টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব এজতেমা শুরু কাল- সব প্রস্তুতি সম্পন্ন- নূরুল ইসলাম, টঙ্গী থেকে

টঙ্গীতে তবলীগ জামাতের বিশ্ব এজতেমার সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে রবিবার পর্যন্ত ৩ দিনব্যাপী প্রথম পর্বের বিশ্ব এজতেমা চলবে। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ৪ দিন বিরতি দিয়ে ১৮ জানুয়ারি।
২০ জানুয়ারি শেষ পর্বের এজতেমা শেষ হবে। বুধবার থেকে দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা টঙ্গীর তুরাগ তীরে এজতেমাস্থলে আসতে শুরু করেছেন। বিশ্ব এজতেমা মাঠের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা বষয়ক জিম্মাদার প্রকৌশলী মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, আজ বৃহস্পতিবার বাদ আছর থেকেই অনানুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব এজতেমার আম বয়ান শুরু হবে। এতে করে পুরো দু’সপ্তাহ এজতেমার আমেজ থাকবে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকাজুড়ে। শুক্রবার জুমার নামাজে এজতেমা মাঠে লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নিবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। বুধবার থেকেই এজতেমার প্রথম পর্বে শরিক হওয়ার জন্য দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। এক বর্গ কিলোমিটারের বিশাল প্যান্ডেলের নিচে মুসল্লিরা অবস্থান করবেন। প্রথম পর্বের মুসল্লিদের জন্য চটের তৈরি পুরো ছাউনিকে ৪০টি খিত্তায় ভাগ করে বিভিন্ন জেলাওয়ারী মুসল্লিদের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। আগত মুসল্লিদের চলাচলের জন্য ছাউনির ভেতরে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি প্রশ্বস্ত রাস্তা। ময়দানের উত্তর পশ্চিম কোণে তুরাগ নদীর তীর ঘেষে তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মুসল্লিদের জন্য টিনশেড আন্তর্জাতিক নিবাস। মূল ছাউনির নিচে মধ্যখানে তুরাগ নদীর তীর ঘেঁষে টিন, লোহার পাইপ ও কাঠ দিয়ে মূল বয়ানমঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। আগত মুসল্লিদের জন্য এবছর সুযোগসুবিধা আরও বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৮৩৪টি টয়লেট, ১২৪টি গোসলখানা, ৩২টি অজুখানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ১২টি নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন সাড়ে ৩ কোটি লিটার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তুরাগ নদী পারাপারের জন্য সেনাবাহিনী ৮টি ভাসমান পল্টুন ব্রিজ তৈরি করেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় র‌্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দার ১২ হাজার সদস্য ৪ স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। র‌্যাব ও পুলিশের বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এসব টাওয়ার থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো মাঠ পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানী ময়দানের আশপাশ এলাকায় অস্থায়ী মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার বসিয়ে মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে।
খিত্তাগুলো হচ্ছে, গাজীপুর খিত্তা নং-১, ২, ঢাকা ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, সিরাজগঞ্জ ১৩, নরসিংদী ১৪, ফরিদপুর ১৫, রাজবাড়ী ১৬, শরীয়তপুর ১৭, কিশোরগঞ্জ ১৮, রংপুর ১৯, নাটোর ২০, মেহেরপুর ২১, রাজশাহী ২২, গাইবান্ধা ২৩, জয়পুরহাট ২৪, লালমনিরহাট ২৫, হবিগঞ্জ ২৬, দিনাজপুর ২৭, সিলেট ২৮, চাঁদপুর ২৯, ফেনী ৩০, চট্টগ্রাম ৩১, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি ৩২, বাগেরহাট ৩৩, কুষ্টিয়া ৩৪, নড়াইল ৩৫, চুয়াডাঙ্গা ৩৬, যশোর ৩৭, ভোলা ৩৮, বরগুনা ৩৯। ঢাকা মহানগরের জন্য আলাদা খিত্তা রয়েছে। বুধবার এজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা যায়, ময়দানের আনুষঙ্গিক সর্বশেষ প্রস্তুতিকাজ সারা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক নূরুল ইসলাম বলেন, দু’পর্বের এজতেমা সফল করতে জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও আশপাশ এলাকার অশ্লীল পোস্টার, ব্যানার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও জঞ্জালমুক্ত করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। সড়কগুলো যানজটমুক্ত রাখতে ব্যাপক ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েনসহ ফুটপাথ দখলমুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লির যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য শুধু নিম্নবর্ণিত স্থানসমূহ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর এলাকা : সাধারণ পার্কিং নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকার খালি জায়গা। উত্তরা ৬নং সেক্টর ও রাজউক কলেজের আশপাশের খালি জায়গা। সিলেট বিভাগ পার্কিং-উত্তরা ১২নং সেক্টর। বরিশাল বিভাগ পার্কিং-ধৌড় ব্রিজ ক্রসিং সংলগ্ন পার্কিং (ধৌড় ব্রিজ থেকে ২০০ গজ পশ্চিমে রাস্তার বাম পাশে। ঢাকা বিভাগ পার্কিং-সোনারগাঁও জনপথ সড়কের পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্ত। খুলনা বিভাগ পার্কিং-উত্তরা ১০ ও ১১ নং সেক্টর সড়কের উভয় পাশ। রংপুর বিভাগ পার্কিং- প্রত্যাশা হাউজিং। চট্টগ্রাম বিভাগ পার্কিং-উত্তরা ১৩নং সেক্টরের গাউছুল আজম রোড ও গরীবে নেওয়াজ রোডের উভয় পাশ। রাজশাহী বিভাগ পার্কিং- কামারপাড়া হাউজিং মাঠ এবং উত্তরা ১০নং সেক্টরের খালি জায়গায়।

No comments

Powered by Blogger.