প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ-সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে

প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও বিকাশ সিংহভাগ মানুষকে যেমন আলোর জগতে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, তেমনি সংখ্যায় নগণ্য হলেও আরেকটি শ্রেণীকে অপকর্মের পঙ্কিলতায় ডুবিয়ে দিচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তির অপব্যবহার করে নানাবিধ সামাজিক অপকর্মে তারা যুক্ত হচ্ছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব সমাজ দেহকে বিদ্ধ করছে। ২৬ নভেম্বর ২০১১, কালের কণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, কিছুসংখ্যক তরুণ-কিশোর কিংবা যুবক কিভাবে প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট অপরাধে জড়িয়ে


পরিবেশ-পরিস্থিতি বিষিয়ে তুলছে। এদের অধিকাংশই শিক্ষিত, মেধাবী এবং প্রযুক্তির প্রায় সব কিছু সম্পর্কে ধারণাসম্পন্ন। এই মেধাবীরা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে একদিকে সমাজের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে, অন্যদিকে প্রযুক্তির অপব্যবহারকারী সমাজের জন্য বিষফোড়াসম কিংবা জ্ঞানপাপী বলা চলে।
ফেসবুক, টুইটার কিংবা অন্য প্রযুক্তিগত মাধ্যমে যোগাযোগের বন্ধন সুদৃঢ় করে বিশ্বে যেখানে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর বিপরীত পরিস্থিতি উদ্বেগজনকভাবে দেখা দিয়েছে। কালের কণ্ঠের ওই প্রতিবেদনে প্রকাশ, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের ঘটনায় ইতিমধ্যে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব আরো ৭০০ কিশোরের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার এস সোহায়েল জানিয়েছেন, তারা অত্যন্ত মেধাবী। তারা কেউ কম্পিউটারের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না নিলেও তাদের এ ক্ষেত্রে রয়েছে ব্যাপক দক্ষতা। তারা যেকোনো ওয়েবসাইটে ঢুকে আধঘণ্টার মধ্যে তা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে পারে এবং ইচ্ছামতো ওই ওয়েবসাইটটি হ্যাকিং করে যে কাউকে ফেলে দিতে পারে বিপদে। এ রকম ঘটনা যেকোনো দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে স্পষ্টই বলা যায়, এ হচ্ছে গুরুতর অপরাধ। এ ধরনের খণ্ড খণ্ড চক্র অনেকের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন পর্যন্ত ধসিয়ে দিচ্ছে অবলীলায়। ইতিপূর্বে এমন অপরাধে যুক্ত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব আইনের আওতায় আনতে পারলেও থেমে নেই এ ধরনের অপকর্ম। একই দিন সহযোগী একটি দৈনিকে 'অবৈধ ভিওআইপির রমরমা ব্যবসা' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তাও প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ এবং এর ফলে রাষ্ট্রের বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। অবৈধ ভিওআইপির রমরমা ব্যবসা চলছে। বিস্ময়কর হলেও সত্য, আন্তর্জাতিক কলের অবৈধ টার্মিনেশন (ভিওআইপি) মাধ্যম হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত কম্পানি টেলিটকের সিম। অন্য বেসরকারি সেলফোন কম্পানিগুলোও পিছিয়ে নেই। ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক কলের রেকর্ড (সিডিআর) মুছে দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ল্যান্ডফোন কম্পানিতে (বিটিসিএল) কোটি কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে।
প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ ঠেকাতে সরকারকে কঠোর দৃষ্টি দিতে হবে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিপুল ক্ষতি রোধকল্পে যেমন, তেমনি অন্যসব ক্ষেত্রে নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারকে কালক্ষেপণ না করে পরিকল্পিতভাবে দূরদর্শী উদ্যোগ নিতে হবে। প্রযুক্তির বিকাশ ও উৎকর্ষ আমাদের আশীর্বাদ হয়ে থাকুক, অভিশাপ হিসেবে তা যেন কেউ দাঁড় করাতে না পারে এটি নিশ্চিত করতে হবে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সুযোগে যারা অন্যায়, অপরাধের রাস্তা প্রশস্ত করে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে মত্ত, তাদের প্রতি কোনো রকম অনুকম্পা প্রদর্শনের অবকাশ নেই।

No comments

Powered by Blogger.