গুমাই বিলে ধান কাটার উৎসব by মিঠুন চৌধুরী

কুয়াশার চাদর ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে সকালের সোনারোদ। মধ্য হেমন্তের মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে মাঠের সোনালি ফসল। লেজ ঝোলা ফিঙে আর শালিক ঝগড়া করে, তারপর উড়ে যায়। এসব কিছু দেখার ফুরসত নেই কৃষকের। মাঠের পাকা ধান কেটে তুলতে হবে গোলায়। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুমাই বিলে এখন চলছে ধান কাটার উৎসব।


চট্টগ্রামের ‘শস্যভান্ডার’ খ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিলের ফসলের খেতে ধান কাটার ধুম পড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে এবার বিলের দুই হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোকার আক্রমণ ছিল না। নিয়মিত বিরতিতে বৃষ্টিও হয়েছে। প্রতি হেক্টরে এবার ধান হয়েছে গড়ে পাঁচ টন করে। এতে চাল হবে ৩ দশমিক ২৫ টন করে। এই হিসাবে বিলে ধান হয়েছে ১৩ হাজার টন। অর্থাৎ চাল হবে প্রায় আট হাজার ৪৫০ টন।’
গতকাল শনিবার সকালে রাঙ্গুনিয়ার মাঝের বিল, নিশ্চিন্তাপুর, কাটা বটতল, কদমতলিসংলগ্ন বিলের বিভিন্ন অংশে গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে চলছে ধান কাটার কাজ।
কাটা বটতল এলাকার কৃষক সৈয়দুল আলম মাঝের বিলে দুই কানি (৮০ শতক) জমি বর্গা নিয়ে উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের ধান চাষ করেছেন। বর্গা বাবদ জমির মালিককে প্রতি কানিতে দিতে হয়েছে দুই হাজার টাকা করে। সঙ্গে বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম মিলিয়ে কানিপ্রতি প্রায় ছয় হাজার টাকা খরচ পড়েছে তাঁর।
সৈয়দুল আলমের কাছে ফলনের কথা জিজ্ঞেস করলেই একটু হাসেন। তারপর বলেন, ‘খরচ আর ধানের দাম মিলিয়ে এবার মোটামুটি লাভ হবে। ধান উঠলে অল্প নগদ টাকা হাতে আসবে। কিছু ধান রাখতে পারলে কয়েক মাসের খোরাকির চিন্তাও থাকবে না।’
বিলের মাঝামাঝি থেকে কাটা ধানের আঁটি কাঁধে নিয়ে ফিরছিলেন কৃষিশ্রমিক আবু আলম (৫৫)। তিনি বলেন, ‘বিলের শেষ অংশ থেকে দিনে তিনবার এপার-ওপার করে গেরস্তের বাড়ি ধান পৌঁছে দিলে আর রত (শরীর) চলে না।’
ফেরার সময় কৃষক সৈয়দুল আলমের সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে দেখা। তার কাঁধে ধানের আঁটি। তার মুখেও হাসি।

No comments

Powered by Blogger.