লাল পরী কি পারবেন?

তিন দশকেরও বেশি সময় পর তারকা একজন ফার্স্টলেডি পেতে যাচ্ছে চীন। বলা হচ্ছে, ভাবী প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের তুলনায় তাঁর স্ত্রী লোকসংগীত শিল্পী পেং লিউয়ান বেশি জনপ্রিয়। দেশজুড়ে সবাই তাঁকে চেনেন 'লাল পরী' নামে। চিনপিংয়ের আগেই জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, মাও সে তুংয়ের স্ত্রী চিয়াং চিংয়ের পর এবারই প্রথম 'গ্ল্যামারাস' ফার্স্টলেডি পাচ্ছে চীন।


১৯৮৬ সালে যখন চিনপিংয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় পেং তখনই রীতিমতো জনপ্রিয়। চিনপিং সবে শিয়ামেন শহরের ডেপুটি মেয়র। বেশ কয়েক মাস প্রেম করার পর মালাবদল করেন তাঁরা। ১৯৯২ সালে তাঁদের মেয়ে শি মিংজের জন্ম হয়। বিয়ের পর অন্য কমিউনিস্ট নেতাদের মতোই ধীরে ধীরে পদোন্নতি পান চিনপিং। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, সিপিসির শীর্ষ পদে চিনপিংয়ের উঠে আসার পেছনে অন্যতম কারণ তাঁর স্ত্রী।
বেইজিংভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চাইনিজ একাডেমী অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের সমাজবিজ্ঞানী লি ইনহে বলেন, 'চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) ভাবমূর্তি খুবই একঘেঁয়ে। এর নেতারাও রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ হিসেবে রোবোটের মতো আচরণ করেন, যাঁদের সাধারণ মানুষকে আকর্ষণ করার মতো কোনো অনন্য বৈশিষ্ট্য থাকে না। পেং লিউয়ান সিপিসির নেতৃত্বে ভিন্নতা আনবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।'
১৪ বছর বয়সে শানদং ইউনিভার্সিটি অব আর্টসে চীনা লোকসংগীত বিষয়ে ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে পিপলস লিবারেশন আর্মিতে 'কলা ও সাংস্কৃতিক যোদ্ধা' হিসেবে নাম লেখান। ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে (সিসিটিভি) নববর্ষের অনুষ্ঠানে প্রথম অংশ নিয়েই জাতীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তা পেয়ে যান। সামাজিক ও দাতব্য কর্মকাণ্ডেও যুক্ত হয়েছেন পেং। কাজ করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শুভেচ্ছাদূত হিসেবে। বর্তমানে পিপলস লিবারেশন আর্মির মেজর জেনারেল পদমর্যায় আছেন তিনি।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পেং সাংস্কৃতিক তৎপরতা কমিয়ে দিয়েছেন। সিপিসির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সবসময় মধুর ছিল না। তাইওয়ানি সেনাবাহিনীতে তাঁদের কয়েকজন আত্মীয় থাকার কারণে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় পেংয়ের বাবাকে 'প্রতি-বিপ্লবী'র আখ্যা দেওয়া হয়। অবশ্য এ কারণে সিপিসিতে কোনো বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি পেংকে। তবে ফার্স্টলেডি হিসেবে তাঁর ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে। মাও সে তুংয়ের স্ত্রী চিয়াং চিং ছাড়া আর কোনো ফার্স্টলেডিকেই খুব একটা সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি।
চিং ১৯৪০ সাল থেকে মাওয়ের ব্যক্তিগত সচিব পদে নিয়োজিত ছিলেন। কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর সরকারে কাজেও যুক্ত হন। কিন্তু ১৯৭৬ সালে মাওয়ের মৃত্যুর পরপরই সিপিসির নেতাদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে। ক্ষমতা ছাড়তে না চাওয়ায় চিংকে বন্দি করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ড রহিত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলেও ১৯৯১ সালে আত্মহত্যা করেন তিনি। পেং-এর জন্য কী ভবিষ্যৎ অপক্ষো করছে, তা নিয়েই গুঞ্জন চলছে এখন। সূত্র : বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.