বিশ্ব এজতেমা কাল শুরম্ন, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন- ব্যাপক নিরাপত্তা

টঙ্গী, ২০ জানুয়ারি টঙ্গীতে তাবলীগ জামাতের বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার থেকে আনুুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব এজতেমা শুরম্ন হচ্ছে। ৩ দিনব্যাপী এ বিশ্ব এজতেমা আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে রবিবার দুপুরে শেষ হবে।
বিশ্ব এজতেমা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানের লৰ্যে পুরো টঙ্গীতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দফায় দফায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠক চলছে গত কদিন ধরে। ৩ দিনের এ বিশ্ব এজতেমায় আমল, আখলাক, দুনিয়া ও আখেরাতে সুখ-শানত্মি ও সমৃদ্ধির লৰ্যে মুরবি্বগণ মুসলিস্নদের উদ্দেশে বয়ান করবেন।
সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে এজতেমা সম্পন্নের লৰ্যে এজতেমার আয়োজকও প্রশাসনের পৰ থেকে সরকারী উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় ২৭টি গুরম্নত্বপূর্ণ সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই ইতোমধ্যে বাসত্মবায়িত হয়েছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও গত তিন মাস ধরে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ১ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল মাঠটিকে চটের ছাউনি দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে। এ প্যান্ডেলের নিচে মুসলিস্নরা ৩দিন অবস্থান করবেন। বিদেশী মেহমানদের জন্য এজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম কোণে নির্মিত হয়েছে অতিরিক্ত ৩টি টিনশেডসহ মোট ৮টি টিনশেড স্থাপনা। এখানে বিদেশী মুসলিস্নরা অবস্থান করবেন।
আয়োজক সূত্র জানায়, গত ২৪ নবেম্বর ৫ দিনব্যাপী জোড় এজতেমা সম্মেলনের পর থেকেই বিশ্ব এজতেমা মাঠের বিশাল চটের প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ শুরম্ন হয়। সরকার ইতোমধ্যেই এজতেমা মাঠের উন্নয়নের জন্য ৫ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। সরকারী বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে মাঠের চারপাশে নতুন করে রাসত্মা-ঘাট, দ্বিতল টয়লেট, ওজু ও গোসলখানা, বিদেশী মেহমানদের নিবাস নির্মাণ, পানি,গ্যাস, বিদু্যত লাইন স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা মাঠের জন্য নির্ধারিত ১৬০ একর জমিতে নির্মিত বিশাল চটের প্যান্ডেলকে ৩৩টি খিত্তায় (ভাগে) ভাগ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট খিত্তায় নির্দিষ্ট জেলার মুসলিস্নরা অবস্থান করবেন। চটের বাইরেও ছাউনি টানিয়ে অনেক মুসলিস্ন অবস্থান নিতে পারবেন। এজতেমা মাঠের ভিতরে মুসলিস্নদের চলাচলের জন্য ৭টি পাকা রাসত্মা তৈরি করা হয়েছে। চলাচলের সুবিধার্থে মুসলিস্নদের ডান-বামে চলাচল করতে বলা হয়েছে। মাইক ছাড়া নামাজ আদায় করার জন্য প্রতিবারের ন্যায় এবারও ছাউনির ভেতরে দু'শ' মোকাবি্বর মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এবার উঁচু মূল বয়ান মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে বিদেশী নিবাসের পাশে।
এজতেমা মাঠের বিশাল গোডাউনের জিম্মাদার নোয়াখালীর আবদুল কুদ্দুস। প্রায় ৩৫ বছর ধরে তিনি এ দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ময়দানের কোন সমস্যা নেই। ইতোমধ্যেই ময়দানের সকল প্রস্তুতি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশের বিদেশী মেহমান তাবলীগ অনুসারীর সংখ্যা ২৫ হাজার এবারের বিশ্ব এজতেমায় অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গত বিশ্ব এজতেমায় ১৪ হাজার বিদেশী মেহমান অংশ নিয়েছিলেন বলে বিদেশী নিবাসের জিম্মাদার মোঃ শাজাহান মিয়া জানান। এ বছর বিদেশী মেহমানদের জন্য দ্বিগুণ জায়গা বাড়ানো হয়েছে। সরকারীভাবে বিদেশী নিবাসে দ্বিতল গোসলখানা তৈরি করা হয়েছে। এক সঙ্গে ১০৪জন মুসলিস্ন এতে গোসল করতে পারবেন। গরম পানিরও ব্যবস্থা রয়েছে।
