মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে প্রধানমন্ত্রী-প্রশংসনীয় উদ্যোগ সফল হোক

যাঁদের অসীম ত্যাগে মুক্ত বাংলাদেশ, তাঁদের হাতে থাকে ভিক্ষার ঝুলি। অর্থাভাবে চলে না চিকিৎসা ও দুবেলা খাবার। একাত্তরে যাঁরা অমিত তেজে যুদ্ধ করেছেন পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে, তাঁদেরই অনেককে আজ বার্ধক্য আর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে টিকে থাকার জন্য।
কী দুর্বিষহ জীবন কাটে তাঁদের! চশমা ভেঙে যাওয়ার কারণে দর্জিগিরি বন্ধ হয়ে গেছে এক মুক্তিযোদ্ধার, বার্ধক্যে যাঁর বিশ্রামে জীবন কাটানোর কথা, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় যাঁর সংসার চলাই ছিল কাম্য- সেই মুক্তিযোদ্ধার একটি চশমা কেনারও সামর্থ্য নেই। জাতি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতার এ দৃশ্যগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে কালের কণ্ঠ। পাঠক ও সুধীমহলের দৃষ্টি কেড়েছে জাতীয় বীরদের প্রতি এ অবহেলা আর একাত্তরের বীরদের অনেকের দুর্ভোগগুলো। সুখের কথা, এ বিষয়টি দৃষ্টি এড়ায়নি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও। সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সংগত কারণেই প্রধানমন্ত্রীর এ আশ্বাস জাতি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতা ঢাকার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রীকে তাই আমরা সাধুবাদ জানাই তাঁর এ সিদ্ধান্তের জন্য। প্রধানমন্ত্রীর এই আশ্বাস ভাগ্যহত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও ব্যাপক নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের আবেগাপ্লুত অনুভূতি থেকে বোঝা যায়, তাঁরা কত অল্পতেই খুশি। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের দিকে নজর দেবেন- এ সংবাদেই তাঁদের কেউ কেউ চোখের পানি সংবরণ করতে পারেননি। একাত্তরের বীরত্বমাখা স্মৃতি তাঁদের তাড়িত করেছে সঙ্গে সঙ্গে। অনেকেই ইচ্ছা পোষণ করেন, প্রধানমন্ত্রী যদি তাঁদের সাক্ষাৎ দিতেন! কিছু দিতে হলে যদি তিনি নিজ হাতে দিতেন, তাহলে তাঁদের অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা পূরণ হতো। অনেকেই আছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যাকে সামনাসামনি দেখার ইচ্ছা পূরণ না হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে মনে দুঃখ পোষণ করে রেখেছেন। তাঁদের কথা, বঙ্গবন্ধুর কন্যাকেও যদি তাঁরা সামনে থেকে দেখার সুযোগ পান, বঙ্গবন্ধুকে এ পর্যন্ত কাছে থেকে দেখতে বঞ্চিত হওয়ার দুঃখবোধ তাঁদের আর থাকবে না। ভাগ্যহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এ মানসিকতার প্রমাণ আগেও পাওয়া গেছে। ২০১০ সালে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত ভূমিহীন এক মুক্তিযোদ্ধাকে ভূমি প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রশাসনকে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি, চাকরিরত মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি, মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বিদেশি এবং যৌথ বাহিনীর বীর সদস্যদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা জানানোর মতো বেশ কিছু কার্যক্রম ইতিমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণ এবং সেখানে সৌধ নির্মাণের প্রকল্পও বাস্তবায়নাধীন বেশ কিছু জায়গায়। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি কোটা নির্ধারণ করেও তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জাতি হিসেবে আমাদের কৃতজ্ঞতা জানানোর কাজটি করেছেন। সর্বশেষ কালের কণ্ঠে প্রকাশিত ভাগ্যহত মুক্তিযোদ্ধাদের ৩১ জনকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি জাতি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতাকে কিছুটা হলেও ঢাকতে সক্ষম হবে। তবে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে আখ্যায়িত এই বীরদের জন্য স্থায়ী কিছু করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। এই মুহূর্তে বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় সবাই বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। তাঁদের অনেকে স্বাভাবিক কারণেই রোগাক্রান্ত। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সুবিধা প্রদান, তাঁদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য সরকারি সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করা অতি জরুরি বলেই জাতি মনে করে। রাষ্ট্রীয় সম্মানসহ মুক্তিযোদ্ধার দাফন সম্পন্ন করা হচ্ছে- এটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যতটা সম্মানজনক, তার চেয়ে বেশি সম্মানিত হবেন যদি সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য তাঁদের প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা নিশ্চিত করা যায়। আমরা প্রত্যাশা করতে পারি, প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দিয়েই ত্বরিত বাস্তব পদক্ষেপ নেবেন।

No comments

Powered by Blogger.