রাজধানীতে টিভি উপস্থাপিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ

রাজধানীতে বাসায় ডেকে নিয়ে এক টেলিভিশন উপস্থাপিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত দুই আগস্ট যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উপস্থাপিকা নিজে বাদী হয়ে গতকাল বুধবার রাজধানীর কদমতলী থানায় ধর্ষণ মামলা করেছন। তবে অভিযুক্ত যুবককে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার তরুণী টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার পাশাপাশি অভিনয়ও করেন। এছাড়া তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। মামলার বিবরণে তিনি জানান, ঘটনার দিন তাকে রাজধানীর শনিরআখড়া (যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের শেষ মাথা) এলাকার একটি বাসায় ডেকে নেন পূর্ব পরিচিত এক যুবক। পরে সেখানে তাকে ধর্ষণ করে সেই দৃশ্য ভিডিও করে রাখা হয় বলে অভিযোগ করেছেন ওই তরুণী। কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, ধর্ষণের অভিযোগে মেয়েটি নিজেই বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলা নং ৩৪। আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এর আগে রাজধানীর বনানীতে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় মামলা করেন এক ছাত্রী। মামলার আসামিরা হলেন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী এবং তাঁর বান্ধবী ও বন্ধু শাহরিয়ারকে আটক রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাদী ও তাঁর বান্ধবীকে জোর করে ঘরে নিয়ে যান আসামিরা। বাদীকে সাফাত আহমেদ একাধিকবার এবং বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করেন। আসামি সাদমান সাকিফকে দুই বছর ধরে চেনেন মামলার বাদী। তাঁর মাধ্যমেই ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে দুই ছাত্রীর পরিচয় হয়। এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ঘটনার দিন সাফাতের জন্মদিনে দুই ছাত্রী যান। সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী তাঁদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডের দ্য রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যান। হোটেলে যাওয়ার আগে বাদী ও তাঁর বান্ধবী জানতেন না সেখানে পার্টি হবে। তাঁদের বলা হয়েছিল, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবে। অনুষ্ঠান হবে হোটেলের ছাদে। সেখানে যাওয়ার পর তাঁরা ভদ্র কোনো লোককে দেখেননি। সেখানে আরো দুই তরুণী ছিলেন। বাদী ও বান্ধবী দেখেন সাফাত ও নাঈম ওই দুই তরুণীকে ছাদ থেকে নিচে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই সময় বাদীর বন্ধু ও আরেক বান্ধবী ছাদে আসেন। পরিবেশ ভালো না লাগায় তাঁরা চলে যেতে চান। এই সময় আসামিরা তাঁদের গাড়ির চাবি শাহরিয়ারের কাছ থেকে নিয়ে নেন। তাঁকে খুব মারধর করেন। ধর্ষণ করার সময় সাফাত গাড়িচালককে ভিডিওচিত্র ধারণ করতে বলেন। বাদীকে নাঈম আশরাফ মারধর করেন এবং তিনি প্রতিবাদ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপর বাদী ও বান্ধবীর বাসায় দেহরক্ষী পাঠানো হয় তথ্য সংগ্রহের জন্য। তাঁরা এতে ভয় পেয়ে যান। লোকলজ্জার ভয় এবং মানসিক অসুস্থতা তাঁরা কাটিয়ে উঠে পরে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলার সিদ্ধান্ত নেন। এতে মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়। এর আগে ধর্ষণের আলামত হিসেবে এক ছাত্রীর সালোয়ার-কামিজ জব্দ করা হয়। তাতে কোনো ধরনের পুরুষের বীর্য আছে কি না, তা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেন ওই সালোয়ার-কামিজের রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য অনুমতি দেন। এর আগে গত ৭ মে দুই ছাত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হয়। ওই সময় তাঁদের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন কবির সোহেল, মমতাজ আরা, নিলুফার ইয়াসমিন ও কবিতা সাহা। ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, ঘটনার এক মাস পর দুই ছাত্রী এখানে পরীক্ষা করাতে এসেছেন। এসব ঘটনায় যত দ্রুত পরীক্ষায় আসা যায়, ততই ভালো হয়। অন্যথায় শরীর থেকে আলামত নষ্ট হতে থাকে। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান বলেন, ‘আমরা তারপর বেশ কয়েকটি পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। এখনো সেগুলোর রিপোর্ট পাইনি। রিপোর্ট এলে পাঁচ সদস্যের বোর্ড বসে একটা ফাইন্ডিং রিপোর্ট দেওয়া হবে। এছাড়া গত ৪ জুলাই রাতে জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে বনানীর বাসায় ইভান নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেন এক তরুণী। পরদিন ৫ জুলাই ধর্ষণের অভিযোগ এনে বনানী থানায় বাহাউদ্দিন ইভানকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেন তিনি। ৬ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জ থেকে ইভানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরদিন ৭ জুলাই ইভানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ১৩ জুলাই ইভান ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। বর্তমানে মামলার তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন। মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ১১ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইভানের সঙ্গে তার (তরুণীর) বন্ধুত্ব হয়। এর সূত্র ধরে তারা দেখা-সাক্ষাৎ ও ঘোরাঘুরি করতেন। চার মাস আগে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ঘটনার দিন রাত ৯টায় ইভান ফোন করে ওই তরুণীকে জন্মদিনের কথা বলে তার বাসায় যেতে বলেন এবং তার মায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন বলে জানান। ওই তরুণী বাসায় গিয়ে কাউকে দেখেননি।  সেদিন তাকে বাসায় ফিরে আসতে দেয়নি ইভান। আর রাতে খাবার খাওয়ায় এবং নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ায়। তাকে (ইভান) নিষেধ করলে সে একদিন খেলে কিছু হবে না মর্মে জানায়। এরপর রাত দেড়টায় ইভান তাকে ধর্ষণ করে। পরে চিৎকার করতে থাকলে সে রাত সাড়ে ৩টায় আমার ব্যাগ রেখে বাসা থেকে বের করে দেয়। তরুণী আরও বলেন, আসামি (ইভান) আমাকে এর আগেও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে।

No comments

Powered by Blogger.