আইনি সহায়তা চান নাফিসের মা-বাবা by ওমর ফারুক

শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টা। ড্রইংরুমে বসে আছেন আমেরিকায় এফবিআইয়ের হাতে আটক বাংলাদেশি নাফিসের মা-বাবা। চোখ তাঁদের টেলিভিশনের পর্দায়। একটি বেসরকারি টিভিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার বক্তব্য দেখাচ্ছিল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মজিনা বলেন, নাফিস কোনো সহযোগিতা চাচ্ছে না।


এ কথা শুনে চোখ ভিজে যায় নাফিসের বাবা অবসরে যাওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ ও মা রোকেয়া সিদ্দিকীর। দুজনই এই প্রতিবেদককে সামনে পেয়ে মজিনার বক্তব্য সম্পর্কে বলেন, নাফিস এটা বলতেই পারে না। গতকাল সন্ধ্যায় উত্তর যাত্রাবাড়ীর ১০৭/৪ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, নাফিসের মা মনমরা হয়ে বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর বাইরে থেকে বাসায় ফেরেন তাঁর বাবা। দুজনই কালের কণ্ঠকে জানান, শুক্রবার সকালে নাফিসের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে তাঁদের। নাফিস জানিয়েছেন, তিনি ভালো আছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে মানা তাঁর। নাফিস তাঁদের জানিয়েছেন, রাষ্ট্র হেইডি সিজার নামের এক আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে তাঁর পক্ষে লড়ার জন্য। আইনজীবীর বারণ, কুশল বিনিময় ছাড়া আর কোনো কথা বলা যাবে না। তাহলে ভবিষ্যতে ফোনে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হারাবেন তিনি। এ সুযোগ নাফিস ও তাঁর মা-বাবা কেউই হারাতে চান না। আর এ কারণেই তাঁরা কুশল বিনিময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন কথাবার্তা।
নাফিসের বাবা বলেন, 'নাফিসের ফোন পেয়ে প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না, ও ফোন করেছে। ও ফোন করেই আমি কেমন আছি জানতে চেয়ে ওর মায়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এ কারণে ওর মাকে দিয়ে দিই ফোন।'
নাফিসের মা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নাফিস আমেরিকায় যাওয়ার পর প্রতিদিন সকালে স্কাইপিতে ওর সঙ্গে কথা হতো। এক মাস ধরে কোনো কথা বলতে পারছি না। আমার মানিকের সঙ্গে কথা বলতে না পেরে আর থাকতে পারছি না। শুক্রবার ফোন আসার পর শুধু ওর কথাই শুনতে চাচ্ছিলাম। কত দিন পর ওর কণ্ঠ শুনলাম।'
নাফিসের বাবা বলেন, 'আমরা কী করব, কার কাছে যাব, বুঝতে পারছি না। সরকার সহযোগিতা করে যদি নিউ ইয়র্কে একজন ভালো আইনজীবী নিয়োগ করত, তাহলে অনেক ভালো হতো। আমার ছেলে কোনো অপরাধ করতে পারে না।'
নাফিসের মা বলেন, 'নাফিসকে ক্লাস ওয়ান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত স্কুল-কলেজে আমি নিয়ে গেছি, নিয়ে এসেছি। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। আমেরিকা গিয়েও সে নামাজ পড়েছে। নামাজ পড়ার জন্যই কি তাকে আটক করা হয়েছে? যদি জানতাম সেখানে নামাজ পড়লে সমস্যা হবে, তাহলে আমেরিকায় পাঠাতাম না। বরং যখন নাফিস বলত, সে নিউ ইয়র্কে নামাজ পড়ছে, তখন খুব ভালো লাগত এ কারণে যে অন্তত আমার ছেলেটা ভালো আছে। কুসঙ্গে মিশছে না।'
এক প্রশ্নের জবাবে নাফিসের বাবা বলেন, 'আমরা সরকারিভাবে সহযোগিতা পাচ্ছি আবার পাচ্ছিও না। কেউ আমাদের খোঁজও নেয় না। দুই সপ্তাহ আগে গিয়েছিলাম পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। তাঁর দপ্তর থেকে বলে দেওয়া হলো, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁরা জানাবেন। সময় দিলে আমাদের ফোন করে ডাকবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাদের ডাকা হলো না।'
ড্যান মজিনার কাছে ছেলের মুক্তি চেয়ে আবেদন করবেন বলে জানান নাফিসের বাবা।

No comments

Powered by Blogger.