বিয়েতে যাবার প্রস্তুতি

কখনও হিমেল হাওয়া কখনও ফাল্গুনী হাওয়া, বোঝা যাচ্ছে না একি শীতের বিদায়বার্তা নাকি বসন্তের আগমনী বার্তা। ঠিক এভাবেই ভাবনার হাওয়ার দুলছে ফারিয়ার মন।
কেননা দু’দিন পরই বড় চাচাতো বোনের হলুদ সন্ধ্যা ও বিয়ের পার্টি। কোন পোশাকটিতে সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে এবং শীত মানবে বুঝতেই পারছে না। এই লুকোচুরি শীত বসন্তের মাঝামাঝি। ঠিক সময়ে অনেকেই দোটানায় পড়েন পার্টি পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে।
ঋতুখেলার বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশে শীতকালকে ফ্যাশনের ঋতু বলেও আখ্যায়িত করা হয় কখনও কখনও। যে যাই বলুক না কেন, এই শীতেই থাকে অধিকাংশ বিয়ের আয়োজন। আর এই বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবার প্রস্তুতি নিজেকে সাজানোর পরিকল্পনা সবকিছুই যেন এই শীতে ঋতুর সঙ্গে। কেননা শীতের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তিতও হয় ফ্যাশন। পোশাক এবং সাজ।
শীতের যে কোন অনুষ্ঠানে যাবার আগে মেয়েদের একটু বিশেষভাবেই যতœশীল হতে হয় সাজ নিয়ে। কেননা শীতের এই রুক্ষ্মতায় অনেকে ত্বকের সহনশীল অবস্থা ধরে রাখতে পারে না। তাই মেয়েদের লক্ষণীয় হতেই হয়। তাদের ত্বক পরিবর্তত সাজ নিয়ে। এই শীতে মৌসুমের ফল কমলা খুবই সহায়ক ত্বকের জন্য। যে কেউ কমলার খোসা বেটে মুখে লাগাতে পারেন। এতে রুক্ষ্ম ভাব থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। চিরাচরিত বাঙালী ঐতিহ্যের দৈনন্দিন অনুষঙ্গ হলুদ লাল গামছার চেক শাড়ির সঙ্গে লাল সিøভলেস ব্লাউজ পরে যাওয়া যাবে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে। তবে মাথায় রাখতে হবে সিøভলেস ব্লাউজ তখনই যখন কিনা বারান্দা দিয়ে রোদ উঁকি জানান দিতে চাইবে শীত মনে হয় কমে গেছে। গামছার শাড়ির সঙ্গে চুল টেনে পেছনে একটা খোঁপা করা যেতে পারে। তবে দু’চোখে অব্যশই থাকা চাই মোটা করে লেপা কালো কাজল। খুব মনে চাইলে একপাশে গুঁজে দিতে পারেন ১টা হলুদ শিড় দোলানো পাপড়ির লাল জবা অথবা ২টা কাঠগোলাপ। কপালে সিঁদুর লাল গোল টিপের সঙ্গে মিলিয়ে দু’হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি পরে যে কেউ চলে যেতে পারেন হলুদ সন্ধ্যায়। এক্ষেত্রে কানে কিছু না পরে গলায় মালা পরাটাই মুখ্য যেন। হাতে থাকতে পারে গামছার পুটুলি ব্যাগ ও লালটিপ। লাল চুড়ির সঙ্গে মিলিয়ে দু’পায়ে আলতা দিতে ভোলা যাবে না। আর হাতে কিন্তু অবশ্যই থাকা চাই মেহেদি কেননা গন্তব্যস্থল যে হলুদসন্ধ্যা। ছেলেদের ক্ষেত্রেও শীতে বিয়ের অনুষ্ঠানে শাড়িকে স্বাচ্ছন্দ্যরূপে গ্রহণ করার হারটা যেন বেশিই থাকে মেয়েদের। এই শীতে সিল্ক, কাতান, খাদির ওপর এমব্রয়ডারি এই শাড়িগুলোর আধিক্য বেশি দেখা যায়। কেননা যেখানে বছরের অন্যান্য সময় দাপটের সঙ্গে বিস্তার লাভ করে সুতি ও এন্ডি।
