শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি-এমপিদের জন্য কোটা অনৈতিক

বেসরকারি স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ সদস্যদের জন্য কেন বিশেষ কোটা বরাদ্দ থাকবে, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। এক বা দুই শতাংশ_ যে ধরনের কোটাই বরাদ্দ থাকুক না কেন, সংসদ সদস্যরা যে নিজের নির্বাচনী এলাকার সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেই এ সুবিধা কাজে লাগাতে চাইবেন_ তাতে সন্দেহ নেই।


হতে পারে যে তারা মেধাবী শিশুদের ভর্তির জন্যই সুপারিশ করবেন। সুবিধাবঞ্চিত ও হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের ভর্তির জন্যও তারা কর্তৃপক্ষের কাছে নাম পাঠাতে পারেন। অন্যদিকে, কারও কারও শঙ্কা_ এ সুযোগে ভর্তিবাণিজ্যও হতে পারে। ধনবান পরিবার ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ সংসদ সদস্যের মাধ্যমে নামিদামি স্কুলে সন্তানকে ভর্তির সুযোগ নিতেই পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে_ সংসদ সদস্যরা কেন এ সুবিধার জন্য লালায়িত? নির্বাচনী এলাকায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে তাদের অধিষ্ঠান। এলাকার অন্য সব স্কুল-কলেজের সভাপতি পদে কে বসবেন, সেটাও তারা ঠিক করে দেন। এ ধরনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সংসদ সদস্যরা শিক্ষার গুণ-মান উন্নয়নে যে খুব একটা অবদান রাখছেন, সেটা বলা যাবে না। এমন অভিযোগ ব্যাপক যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সেরা হিসেবে গড়ে তোলা নয়, বরং তাদের প্রধান নজর থাকে পছন্দের লোককে শিক্ষক ও কর্মচারী পদে নিয়োগ করার প্রতি। প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো সুবিধা নির্মাণ এবং অন্যান্য খাতে সরকারি বরাদ্দ মিললে তা থেকেও ফায়দা আদায়ে তারা অনেকেই তৎপর থাকেন। সংসদ সদস্যদের কাছে সবার প্রত্যাশা থাকে_ তারা কারও প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবেন না। কিন্তু বাস্তবে তা এখন সোনার হরিণের মতোই মরীচিকা মনে হয়। এটাও বাস্তবতা যে, ভর্তির কোটা সুবিধা কাজে লাগিয়ে সবাইকে খুশি করা সম্ভব হবে না। এমনকি ভর্তিচ্ছুদের মধ্যে যারা প্রকৃতই মেধাবী তাদের সবাইকেও সীমিত আসনের কারণে ভর্তি করা সম্ভব হবে না। কেউ যদি আইডিয়াল, উত্তরা, মনিপুর বা ভিকারুননিসায় ৪-৫টি করে এমপি কোটা পান, তার কাছে তদবির আসবে এর অনেক গুণ বেশি। এ অবস্থায় কাকে রেখে কাকে সন্তুষ্ট করবেন? তার চেয়ে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করা হোক_ এ ধরনের অবস্থান গ্রহণই তাদের জন্য সুবিধাজনক। এতে নীতি-নৈতিকতার প্রতি অবিচল আস্থা প্রদর্শনও সম্ভব। কিন্তু হায়_ সদা সত্য কথা বলিবে, ন্যায়ের পথে থাকিবে কিংবা কদাপি অধর্ম প্রশ্রয় দিও না_ বাল্যশিক্ষার এসব নীতিকথা যে অনেক জনপ্রতিনিধির কাছে কেবলই কেতাবের কথা! সংসদ সদস্যরা নিজেদের জন্য বিনাশুল্কে গাড়ি আমদানির আইন পাস করেন। রাজধানীতে নিজের বাড়ি থাকলেও অনেকে সে তথ্য গোপন করে রাজউকের প্লট বরাদ্দ নেন। স্কুল-কলেজে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে নিযুক্ত হন। উপজেলা পরিষদে কর্তৃত্ব করেন। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রকল্প ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দের ওপর খবরদারি করেন। এত সুবিধার পরও স্কুলে ভর্তির জন্য কোটা না হলেই কি নয়! সমাজ যে বিষয়টিকে মন্দ আবদার হিসেবে দেখছে, সেটা কি তারা বুঝতে পারছেন না? বর্তমান সরকারের সাফল্যের তালিকার শীর্ষে রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রীর সততা ও নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। এমন মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী সেরা স্কুলগুলোতে সংসদ সদস্যদের জন্য
কয়েকটি আসন বাধ্যতামূলকভাবে বরাদ্দ রাখার নির্দেশ দেবে_ সেটা
কাম্য হতে পারে না।
 

No comments

Powered by Blogger.