৫ই আগস্ট দুপুর ২টা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর বনানী থেকে বিজয় মিছিলের সঙ্গে গণভবনে যান মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন। বিকাল সাড়ে ৫টায় বনানী হয়ে উত্তরা থানা এলাকায় জসিমউদ্দিন পৌঁছলে হঠাৎ একটি গুলি এসে মামুনের ডান পাশের গাল দিয়ে ঢুকে বাম গাল দিয়ে বেরিয়ে যায়। তিন-চার টুকরো হয়ে যায় তার জিহ্বা। এক তৃতীয়াংশ ইতিমধ্যে কেটে বাদ দেয়া হয়েছে। বাকি অংশে সংক্রমণ হওয়ায় কালো হয়ে যাওয়া জিহ্বার সামনের পুরো অংশ কেটে বাদ দিতে হতে পারে বলে জানিয়েছে চিকিৎসক। গুলিতে মামুনের নিচের চোয়াল এবং দাঁতের মাড়িসহ পুরোটা ভেঙে গেছে। নিচের চোয়ালে কোনো দাঁত নেই। রক্তে ইতিমধ্যে ইনফেকশন ধরা পড়েছে। এতে করে মুখসহ শরীরের অন্যান্য অংশে পচন ধরতে পারে বলে দাবি মামুনের পরিবার এবং চিকিৎসকদের। এদিন একদল অস্ত্রধারী লোক এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে বিমানবন্দর এলাকায় প্রবেশ করে বলে দাবি করেন মামুনের পরিবার। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের উইমেন্স হাসপাতালে ভর্তি করে। এ বিষয়ে মামুনের পরিবারের সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের। তার স্ত্রী বলেন, মামুনের জিহ্বায় সেলাই দেয়া হলে দুই চোয়ালের মাংস পচে গিয়ে সেলাই খুলে গেছে। এখন পর্যন্ত খোলা অবস্থায় আছে। রোববার হঠাৎ করে তার ব্লাডে ইনফেকশন ধরা পড়ে। বর্তমানে তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। এর আগে দুই দিন ভেন্টিলেশন এবং ৭ দিন আইসিইউতে ছিলেন। পরে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হলে হঠাৎ করে রোববার অজ্ঞান হয়ে যায়। শরীরে খিঁচুনি শুরু হয়। ব্লাড সার্কুলেশন ও পালস শূন্যতে চলে আসে। বর্তমানে মামুনের জীবন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইতিমধ্যে মামুনের চিকিৎসায় প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। মামুনের গ্রামের বাড়ি মাগুরা। আহত মামুন মাগুরার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত ছিলেন। বনানীতে একটি মেসে ভাড়া থাকতেন। গুলি লাগার পর থেকে মামুন আর কথা বলতে পারেনি। পরবর্তীতে তিনি কথা বলতে পারবেন কি না সেটা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। গত ৬ মাস আগে মামুন বিয়ে করেন। গ্রামের বাড়ি মাগুরাতে দুই ভাই-বোন মা-বাবা এবং স্ত্রী থাকেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মামুন। ছোট ভাই অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাবা কৃষক। আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে চলছে মামুনের চিকিৎসা। এ বিষয়ে মামলা করেছেন কিনা জানতে চাইলে মামুনের স্ত্রী বলেন, আমরা কার বিরুদ্ধে মামলা করবো। এখন পর্যন্ত মামুনের পরিবার তার চিকিৎসার জন্য কোনো আর্থিক সাহায্য কিংবা অনুদান পাননি। মামুনের স্ত্রী বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকে মাঠে থাকলেও মামুনের খোঁজ নেয়নি কেউ। আমরা ঢাকা শহরে কাউকে চিনি না। কার মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কাছে পৌঁছবো সেটা বুঝে উঠতে পারছি না। আমাদের একটিই চাওয়া মামুন আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠুক। তার পরিবার এবং দেশের জন্য কাজ করার অনেক স্বপ্ন ছিল। এভাবে তাকে আমরা কতোদিন চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারবো জানি না।
No comments