তারেক, হারিছ চৌধুরী ও মুজাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে- প্রদর্শিত ভিডিও চিত্রের তথ্যে গ্রেনেড হামলা মামলা আরও গতিশীল হচ্ছে by শংকর কুমার দে

গাফফার খান চৌধুরী একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। বুধবার গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক সিআইডি প্রধান ফররম্নখ আহমেদকে ৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
সিআইডি সূত্র জানায়, বুধবার সকাল থেকে টানা ৩ ঘণ্টা সাবেক সিআইডি প্রধান ফররম্নখ আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গ্রেনেড হামলা মামলা সম্পর্কে সাবেক আইজি মহাপরিদর্শক ফররম্নখ আহমেদ বলেছেন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশেই মামলাটি তড়িঘড়ি করে সিআইডিতে পাঠানো হয়। লুৎফুজ্জামান বাবর সবই জানেন। সিআইডি মামলার তদনত্ম নিরপেৰভাবে করতে চেয়েছিল। কিন্তু লুৎফুজ্জামান বাবরের কারণে তা সম্ভব হয়নি। বাবরের নির্দেশেই মামলার তদনত্মভারও দেয়া হয়েছিল বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পছন্দের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে। এর আগে গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক আব্দুল কাইয়ুম, শহুদুল হক, আশরাফুল হুদা, সাবেক ডিএমপি কমিশনার মিজানুর রহমান খান ও খান সাঈদ হাসানসহ অনত্মত ২০ পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তদনত্মকারী সংস্থা সিআইডি বলছে, একটি নতুন ডকুমেন্টারিতে প্রকাশ পাওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য সরকারের কাছে একটি প্রসত্মাবও রয়েছে। এদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সরকারের মনোভাব জানার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গ্রেনেড হামলার পর তাজা গ্রেনেড উদ্ধারের বিষয়টির তদনত্মও নতুন করে গতিশীল হবে। পিলখানা হত্যাযজ্ঞ মামলার চার্জশীট দাখিলের পর গ্রেনেড হামলা মামলার তদনত্মে এ বিষয়ে সিদ্ধানত্ম হবে। সে ৰেত্রে হার্ড লাইনে যেতে পারে তদনত্মকারী সংস্থা সিআইডি। বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইসু্য বানানোর সুযোগ থাকছে না।
এ ৰেত্রে হরকত-উল-জিহাদ প্রধান মুফতি হান্নান, আইডিবি নেতা আব্দুস সালাম, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টুকে আবার জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হতে পারে। মুফতি হান্নান যাদের নাম বলেছে তাদের মধ্যে তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরী বর্তমান সরকারের আমলে দেশে ফিরছেন এমন সম্ভাবনা খুব কম। সেৰেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধমে বিদেশ গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। কারও নাম এলে তাকে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সেৰেত্রে বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইসু্য বানিয়ে কোন লাভ হবে না। নতুন করে এমন তথ্য প্রকাশ পাওয়ায় তদনত্ম নতুন গতি পাবে। মামলার তদনত্মকারী কর্মকর্তা সিআইডির এসপি আব্দুল কাহার আকন্দ জনকণ্ঠকে জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে আপাতত এ বিষয়ে কোন সিদ্ধানত্ম হচ্ছে না। পিলখানা হত্যাযজ্ঞ মামলার চার্জশীট দাখিলের পর এ বিষয়ে তদনত্ম শুরম্ন হবে।
সিআইডির তদনত্মে একটি বিষয় স্পষ্ট, এক ঢিলে দুই পাখি মারতেই শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চক্রানত্ম ছিল। এতে বিএনপির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীও চলে যেত, অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াও থমকে যেত। বিএনপি-জামায়াতের একটি বড় অংশও এতে সরাসরি মদদ যুগিয়েছে। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় অনেকের ভাগ্যও ফিরেছে। গ্রেনেড হামলা মামলায় বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক শিৰা উপমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও বাবুর জড়িত থাকার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। পরে আব্দুস সালাম পিন্টু গ্রেফতার হয়। কিন্তু অপর দু'ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও বাবু পালিয়ে যায়। আব্দুস সালাম পিন্টু গ্রেফতার হওয়ায় ভাগ্য খুলে যায় তার ভাই সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর। সালাম পিন্টুর পরিবারের প্রতি বিএনপি দয়া দেখায়। সালাম পিন্টুর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে এবং পিন্টুর পরিবারকে সানত্ম্বনা পুরস্কার হিসাবে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে ছাত্রদলের সভাপতি করা হয়। অন্যথায় টুকুর ছাত্রদল সভাপতি হওয়ার তেমন কোন সম্ভাবনা ছিল না। সুলতান সালাউদ্দিন মাহমুদ টুকু সভাপতি হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে চরম অসনত্মোষ বিরাজ করছিল। সে অসনত্মোষের জের ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের দু'গ্রম্নপের মধ্যে রক্তৰয়ী সংঘর্ষ হয়।
অন্যদিকে গ্রেনেড হামলার পর পরই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সেলের কাছ থেকে তাজা আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধার হয়। এ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় গ্রেনেড প্রবেশ করানোর সঙ্গে জড়িতরা আজও শনাক্ত হয়নি। তবে নতুন করে গ্রেনেড হামলা মামলার তদনত্মে তা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। গ্রেনেড উদ্ধারের ঘটনাটি পরবতর্ীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ধামাচাপা পড়ে যায়। গোয়েন্দাদের ধারণা, গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের জেল থেকে পালানোর কথা ছিল।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রদর্শিত এক ডকুমেন্টারিতে হরকত-উল-জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের বক্তব্য প্রকাশ পায়। বক্তব্যে মুফতি হান্নান বলেছে, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট হাওয়া ভবনে গোপন বৈঠক হয়। বৈঠকে সে (মুফতি হান্নান) ছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে হাওয়া ভবনের কর্ণধার তারেক রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, ফ্রিডম পার্টির নেতা মেজর নূর, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশন থেকে রাজনৈতিক দল হিসাবে ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টির নিবন্ধের চেষ্টাকারী আফগানফেরত যোদ্ধা মুফতি মাওলানা আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে শেখ হাসিনাকে হত্যার চক্রানত্ম চূড়ানত্ম হয়। এরপর ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
উলেস্নখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ২৪জন নিহত ও ৫ শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কমর্ী আহত হন। পরবতর্ীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মামলার তদনত্মের নামে নানা নাটকের জন্ম দেয়। সর্বশেষ মামলাটির পুনর্তদনত্ম শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন শেখ হাসিনার জেল মুক্তির দিন ২২ জনকে আসামি করে মামলার চার্জশীট দাখিল করা হয়। আসামিদের মধ্যে বর্তমানে ১৪জন কারাগারে রয়েছে। বাকি আসামিদের মধ্যে দু'সহোদর জঙ্গী মুরসালিন ও মুক্তাকিন ভারতের তিহার জেলে বন্দী রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.