ড. ইউনূস বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার সক্ষমতা রাখেন : সৌদি রাষ্ট্রদূত

ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আল দুহাইলান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেছেন, তিনি দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রাখেন। রাষ্ট্রদূত মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় ড. ইউনূসের প্রশংসা করে তিনি একথা বলেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সৌদি আরবকে  ‘বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন।  তিনি গত বছর ওয়ার্ল্ড ফুটবল সামিটে সৌদি আরব সফরের কথা স্মরণ করেন যেখানে তিনি সৌদি মহিলা ফুটবল দলের উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং বিশ্ব পরিবর্তনের ক্ষেত্রে খেলাধুলার অসাধারণ ক্ষমতার বিষয়ে আলোচনা করেন।

রাষ্ট্রদূত জানান, বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ৩২ লাখ বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছেন যারা তার দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তিনি জানান, সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকরা বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বৈধ  চ্যানেলে পাঠান এবং আরও ৫ বিলিয়ন ডলার অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠান। রাষ্ট্রদূত বলেন, অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের অর্থ বৈধ পথে পাঠানো সম্ভব হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, তারা কঠোর পরিশ্রমী এবং অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ। ১৯৭০ সাল থেকে সৌদি আরবে বসবাসরত ৬৯ হাজার অনিবন্ধিত বাংলাদেশীর পাসপোর্ট নবায়নের বিষয়টি তিনি উত্থাপন করেন।

রাষ্ট্রদূত দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, সৌদি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে লজিস্টিকস, পরিষেবা খাত এবং আরএসজিটি ইন্টারন্যাশনাল ও আকওয়া পাওয়ারের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তিনি আরো উল্লেখ করেন, হজ ও উমরাহ পালনের সুবিধার্থে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য মক্কা রোড ইনিশিয়েটিভ চালু করা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন যে, গত বছর প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশী উমরাহ পালন করেছেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য সৌদি নেতৃত্বের প্রশংসা করে ড. ইউনূস সৌদি আরবের চলমান সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহবান জানান।

আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান ড. ইউনূসের: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমদ মারুফ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তান সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানান।   

আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সার্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটি মডেল হতে পারে উল্লেখ করে  ড. ইউনূস বলেন, আমাদের পারস্পরিক সুবিধার জন্য একসাথে কাজ করতে হবে। বৈঠকে পাকিস্তানের হাইকমিশনার দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করার পাশাপাশি বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে সহযোগিতা বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। হাইকমিশনার জানান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং দেশটির জনগণ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পাকিস্তান বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আহমদ মারুফ পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ এবং উভয় দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর আহ্বান জানান।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাশিয়া বাংলাদেশের পাশে থাকবে : রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি বলেছেন, আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাশিয়া বাংলাদেশের পাশে থাকবে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্ন্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে তিনি রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশে নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি অনুসন্ধান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সহায়তা বাড়ানোসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষযাদি আলোচনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাইন অপসারণের কথা স্মরণ করেন। তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্যান্য পণ্যও আমদানি বাড়ানোর আহ্বান জানান। বর্তমানে রাশিয়ায় বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৯০ শতাংশ তৈরি পোশাক। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। বাংলাদেশের খাদ্যশস্য এবং সারের বড় একটি অংশ রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার। গত বছর রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন টনেরও বেশি গম আমদানি করেছে এবং চলতি বছর আমদানির পরিমাণ ইতোমধ্যে ২ মিলিয়ন টন অতিক্রম করেছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত জানান, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম ভোলা দ্বীপে এবং দেশের অভ্যন্তরে আরো পাঁচটি গ্যাস কূপ অনুসন্ধান করতে আগ্রহী।

তিনি আরো জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মাণ কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং এটি আগামী বছর চালু হতে পারে। তিনি বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশে এলএনজি রপ্তানিতে আগ্রহী। প্রধান উপদেষ্টা অর্থনৈতিক ও শিক্ষা সহযোগিতা এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।

No comments

Powered by Blogger.