শীতে শাড়ির সঙ্গে ত্রিমাত্রা যোগ করে ম্যাচিং শাল আবার কখনও কখনও অভিনবত্ব এনে দেয় বিপরীত রঙের শালও। শীতে থ্রি কোয়ার্টার এবং ফুলসিøভ ব্লাউজই থাকে তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে।
হালকা রোদ, শুকনো পাতা পড়া মাটি, কখনও বা ঠা-া মৃদু বাতাস এই বৈচিত্র্যময় শীতের কালার নিয়ে অনেকেরই ভাবনার শেষ নেই। মূলত গাঢ় রঙগুলোই প্রাধান্য পায় বেশি এই ঋতুতে। গাঁদা-সূর্যমুখীর হলুদ-কমলার সঙ্গে সঙ্গে বেগুনি, লাল, কালো আরও জমকালো করে তোলে যে কাউকে বিয়ের অনুষ্ঠানে। সিঁদুর লাল সিল্কে কপার গোল্ডেন ভারি ভারি সুতার কাজ শাড়ির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় অনেকগুণ। এ ছাড়া এন্ডি সিল্কে ব্লকে এবং এর চারপাশে এমব্রয়ডারির কাজ দেখা যায় আড়ংয়ের শাড়িতে। এখানে ভারি কপার কালার কানের দুলের সঙ্গেু সামঞ্জস্যতা রাখে খোলা চুল। চোখে ভারি শেড ও ভারি কাজলের আধিক্য থাকাই চাই না হলে কিছুটা হলেও অপূর্ণতা থেকে যেতে পারে শীতের পার্টির সাজে।
এখন শীতের সমাপ্তিতে এবং কিছুটা বসন্তের প্রারম্ভের আমেজ এবং বৈচিত্র্যতার জন্য অনেকেই বেছে নিতে পারেন দেশীয় সুতি শাড়ি। যে কোন গাঢ় রঙের দেশীয় সুতি শাড়িতে যে কেউ সম্পূর্ণ করে আসতে পারেন বিয়ের অনুষ্ঠান। এক রঙা সুতি বা এন্ডি শাড়ির সঙ্গে বিপরীত রঙের ব্লাউজই মানায় বেশি। শীতের হাওয়ার থ্রি-কোয়ার্টারই পছন্দ সবার। কেউ চাইলে থ্রি কোয়ার্টার ব্লাউজের হাতায় পাইপিনের মতো করে কাঠপুঁতি বা দু’পাশে দুটো করে কড়ি লাগিয়ে নিতে পারে। সুতি শাড়ির সঙ্গে অবশ্যই চুল বাঁধার ধারাটা হওয়া উচিত দেশীয় ঢঙে। কেউ একপাশে একটা খোঁপা করে তাতে গুঁজে দিতে পারে দেশীয় ফুল। কেউবা একটা বেণী করে এনে দিতে পারেন এক পাশে টিলা আর অপর পাশে দু’তিনটা চুল কেউ খেলিয়ে উঁকি দিতে পারে বেণীর দিকে। সুতি এন্ডি শাড়ির একরঙা সঙ্গে বেশি মানায় কাঠের পুঁতির গহনা। রঙবেরঙের অনেক কাঠপুঁতির মালা, হাতে নাম না জানা অনেক কালারের বেতের চুড়ি যে কাউকে স্মার্ট লুক এনে দেবে। কেউ বা চাইলে পরতে পারেন গামছার তৈরি মালা ও চুড়ি।
শাড়ির পাশাপাশি অনেকেই বেছে নিতে পারেন সালোয়ার কামিজ। গাঢ় কমলা সিল্কের সালোয়ার কামিজ সঙ্গে মসলিনের জলপাই রঙের ওড়না অনায়াসে যে কাউকেই মানিয়ে যাবে এই ঋতুতে। এ ছাড়াও ফিরোজা, বেগুনি নীল এই কালারগুলোও প্রাণচঞ্চল করে তোলে যে কাউকে। যাত্রা, আড়ংয়ে সিল্কের কামিজ এবং চুড়িদার সালোয়ারের পোশাকের বৈচিত্র্যময় কালারে যে কেউই অনিন্দিতা হয়ে উঠতে পারেন শীতের পার্টিতে।
সোহানী

No comments

Powered by Blogger.