এজতেমা মাঠের নিরাপত্তা : এজতেমা উপলৰে এজতেমা ময়দানসহ শিল্পশহর টঙ্গী ও আশপাশের এলাকাকে নিরাপত্তা বলয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এজতেমা মাঠের নিরাপত্তার জন্য ১৫ হাজার পুলিশ সদস্যসহ আনসার, র্যাব ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ মোট ১৮ হাজার আইন-শৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনীর সদস্য নিরাপত্তার কাজে মোতায়েন থাকবে। ৬০টি সিসি ক্যামেরা ও ৯টি পর্যবেৰণ টাওয়ার থেকে দূরবীনের সাহায্যে সর্বৰণিক নিরাপত্তার দিকটি পর্যবেৰণ করা হচ্ছে। এজতেমা মাঠের ৩৩টি খিত্তার প্রতিটিতে মুসলিস্নবেশে ২জন করে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য নিয়োজিত থাকবে বলে জানা গেছে। এজতেমা মাঠের ১৭টি প্রবেশ পথ ছাড়াও গুরম্নত্বপূর্ণ স্থানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এর মধ্যে মুভি ক্যামেরাও রয়েছে। মাঠের প্রবেশ পথগুলোতে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তলস্নাশি করা হবে। এছাড়াও এজতেমার আয়োজকদের পৰ থেকে নিরাপত্তাকমর্ীও থাকবে।
টঙ্গী পৌরসভার গৃহীত কার্যক্রম : টঙ্গী পৌরসভা প্রতিবারের ন্যায় এবারও বিশ্ব এজতেমা সফল করতে এজতেমা মাঠে ১০টি উৎপাদক নলকূপের সাহায্যে আড়াই লাখ গ্যালন পানি উত্তোলন করে মুসলিস্নদের ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করবে। ১০টি গভীর নলকূপ দৈনিক একটানা ২২ঘণ্টা চালু রেখে প্রতিদিন ৫৫ লাখ গ্যালন পানি ১৩ কি.মি. পাইপ লাইনের নেটওর্য়াকের মাধ্যমে এজতেমা মাঠে সরবরাহ করবে। টঙ্গী পৌর মেয়র এ্যাড. আজমত উলস্না খান জানান, এছাড়াও ১ লাখ গ্যালন ধারণৰমতা সম্পন্ন ১টি ওভারহেড ট্যাংক সর্বৰণিক রিজার্ভ রাখা হয়েছে। এজতেমা মাঠের আশপাশের অবৈধ স্থাপনা, দোকান-পাট ইতোমধ্যে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই এজতেমা ময়দান ও প্রবেশ পথসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। চাহিদা মোতাবেক বিস্নচিং পাউডার সরবরাহ করা হয়েছে। ডিসিসি ও টঙ্গী পৌরসভার মাধ্যমে মশক নিধন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পৌরসভার পৰ থেকে আইন-শৃঙ্খলা রৰা বাহিনীর কন্ট্রোল রম্নম, ৪৩টি ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প তৈরির তাঁবু, পৌরসভার জন্য ১টি, জেলা প্রশাসনের জন্য ১টি ও র্যাবের জন্য ১টি পৃথক কন্ট্রোল রম্নম স্থাপন করা হয়েছে। পৌরসভার পৰ থেকে মুসলিস্নদের ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুধপত্র বিতরণের জন্য ১টি ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
টঙ্গীতে বাড়ছে মানুষের চাপ : এজতেমা উপলৰে টঙ্গীতে বহিরাগত মানুষের চাপ বাড়ছে। ইতোমধ্যে এজতেমার নিরাপত্তা কাজে দায়িত্ব পালনের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পুলিশ, আর্মড পুলিশ, র্যাব ও আনসারসহ আইন শৃঙ্খলা রৰা বাহিনীর প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার সদস্য টঙ্গীতে অবস্থান নিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন তাদের আবাসন করতে হিমশিম খাচ্ছে। স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন কারখানার ভিতর তাদের থাকার জায়গা করে দেয়া হচ্ছে। এতে টঙ্গীর অধিকাংশ শিৰা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চিলস্নাধারী মুসলিস্নরা টঙ্গীর আশপাশের এলাকার মসজিদগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন। তারা আজ থেকে এজতেমা ময়দানের নির্দিষ্ট খিত্তায় অবস্থান নেবেন। এদিকে টঙ্গীর বাসা-বাড়িগুলোতে পরিবার প্রতি ৬ থেকে ১০ জন করে বিভিন্ন এলাকার মেহমান এসে পেঁৗছেছেন।
উলেস্নখ করা যেতে পারে, ১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গীর এই ময়দানে বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

No comments

Powered by Blogger.