শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চিরবিদায় জানানো হলো সুভাষ দত্তকে

সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা ও খ্যাতিমান নির্মাতা সুভাষ দত্ত। গতকাল শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁর মরদেহে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানান। পরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয় রাজধানীর পোস্তগোলা শ্মশানে।


সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় সুভাষ দত্তকে শেষ শ্রদ্ধা জানান তাঁর ছেলে শিবাজী দত্তসহ পরিবারের সদস্যরা। রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ তাঁর প্রতি ভালোবাসার অর্ঘ্য নিবেদন করেন। প্রয়াতের স্মরণে খোলা হয় শোকবই।
শহীদ মিনারে পতাকায় মোড়ানো কফিন রাখা ছিল গগনশিরীষ গাছের ছায়ায়। এ সময় ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষে তাঁকে বিউগলের করুণ সুরে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ফুল দিয়ে প্রয়াতের কফিনে শ্রদ্ধা জানান। আওয়ামী লীগের পক্ষে তাঁকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। এ ছাড়া কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন দলের নেতারা এ সময় শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্বদের মধ্যে শিল্পীকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সৈয়দ শামসুল হক, আসাদুজ্জামান নূর, হাসান ইমাম, লিয়াকত আলী, ফকির আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘সুভাষ দত্তের মতো মানুষের কারণেই বাংলা চলচ্চিত্র গৌরবের পথে হেঁটেছে। তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার ছিল এবং আছে। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্র একজন শক্তিমান চলচ্চিত্রকর্মীকে হারাল। আর আমরা হারালাম একজন ভালো মানুষকে।’
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘মানুষ চলে যায়, কিন্তু তার কর্ম অন্যের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। সুভাষ দত্ত ছিলেন তেমনি এক গুণী ব্যক্তি, যাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উদ্দীপ্ত করবে।’
শহীদ মিনার থেকে মরদেহ দুপুরে নিয়ে যাওয়া হয় প্রয়াতের দীর্ঘদিনের কর্মস্থল এফডিসিতে। এ সময় কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর একে একে পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, চিত্রগ্রাহক সমিতির নেতারা ফুল দেন। প্রয়াতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তথ্যসচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুন, চাষী নজরুল ইসলাম, টেলিসামাদ, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, নায়ক রাজ রাজ্জাক, আলমগীর, সাংসদ সারাহ বেগম কবরী, সুচন্দা, উজ্জ্বল, শাকিব খান, ওমর সানী, আবু সাইদ খান প্রমুখ। এরপর মরদেহ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় পোস্তগোলার শ্মশানে।
গত শুক্রবার সকাল সাতটা ১০ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন রোডের নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন এই মেধাবী ও সৃষ্টিশীল চলচ্চিত্রনির্মাতা।

No comments

Powered by Blogger.