কাদেরের ওপর নির্যাতন-মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হোক

থায় আছে, 'বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা'। কিন্তু পুলিশে একবার ছুঁতে পারলে তার পরিণাম কী হবে, তা নিশ্চিত করে কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। একটি সভ্য দেশের পুলিশ কতটা নৃশংস ও নির্দয় হতে পারে, তার উদাহরণ বাংলাদেশের পুলিশের কাছে যতটা আছে, বিশ্বে বোধ হয় আর কোথাও তা নেই। বিশ্বজুড়ে আজ উচ্চারিত হয় মানবাধিকারের কথা। এই মানবাধিকার সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত বোধ হয় পুলিশের কাছে। কাউকে ধরে অন্যায়ভাবে


'ফাঁসিয়ে' দিতে পুলিশের চেয়ে দড় আর কোনো সংস্থাকে বোধ হয় পাওয়া যাবে না। অবশ্য দুই শতাব্দীরও বেশি পুরনো এই বাহিনীর সব সদস্যই যে খারাপ_এমন কথাও তো হলফ করে বলা যাবে না। সৎ ও দক্ষ মানুষ না থাকলে একটি বাহিনী সুদীর্ঘকাল কাজ করছে কিভাবে? পাশাপাশি এটাও ঠিক, কিছুসংখ্যক সদস্যের কারণে জনমনে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে। পুলিশ অনেক ইতিবাচক কাজ করলেও কিছুসংখ্যক সদস্যের কারণে পুলিশের ইতিবাচক দিকগুলো মানুষের অজানা থেকে যাচ্ছে। নানা কারণে মানুষকে পুলিশের কাছে যেতে হয়। বিপদে বন্ধু ভেবে পুলিশের আশ্রয় নিতে হয়। কিন্তু 'জনগণের বন্ধু' এই পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য যখন নাগরিকদের মানবাধিকার উপেক্ষা করেন, তখন পুলিশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি আর থাকে না। যেসব ঘটনা পুলিশের ভাবমূর্তিকে ভূলুণ্ঠিত করেছে, তার একটি হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবদুল কাদেরের ওপর অমানবিক নির্যাতন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আবদুল কাদেরকে গত ১৫ জুলাই গভীর রাতে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে খিলগাঁও থানা পুলিশ আটক করে। আটকের পর তাঁকে থানায় মারধর করা হয়। থানা হাজতে পুলিশের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন কাদের। পরদিন তাঁকে ডাকাতির প্রস্তুতি এবং অস্ত্র আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে গত ২৮ জুলাই হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পাশাপাশি গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের জন্য আইনসচিবকে নির্দেশ দেন। আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তদন্ত করে। গত সোমবার আদালতের কাছে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের কথিত ঘটনার সঙ্গে আবদুল কাদের কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিলেন না। কাদেরের বক্তব্য এবং তাঁর পরিচয় সম্পর্কে কোনো ধরনের অনুসন্ধান না করেই সম্পূর্ণ মনগড়াভাবে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ওই কার্যক্রমে পুলিশের দায়িত্বের প্রতি চরম অবহেলা, স্বেচ্ছাচারিতা এবং অন্যায়ভাবে একজনকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে। তদন্ত কমিটি বলেছে, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে মিথ্যা বক্তব্য সাজিয়ে এজাহার প্রস্তুত করার দায়দায়িত্ব আলম বাদশা এবং হেলালউদ্দিন এড়াতে পারবেন না। আইন মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসআই আলম বাদশা এবং ওসি হেলালউদ্দিন জেনেশুনে কাদেরের বিরুদ্ধে অসত্য গল্প সাজিয়ে দুটি ফৌজদারি মামলা করেছেন। পরে ওসি 'নিতান্তই নিন্দনীয়ভাবে' কাদেরকে থানায় নির্যাতন করেছেন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখমও করেছেন। জেনেশুনে কাদেরকে সাজানো মামলার এজাহারভুক্ত করে হেলালউদ্দিন এবং আলম বাদশা গুরুতর অসদাচরণ করেছেন। তাঁদের সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা এবং আপিল বিধিমালা-১৯৮৫ অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা এবং বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরের সঙ্গে পুলিশের এই আচরণ তখন জনমনে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠায় পুলিশ বিভাগ আইন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নেবে বলে আমরা আশা করি।

No comments

Powered by Blogger.