রাজধানী ছাড়া শীতের তীব্রতা কোথাও কমেনি, মৃত ১২

 রাজধানী ছাড়া দেশের অন্য সব অঞ্চলে বুধবারও অনুভূত হয় তীব্র শীত। পাশাপাশি বিরাজ করে ঘন কুয়াশা এবং বইয়ে যায় হিমেল বাতাস। বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মঙ্গলবারের তুলনায় শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস কমে যায়।
আজ বৃহস্পতিবারও দেশে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে তীব্র শীতে আক্রানত্ম ও মৃতু্যর সংখ্যা কমেনি বুধবারও। এদিন নতুন করে বাগেরহাট, দিনাজপুর ও ঝিনাইদহে ১২ জনের মৃতু্য হয়েছে। এ নিয়ে গত ৩১ দিনে এ নিয়ে শীতে ১৪৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় গত ৭ দিনে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। শীতের কারণে কুড়িগ্রামের চর-দ্বীপের গ্রামগুলোতে নিঘর্ুম রাত কাটাচ্ছে দরিদ্র লোকজন। বুধবার সূর্যের আলোয় প্রশানত্মি ফিরে পায় রাজধানীবাসী। মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে ঢাকা শহরের বিভিন্ন ফুটপাথে রাত কাটানো শীতার্ত মানুষকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।
আবহাওয়া অফিস জানায়, আজ বৃহস্পতিবার যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুমিলস্না ও ফেনী অঞ্চলসহ রাজশাহী বিভাগে বিরাজমান মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশে প্রধানত শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বুধবার দেশের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ সিলেটে ২৭ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন রাজশাহীতে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিকে বুধবার হঠাৎ করে বদলে যায় রাজধানীর আবহাওয়া। সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই বেরিয়ে আসে সূর্যের আলো। তবে হিমেল বাতাস থাকায় সকালে শীত অনুভূত হয়। দিনভর সূর্যের আলোয় শীতের তীব্রতা ছিল কম। কিন্তু ছায়াচ্ছন্ন স্থানে গেলেই অনুভূত হয় তীব্র শীত। রোদ থাকলেও অধিকাংশ মানুষকে গরম কাপড় ব্যবহার করতে দেখা গেছে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে ঢাকা শহরের বিভিন্ন ফুটপাথে রাত কাটানো শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। শীতবস্ত্র বিতরণকালে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. সহিত আকতার হুসাইন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত, অধ্যাপক ড. সদরম্নল আমিন, অধ্যাপক ড. আখতারম্নজ্জামান, লুৎফর রহমান ও ড. বিমানচন্দ্র বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানী ছাড়া দেশের অন্য সব অঞ্চলে বুধবারও অনুভূত হয় তীব্র শীত। পাশাপাশি বিরাজ করে ঘন কুয়াশা এবং বইয়ে যায় হিমেল বাতাস।
নিজস্ব সংবাদদাতা বাগেরহাট থেকে জানান, বাগেরহাটে তীব্র শীতে বুধবার চারজনের মৃতু্য হয়েছে। বুধবার ভোরে জেলার ফকিরহাট উপজেলার শুভদিয়া ইউনিয়নের দেয়াপাড়ার হাজরাপাড়ার মুনছুর আলীর স্ত্রী হাজেরা বেগম (৫৬) মারা যান। ওই রাতে একই ইউনিয়নের মান্দারবুনিয়া গ্রামের উকিলউদ্দিনের স্ত্রী কুলছুম বিবি (৬০)-এর মৃতু্য ঘটে। মোরেলগঞ্জ উপজেলার পূর্ব সরালিয়া গ্রামের হাকিম শেখের স্ত্রী সাহিদা বেগম (৬০) ও বারইখালী গ্রামের আনছার আলী হাওলাদার (৭০) শীতে অসুস্থ হয়ে যান।
স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যসত্ম অবস্থায় রয়েছে দিনাজপুরের জনজীবন। গত দু'দিনে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। বুধবার নতুন করে শীতজনিত রোগে ৪ জনের মৃতু্য হয়েছে। এছাড়া প্রচ- শীতে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে গৃহপালিত পশুপাখি। কিছুতেই শীত কমছে না দিনাজপুরে। দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন এলাকায় লোকজনকে রাসত্মার পাশে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। ফুটপাথ ও দোকানগুলোতে শীতবস্ত্র কেনার ধুম পড়েছে। এ সুযোগে দোকানিরা চড়া দামে গরম কাপড় বিক্রি করছে। স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। ক্ষেতমজুর ও নির্মাণ শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা ঝিনাইদহ থেকে জানান, শীতজনিত রোগে নতুন করে ৪ জনের মৃতু্য হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে শৈলকুপা উপজেলার সিদ্ধি গ্রামের বৃদ্ধ সিরাজ (৬৫) শীতে মারা যান। অচিনত্ম্যপুর গ্রামের শামছুদ্দিনের স্ত্রী দুলনেছা (৬৫), গোকুলনগরের করিমের পুত্র নাজের বিশ্বাস (৫৫) ও সাতগাছী গ্রামের আনছারের স্ত্রী তারা বেগম (৬০) মারা যান। তীব্র শীতে বিপর্যসত্ম হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত ৭ দিনে এলাকায় সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। কর্মহীন হয়ে পড়েছে দিনমজুররা। কনকনে শীতে হিমশিম খাচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও।
স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, জেলায় শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। বিপর্যসত্ম হয়ে পড়েছে জনজীবন। বুধবারও ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল কুড়িগ্রাম। পাশাপাশি বইতে থাকে তীব্র শীত। ধরলা-ব্রহ্মপুত্র দুধকুমোর এবং তিসত্মাপারের চরগ্রামে শীতের তীব্রতা যেন একটু বেশি। চর-দ্বীপচরের গ্রামগুলোতে ছনের ঘর ও খড়ের ছাউনি। তীব্র শীতে মানুষ নিঘর্ুম রাত কাটাচ্ছে। শীতজনিত রোগে আক্রানত্ম ও মৃতু্যর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রাজারহাট প্রেসক্লাবের উদ্যোগে শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.