পবিত্র কোরআনের আলো-মুসা (আ.) কর্তৃক তুর পাহাড়ে ইতিকাফ যাপন ও তাওরাত লাভ প্রসঙ্গ

৩৯. ইন্না হা-উলা-য়ি মুতাব্বারুম্ মা হুম ফীহি ওয়া বা-তি্বলুম্ মা কা-নূ ইয়া'মালূন।১৪০. ক্বা-লা আগাইরাল্লা-হি আবগীকুম ইলা-হান ওয়া হুয়া ফাদ্দ্বালাকুম আ'লাল আ'-লামীন।১৪১. ওয়া ইয আনজাইনা-কুম্ মিন আ-লি ফিরআ'ওনা ইয়াছূমূনাকুম ছূআল আ'যা-বি ইউক্বাত্তিলূনা আবনা-আকুম ওয়া ইয়াছ্তাহ্ইঊনা নিছা-আকুম; ওয়া ফী যা-লিকুম বালা-উম্ মির্ রাবি্বকুম আযীম।


১৪২. ওয়া ওয়া-আ'দনা মূছা ছালা-ছীনা লাইলাতান ওয়া আত্মাম্না-হা বিআ'শ্রিন ফাতাম্মা মীক্বা-তু রাবি্বহি আরবাঈ'না লাইলাতান; ওয়া ক্বা-লা মূছা লিআখীহি হা-রূনাখ্ লুফ্নী ফী ক্বাওমী ওয়া আস্লিহ্ ওয়ালা তাত্তাবি' ছাবীলাল মুফছিদীন।
[সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ১৩৯-১৪২]
অনুবাদ : ১৩৯. এই (মূর্তিপূজারি) লোকেরা যা কিছু নিয়ে পড়ে আছে, তা বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং এরা যা করছে সবই ভ্রান্ত।
১৪০. মুসা তাদের আরো বললেন, আমি কি তোমাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মাবুদের অনুসন্ধান করব? অথচ তিনিই তোমাদের সমগ্র সৃষ্টিজগতের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। ১৪১. (সেসব দিনের কথা ভেবে দেখো) যখন আমি তোমাদের ফেরাউনের লোকদের কাছ থেকে মুক্ত করেছিলাম। তারা তোমাদের মর্মান্তিক শাস্তি দিত। তারা তোমাদের পুত্রসন্তানদের হত্যা করত আর কন্যাসন্তানদের বাঁচতে দিত। এর মধ্যে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে ছিল এক মহাপরীক্ষা।
১৪১. আমি মুসার জন্য ৩০ রাতের মেয়াদ স্থির করেছিলাম, যেন এ সময়ে তিনি তুর পাহাড়ে ইতিকাফরত থাকেন। এরপর আমি আরো ১০ রাত সময় বাড়িয়ে দিয়ে তা পূর্ণ করি। এভাবেই তাঁর প্রভুর নির্ধারিত সময় ৪০ দিন পূর্ণ করা হয়। (ইতিকাফে যাওয়ার আগে) মুসা তাঁর ভাই হারুনকে বললেন : আমার অনুপস্থিতিতে তুমি আমার জাতির মধ্যে প্রতিনিধিত্ব করবে। তুমি তাদের ভুলত্রুটি সংশোধন করে দেবে, আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের প্রশ্রয় দেবে না।
ব্যাখ্যা : ১২৯ নম্বর আয়াতে আগের আয়াতের প্রসঙ্গের বিষয়েই মন্তব্য করা হয়েছে। বনিইসরাইল সম্প্রদায় মুসা (আ.)-এর নেতৃত্বে সদলবলে মিসর থেকে বের হয়ে গিয়ে যখন নিজেদের আপন ভূমির সন্ধান করছিল, তখন তারা যে অঞ্চলের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল সেখানে এক জাতির দেখা পেল, যারা ছিল মূর্তিপূজারি। তারা মাটি দিয়ে দেবতার মূর্তি বানিয়ে এর পূজা করে। এটা দেখে মুসা (আ.-এর সম্প্রদায়ের অনেকেও আবদার করতে লাগল যে তারা এ রকম মূর্তিপূজা করতে চায়। তাদের জন্যও যেন মুসা (আ.) একজন দেবতার সন্ধান করে দেন। আগের আয়াতের বর্ণনায় এসেছে, মুসা (আ.) তাদের এ জন্য ধিক্কার দিয়েছেন। বর্তমান আয়াতে সেই মূর্তিপূজারি জাতির অবস্থান ও পরিণতি সম্পর্কে আরো স্পষ্ট বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা আসলে ভ্রান্তপথে ও ক্ষয়িষ্ণু অবস্থানে আছে। পরবর্তী ১৪০ নম্বর আয়াতেও বনিইসরাইল জাতিকে একত্ববাদের ওপর দৃঢ়চিত্ত হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। এই আয়াতে শ্রেষ্ঠত্বদানের যে কথাটি বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে বনিইসরাইলকে মানবজাতির অন্যান্য গোষ্ঠীর ওপর শ্রেষ্ঠত্বদানের কথা বলা হয়েছে, নাকি মানবজাতিকে সৃষ্টিজগতের অন্য সব কিছুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করার কথা বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে তাফসিরকারদের মধ্যে মতভিন্নতা দেখা যায়। বনিইসরাইল যে সভ্যতার অনেকটা প্রাথমিক যুগ থেকে জ্ঞানে-গুণে উৎকৃষ্ট ও আল্লাহর প্রিয় সম্প্রদায় ছিল, এটা কোরআন মজিদের নানা বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয়। তবে সেই সঙ্গে তারা নানাভাবে বিভ্রান্ত ও বিরক্তিকর জাতি হিসেবেও পরিচিত হয়েছে। ১৪১ নম্বর আয়াতে ফেরাউন কর্তৃক বনিইসরাইলের ওপর নির্মম অত্যাচারের কাহিনী স্মরণ করানো হয়েছে। এরপর সেখান থেকে মুক্ত হয়ে হেঁটে লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে তারা যখন তাদের আদি বসতভূমির কাছাকাছি এসে উপনীত হয়, তখনকার কিছু ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে ১৪২ থেকে পরবর্তী কয়েকটি আয়াতে। বনিইসরাইল তাদের হঠকারিতা ও আল্লাহর নাফরমানির কারণে তাই মরুভূমিতে ৪০ বছর পর্যন্ত উদ্বাস্তু জীবন কাটায়। এ সময় তারা মুসা (আ.)-এর কাছে আবদার জানায়, আপনি নিজ ওয়াদা অনুযায়ী আমাদের কোনো আসমানি কিতাব এনে দিন। যে কিতাবে আমাদের জীবনযাপনের নীতিমালা লিপিবদ্ধ থাকবে। এ প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ.)-কে তুর পাহাড়ে এসে ৩০ দিন ইতিকাফ করতে বলেন। পরে কোনো কারণে এ মেয়াদ বাড়িয়ে ৪০ দিন করে দেওয়া হয়। এভাবে মুসা (আ.) আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য লাভ করেন এবং তাওরাত গ্রন্থও লাভ করেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.