নভিচক দুঃস্বপ্ন: পুতিনের নির্দেশে সাবেক রুশ গুপ্তচর ও মেয়েকে টার্গেট

বৃটেনের রাস্তায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের টার্গেটে রাসায়নিক হামলার বিভীষিকা প্রথমবারের মতো প্রকাশ করলেন সাবেক এক রুশ গুপ্তচর ও তার মেয়ে। ২০১৮ সালের ৪ঠা মার্চ সালিসবুরিতে রুশ এজেন্টদের বিষপ্রয়োগে প্রায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিলেন এমআই৬-কে তথ্য সরবরাহকারী দ্বৈত এজেন্ট সের্গেই স্ক্রিপাল এবং তার ৩৩ বছর বয়সী মেয়ে ইউলিয়া স্ক্রিপাল। এ খবর দিয়ে অনলাইন ডেইলি মেইল বলছে, স্ক্রিপালদের বাড়ির দরজার হাতলে মারাত্মক নভিচক নার্ভ এজেন্ট ছড়ানো হয়েছিল। বিষক্রিয়ার পর তারা তিন সপ্তাহ কোমায় ছিলেন। দীর্ঘ সময় কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাদের।

এরপর থেকে তারা গোপনে বসবাস করছেন। এখন ঘটনার ওপর হওয়া সরকারি তদন্তে দেয়া তাদের লিখিত বিবৃতিতে সেই ভয়াল দিনের সবকিছু উঠে এসেছে। ইউলিয়া জানান, রাশিয়া থেকে আগের দিন বৃটেনে পৌঁছে পরদিন বাবা-মেয়ে লাঞ্চ খাচ্ছিলেন। হঠাৎ দু’জনের চোখ কাঁপতে শুরু করে, যা তারা প্রথমে ‘মজার’ বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু এর পরপরই শ্বাসকষ্ট, প্রবল বিভ্রম, দৃষ্টিবিভ্রাট এবং বমি শুরু হয়। রেস্তোরাঁ ছাড়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে। ইউলিয়া বলেন, রাস্তার সবকিছু দুলছিল খুবই খারাপভাবে। আমাকে বাবার হাত ধরে থাকতে হয়েছিল। কিছুদূর গিয়ে সাইন্সবারির কার পার্কের দিকে হাঁটতে হাঁটতে তারা আর এগোতে না পেরে একটি বেঞ্চে বসে পড়েন।

ইউলিয়া বলেন, বসে সঙ্গে সঙ্গে এক অদ্ভুত, ভয়ানক অনুভূতি হলো। চারদিকে সব ঝাঁপসা, রঙ বদলে গোলাপি, লাল, নীল হয়ে যাচ্ছে, যেন এলএসডি বা অ্যামফেটামিন নিয়েছি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পথচারীরা তাদের সাহায্য না করলে নিজের বমিতেই শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল বলে তিনি মনে করেন। সিসিটিভিতে দেখা যায়, তিনি বাবার কাঁধে হেলে আছেন এবং শুধু বাম হাত দিয়ে গোল গোল ঘূর্ণি আঁকার মতো নড়াচড়া করছেন। সের্গেই স্ক্রিপাল তার নথিতে বলেন, আমি বিভ্রমে আরবি পুরুষ-নারী দেখছিলাম। তাদের একজনকে ঘুষিও মারি। জানতাম এগুলো বিভ্রম, কারণ সালিসবুরিতে তো আরবি মানুষ খুব বেশি থাকে না।
তিন সপ্তাহ কোমায় থাকার পর জেগে উঠে তিনি ভাবেন কেবল একদিন গেছে। কিন্তু আসলে কেটে গেছে ২১ দিন। ঘটনার পর কাউন্টার টেরর পুলিশ ও ১৮০ জন রাসায়নিক যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ যুক্ত হয়ে বিশাল তদন্ত চালায়। তদন্তটির নাম ডন স্টার্জেস ইনকোয়ারি। ডন স্টার্জেস ৪৪ বছর বয়সী এক নারী।  তিনি পরিত্যক্ত সুগন্ধির বোতলে থাকা নভিচক ভুল করে শরীরে স্প্রে করে মারা যান। পরীক্ষায় প্রমাণ মেলে, এটি সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৮০-এর দশকে তৈরি করা সামরিক পর্যায়ের নার্ভ এজেন্ট।

বৃটিশ পুলিশ বিশ্বাস করে, দুই রুশ গুপ্তচর ভুয়া নাম আলেকজান্ডার পেত্রভ ও রুসলান বশিরভ ঘটনার আগের দিন বৃটেনে যান এবং স্ক্রিপালের বাড়িতে বিষ প্রয়োগ করেন। পরে বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের প্রকৃত পরিচয় বের করে। তাতে দেখা যায় তারা আসলে ইভান এরমাকভ ও আলেক্সেই লুগোভ। দাবি করেন, তারা নাকি সালিসবুরির ‘খ্যাতিমান ১২৩ মিটার উঁচু ক্যাথেড্রালের চূড়া দেখতে’ গিয়েছিলেন। তা নিয়ে ব্যাপক উপহাস হয়। বৃটিশ সরকার আরও অভিযোগ করে, ২০১৩ সাল থেকে তারা ইউলিয়ার ইমেইল হ্যাক করছিল এক্স-এজেন্ট ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে। এছাড়া ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে তারা এফবিআইয়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় রয়েছে। আগামী মাসে এই তদন্তের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে।

https://mzamin.com/uploads/news/main/189759_Abul-7.webp

No comments

Powered by Blogger.