বেনজির ভুট্টো হত্যার দায় স্বীকার তালেবানের

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে দেশটির তেহরিক-ই-তালেবান জঙ্গিগোষ্ঠী। ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডিতে এক নির্বাচনী জনসভায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় বেনজির ভুট্টোকে। তার ঠিক ১০ বছর পর এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করল তালেবান জঙ্গি সংগঠন। এক শীর্ষ তালেবান জঙ্গি নেতার লেখা বইয়ে এ ঘটনার দায় মেনে নেয়া হয়েছে। খবর এনডিটিভি ও ডেইলি টাইমসের। ‘ইনকিলাব মেহসুদ সাউথ ওয়াজিরিস্তান : ফ্রম ব্রিটিশ রাজ টু আমেরিকান ইমপেরিয়ালিজম’ নামের বইটি রোববার প্রকাশ করেন তালেবানের ওই জঙ্গি নেতা। বইটির লেখক তালেবানি জঙ্গি নেতা আবু মনসুর আসিম মুফতি। উর্দু ভাষায় লেখা ৫৮৮ পৃষ্ঠার এ বইটি গত বছরের ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত হয়। আবু মনসুর এতে লিখেছেন, তেহরিক-ই-তালেবান বেনজির ভুট্টোকে হত্যার জন্য দায়ী। এর আগে বেনজির হত্যাকাণ্ডের দায়ভার কেউ স্বীকার করেনি। আবু মনসুর তার বইয়ে লিখেছেন, বেনজির ভুট্টোকে হত্যার জন্য বিলাল ওরফে সাইদ এবং ইকরামুল্লাহ নামে দুই জঙ্গিকে পাঠানো হয়েছিল। ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বরই বেনজিরকে হত্যার মিশন ঠিক করে দেয়া হয়েছিল তাদের। বিলালই প্রথম বেনজিরকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। প্রথম গুলিটি বেনজিরের গলায় লেগেছিল। তারপরে বিলাল নিজের জ্যাকেটে রাখা ডিটোনেটরে বিস্ফোরণ ঘটায়। পরক্ষণই বেনজিরসহ তার ২৪ জন সমর্থক নিহত হন। বইয়ে তিনি আরও লিখেছেন, ইকরামুল্লাহ কোনোক্রমে সেখান থেকে বেঁচে ফিরেছিল। সে এখনও বেঁচে রয়েছে। পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের মাকেন শহরের বাসিন্দা ইকরামুল্লাহ।
বেনজির হত্যাকাণ্ডের জন্য তালেবান জঙ্গিদের দায়ী করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ। এমনকি বেনজির হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুই তালেবান সদস্যের কথোপকথনের অডিও প্রকাশ করে পারভেজ সরকার। কিন্তু সে সময় পারভেজ মোশাররফের ওই অভিযোগ অস্বীকার করে তালেবান গোষ্ঠী। উপর্যুপরি মোশাররফের ওপরই এ হত্যাকাণ্ডের দায় চাপানো হয়। আর এ হত্যা মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী আদালতে মোশাররফকে অভিযুক্ত করা হয়। ফলে তিনি দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর বেনজিরের দশম মৃত্যুবার্ষিকীতেও মোশাররফের ওপর এ হত্যাকাণ্ডের দোষ চাপান বেনজিরের পুত্র ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সহকারী চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো। বইটিতে বলা হয়, বেনজির ভুট্টোকে হত্যা চেষ্টায় ২০০৭ সালের অক্টোবরে চালানো হামলার জন্যও তালেবান গোষ্ঠী দায়ী। ওই সময় করাচিতে এক সমাবেশে বোমা বিস্ফোরণে ১৪০ জন নিহত হন। ভাগ্যক্রমে সেবার বেঁচে গিয়েছিলেন বেনজির ভুট্টো। বইটির লেখক আবু মনসুর বলেন, বেনজিরের ওপর করাচিতে হামলার পরও যথাযথ নিরাপত্তা প্রক্রিয়া গ্রহণ করেনি সরকার। এ জন্যই রাওয়ালপিণ্ডিতে হামলা চালানো আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। পিপিপির মুখপাত্র ফারহাতুল্লাহ বাবর বলেন, তালেবানদের এ দাবি দলটির সন্দেহকে জোরদার করেছে যে জঙ্গিরা ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য’ ব্যবহৃত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতে চাই এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের মূল হোতা কে ছিলেন। মাস্টারমাইন্ড কারা ছিল তাদের নাম প্রকাশ করা উচিত। তারাই জঙ্গিদের এ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করেছে।’

No comments

Powered by Blogger.