তামিমের না খেলার কারণ-ইনজুরি না অন্য কিছু!

তাহলে কি কোচ স্টুয়ার্ট ল আগের দিন ঘণ্টা ধরে তামিমকে গতকালের ম্যাচ খেলার আত্মবিশ্বাস সঞ্চারণ করার চেষ্টা করছিলেন? তামিম যে টি২০ ম্যাচে খেলছেন না সেটা মিডিয়াতে ফাঁস না করলেও সতীর্থদের কেউ কেউ আগের দিনই আন্দাজ করেছিলেন। 'ডান হাঁটুর ব্যথাটা আজ সকালেই বেড়েছে। এ জন্য খেলতে পারছেন না তামিম।' গতকাল প্রধান নির্বাচক আকরাম খান তামিমের অনুপস্থিতির ব্যাখ্যা এভাবেই দিয়েছেন।


দলের ম্যানেজার জাহিদ রাজ্জাক মাসুমও বলেছেন, ম্যাচের আগে ট্রেনিংয়ের সময়ই তামিম তাকে জানান ব্যথা অনুভব করছেন। 'ম্যাচ শুরুর কিছুক্ষণ আগে ট্রেনিংয়ের সময় তামিম জানান তার হাঁটুতে ব্যথা বেড়েছে। তিনি খেলার মতো অবস্থায় নেই। এরপর দলের ফিজিও তার তত্ত্বাবধান করেছেন। চেষ্টা করা হয়েছিল তামিমকে ম্যাচে খেলানোর, এ কারণেই খেলোয়াড় তালিকা পাঠাতে দেরি হয়েছিল আমাদের।' টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে হাঁটু ব্যথার কথা বলা হলেও ফিজিও বিভব সিং জানিয়েছেন, এদিন তামিম মাঠে নামার আত্মবিশ্বাস পাচ্ছিলেন না। 'ফিজিও বিভব সিং বলেছেন, তিনি তামিমকে খেলতে বারণ করেননি, বরং তামিম নিজেই খেলতে চাননি। তামিমের আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল। তামিম নিজে থেকেই বলছিলেন তিনি খেলার মতো অবস্থায় নেই। এর আগে তামিমের হাঁটুতে এমআরআই করা হয়েছে। সেখানে কোনো ত্রুটি ধরা পড়েনি। এর মাঝে তিনি অনুশীলনও করেছেন, তখন হাঁটুতে চোট পাওয়ার কোনো ঘটনাও ঘটেনি।' ফিজিওর সঙ্গে কথা বলে বিসিবির ডাক্তার দেবাশিষ চৌধুরী জানিয়েছেন, ম্যাচ না খেলার সিদ্ধান্তটা তামিম নিজেই নিয়েছেন। তামিমও স্বীকার করেছেন তা। 'হাঁটুর ব্যথাটা বেড়ে যাওয়ার কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি আমি।'
গতকাল তামিমের আত্মবিশ্বাসের অভাবের কথা উঠলেও আগের দিন থেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন তামিম। ম্যাচের আগে অধিনায়ক মুশফিক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, 'তামিম ফিট, খেলার জন্য সে প্রস্তুত।' শুধু তাই নয়, সোমবার মাঠে কোচের সঙ্গে তামিমের একান্ত আলাপ প্রসঙ্গে অধিনায়ক বলেছিলেন, 'হয়তো কালকের (মঙ্গলবার) ম্যাচ নিয়েই পরিকল্পনা করছেন।' এসবের পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তামিমের হাঁটুর ব্যথা এতটাই বেড়ে গেল যে, দলের হয়ে মাঠেই নামতে পারলেন না! চট্টগ্রাম থেকে হাঁটুর ব্যথা হয়েছে বলে ক্যাম্প ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন তামিম। এমআরআই করানোর পর কোনো সমস্যাই ধরা পড়েনি তার। এরপর ঢাকায় অনুশীলনও করেছেন দলের সঙ্গে। সব কিছু মিলিয়েই তামিমের হঠাৎ করে না খেলার সিদ্ধান্তের মধ্যে অস্বাভাবিকতার গন্ধ পেতে শুরু করেছেন অনেকেই।
কেউ কেউ বলছেন, সোমবার নাকি তামিমের হাঁটুতে অল্পস্বল্প ব্যথা ছিল। তাই নাকি এই ওপেনার ব্যাটিং অনুশীলন না করে করেছেন ক্যাচ প্র্যাকটিস। তবে এসব মানতে নারাজ বোর্ডের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা। ম্যাচের আগমুহূর্তে তার না খেলার সিদ্ধান্তে ভীষণ চটেছেন বোর্ডের কর্তারা। বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বললেন কয়েকজন। এদিকে দলের ম্যানেজার জাহিদ রাজ্জাক মাসুম জানিয়েছেন, আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তামিমকে এ্যাপোলো হাসপাতালে পাঠানো হবে। ওয়ানডে দলে থাকবেন কি-না_ এমন প্রশ্নে ম্যানেজার জানান, এখনই সেটি বলা যাচ্ছে না। তবে তাকে ওয়ানডে দলে রাখার জন্যই আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠাচ্ছি। সে সঙ্গে আশ্বাস দেন, ওয়ানডে সিরিজে দেখা যাবে হার্ডহিটার এই ওপেনারকে।
বিসিবিতেই গুঞ্জন উঠেছে, হাঁটুর ব্যথা ছাড়াও অন্য কোনো ব্যাপারে তামিমের মনোসংযোগ ব্যাহত হচ্ছিল। চট্টগ্রামে সাকিবের সঙ্গে একই হোটেল কামরায় থাকার কথা ছিল তার। সাকিব আপত্তি জানানোর পর তামিম হাঁটুতে ব্যথা নিয়ে ঢাকা ফিরে আসেন। এরপর আর চট্টগ্রামে ফেরা হয়নি তার। তামিমের মতো একজন হার্ডহিটারকে না দেখায় এদিন সমর্থকদের মতো প্রচণ্ডভাবে হতাশ হয়েছেন কর্মকর্তারাও। তামিমের না থাকার প্রভাব ছিল দলের ওপরও। তবে টিম ম্যানেজমেন্টের আশ্বাস, ওয়ানডেতে ঠিকই দেখা যাবে তামিমকে।

No comments

Powered by Blogger.