণ করে? কিংবা আমেরিকার ঋণের মালিক কে? আমেরিকার ঋণ কত তা অনেকেই জানেন। আমেরিকার বর্তমান ঋণ তার জিডিপির প্রায় সমান সমান। অর্থাৎ ১৫ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। অনেকের ধারণা, এর পুরোটাই বা বেশির ভাগই বুঝি চীনের কাছে। কিন্তু না, তা ঠিক নয়। আমেরিকার মোট ঋণের মাত্র ৪.৫০ ট্রিলিয়ন ডলার বিদেশিদের কাছে। বাকি ১০.৫০ ট্রিলিয়ন ডলার আমেরিকানদের কাছ থেকেই নেওয়া। বড় বিদেশি ঋণদাতারা হচ্ছে_সুইজারল্যান্ড ১০৮ বিলিয়ন ডলার, হংকং ১২১.৯০ বিলিয়ন ডলার, রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার, ক্যারিবিয়ান ব্যাংকিং সেন্টারস ১৪৮.৩০ বিলিয়ন ডলার, তাইওয়ান ১৫৩.৪০ বিলিয়ন ডলার, ব্রাজিল ২১১.৪০ বিলিয়ন ডলার, ওপেক দেশগুলো ২২৯.৮০ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাজ্য ৩৪৬.৫০ বিলিয়ন ডলার, জাপান ৯১২.৪০ বিলিয়ন ডলার এবং চীন ১.১৬ ট্রিলিয়ন ডলার_মোট প্রায় ৩.৫০ ট্রিলিয়ন ডলার। বিদেশি ঋণের অবশিষ্ট ১ ট্রিলিয়ন ডলার আরো অনেক ছোট ছোট দাতাদেশ থেকে নেওয়া।
দেশের ভেতর থেকে আমেরিকা এ পর্যন্ত ঋণ নিয়েছে মোট ১০.৫০ ট্রিলিয়ন ডলার। এর বেশির ভাগ আসছে নিম্নলিখিত খাত থেকে_আমেরিকান মিউচ্যুয়াল ফান্ডস ৩০০.৫০ বিলিয়ন ডলার, আমেরিকান কমার্শিয়াল ব্যাংকস ৩০১.৮০ বিলিয়ন ডলার, আমেরিকান স্টেট, লোকাল এবং ফেডারেল রিটায়ারমেন্ট ফান্ডস ৩২০.৯০ বিলিয়ন ডলার, আমেরিকান মানি মার্কেট মিউচ্যুয়াল ফান্ডস ৩৩৭.৭০ বিলিয়ন ডলার, আমেরিকান প্রাইভেট পেনশন ফান্ডস ৫০৪.৭০ বিলিয়ন ডলার, আমেরিকান স্টেট অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্টস ৫০৬.১০ বিলিয়ন ডলার, আমেরিকান ব্যক্তি খাত ৯৫৯.৪০ বিলিয়ন ডলার, আমেরিকান ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ১.৬৩ ট্রিলিয়ন ডলার, আমেরিকান সোশ্যাল সিকিউরিটিজ ট্রাস্ট ফান্ডস ২.৬৭ ট্রিলিয়ন ডলার_মোট প্রায় ৭.৫০ ট্রিলিয়ন ডলার। দেশজ ঋণের অবশিষ্ট তিন ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে ছোট ছোট আরো অনেক অভ্যন্তরীণ খাত থেকে। অর্থাৎ বিদেশের কাছে আমেরিকার ঋণ সর্বসাকল্যে ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলার, বাকিটা অর্থাৎ ১০.৫০ ট্রিলিয়ন ডলার আমেরিকানদেরই কাছে। তাই চূড়ান্ত বিবেচনায় এখনো আমেরিকার মালিক আমেরিকানরাই।
লেখক : অধ্যাপক, টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি
এডিটর_জার্নাল অব ডেভেলপিং এরিয়াজ

No comments

Powered by Blogger.