'সামরিক শাসনের সঙ্গে ছিলাম'- ৫ম সংশোধনী মামলার শুনানি

 সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এবং তিন আইনজীবীর আবেদনের ওপর আপীল বিভাগে শুনানি অব্যাহত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে ৬ সদস্যবিশিষ্ট আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি শুরম্ন হয়। শুনানিতে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের আইনজীবী টিএইচ খান ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বক্তব্য রাখেন। আদালত তাঁদের বক্তব্য শুনে শুনানির পরবতর্ী দিন নির্ধারণ করেছে ২৪ জানুয়ারি।
শুনানিতে টিএইচ খান আদালতকে বলেন, পার্লামেন্টের কর্মকা- হাইকোর্টের জন্য বিচার্য বিষয় হতে পারে না। সংসদকে হাইকোর্ট কোন নির্দেশ দিতে পারে না। সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদে হাইকোর্টকে এ ৰমতা দেয়নি। সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের ২টি পার্ট। একটি মৌলিক অধিকারের প্রয়োগ, আরেকটি জুডিশিয়াল রিভিউ। তিনি বলেন, আমার যুক্তি হলো পার্লামেন্টকে নির্দেশ দেয়ার ৰমতা হাইকোর্ট দেয়নি। সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদের কিছু আইনকে অবৈধ করার এখতিয়ার হাইকোর্টের নেই। খোন্দকার মোশতাক খারাপ কাজ করেছে, পার্লামেন্ট তাঁকে বৈধতা দিয়েছে। খোন্দকার মোশতাক সরকার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ রহিত করেছিল ২১ নং আইন দ্বারা।
টিএইচ খান আদালতকে আরও বলেন, সুপ্রীমকোর্টের একজন জাজের ৰমতার সংজ্ঞা ১০১ অনুচ্ছেদে বলা আছে_ যেহেতু সংবিধান বিষয়ে পঞ্চম সংশোধনী রায়ে বলা হয়েছে, সে কারণেই সংবিধান আদালতকে যে ৰমতা দিয়েছে তার বাইরে যাবার সুযোগ নেই। যেহেতু চতুর্থ তফসিল সংবিধানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অতএব এর কারণে মার্শাল ল'-এর মাধ্যমে কৃত কাজ কোন আইন-আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ শুনানি শেষে সাংবাদিকদের বলেন, চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছিল। এক দল কায়েম করা হয়েছিল। ৪টি পত্রিকা রেখে সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এর থেকে বের হয়ে আসার জন্যই পঞ্চম সংশোধনী করা হলো। গণতন্ত্র থাকলে পঞ্চম সংশোধনীর প্রয়োজন হতো না। তিনি বলেন, দু'সামরিক সরকারের সময় জড়িত ছিলাম। অনেক কিছুই জানি, যা অনেকেই জানেন না। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্যই কাজ করেছি; সামরিক আইনের জন্য নয়। এ সময় আইনজীবীরা শেম শেম বলে উঠলে মওদুদ আহমদ বলেন, এ সময় আমি বলি চতুর্থ সংশোধনী করার সময় শেম শেম করার কথা কি মনে ছিল। তিনি বলেন, মুন সিনেমা হল নিয়ে ১৯৭৬ সালে রিট হয়। জমি ফেরত দেয়ার জন্য রায় হয়েছে। বর্তমান সরকার ইচ্ছা করলেই জমি ফেরত দিতে পারে। কিন্তু সরকার মামলায় কিছু সুবিধা পাচ্ছে।
৩ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে আপীল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ পঞ্চম সংশোধনীর ওপর তৎকালীন বিএনপি সরকার যে আপীল করে তা প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করে। এরপর ৫ জানুয়ারি পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে চেম্বার জজের কাছে আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। তারই ওপর এখন শুনানি অব্যাহত রয়েছে।
সামরিক সরকারকে বৈধতা দিয়ে ১৯৭৭ সালের ৭ নম্বর মার্শাল ল রেগুলেশন (এমএলআর) চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একটি রিট আবেদনের প্রেৰিতে হাইকোর্ট গত ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিচারপতি এবিএম খায়রম্নল হক ও বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। সেদিনই রায় স্থগিতের আবেদন জানায় তৎকালীন বিএনপি সরকার।
হাইকোর্টের রায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যনত্ম খোন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম এবং জিয়াউর রহমানের শাসনকে বেআইনী ঘোষণা করা হয়। তবে আদালত ওই সময়ে জনস্বার্থে করা সরকারের বেশকিছু বেআইনী কাজকে মওকুফ করে দিয়েছিল। হাইকোর্ট আলোচিত ঐ রায়ে বলেছিল, সামরিক আইন সামগ্রিকভাবে অবৈধ ও অসাংবিধানিক এবং সামরিক আইনের অধীনে করা সব কার্যক্রম, আইন ও বিধিও অবৈধ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যনত্ম সরকার পরিবর্তন সংবিধান সম্মতভাবে হয়নি বলে হাইকোর্ট ঐ রায়ে অভিমত প্রদান করে।

No comments

Powered by Blogger.