সমাধান সংলাপে-সংসদে যাক বিএনপি

রাজপথের আন্দোলনের পাশাপাশি সংসদ অধিবেশনে ফেরার কথা ভাবছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এটি একই সঙ্গে আশা ও স্বস্তির খবর। নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে গণমাধ্যম, দাতা দেশ, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বন্ধুরাষ্ট্রসহ সব মহল থেকেই বারবার বিরোধী দলকে সংসদে যাওয়ার জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।


সরকারের তরফেও এমন আহ্বান এসেছে। বলা হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যাগুলোর সমাধান হতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে কীভাবে আগামী সাধারণ নির্বাচন হতে পারে, তা নিয়ে প্রস্তাবও চাওয়া হয়েছে বিরোধী দলের কাছে। সরকারের এই আহ্বান সত্ত্বেও বিরোধী দল তাদের আন্তরিকতা ও সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সরকার ও বিরোধী দলের অসহযোগিতামূলক মনোভাব পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়েছে। বড় বিবাদের পাশে স্থান করে নিয়েছে ছোট ছোট আরও অনেক ইস্যু। এ দূরত্বের কারণে বিরোধী দল লাগাতার সংসদ অধিবেশন বর্জন করে রাজপথে গিয়েছে। তাদের এই বর্জনের কর্মসূচি কার্যত সংসদকে অকার্যকর করে রেখেছে। গণতান্ত্রিক রীতিপদ্ধতির জন্য এটি গ্রহণযোগ্য পরিস্থিতি নয়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা জনগণের কাছেই দায়বদ্ধ। সরকার বা বিরোধী দল, যে পক্ষেই তারা থাকুন, জনগণের দাবি-দাওয়া, সুবিধা-অসুবিধা সংসদে উত্থাপন করা তাদের দায়িত্ব। কোনো অজুহাতেই এ দায়িত্ব অস্বীকারের সুযোগ নেই। কিন্তু বর্তমান ও বিগত প্রতিটি সংসদেই দায়িত্বের গুরুতর ব্যত্যয় ঘটছে। শুধু সংসদীয় কার্যক্রমের স্বার্থেই নয়, দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার স্বার্থেও সরকার ও বিরোধী দল সংসদকেই সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র বিবেচনা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এক-এগারোর প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলো এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর তারা তাদের প্রতিশ্রুতি বিস্মৃত হয়েছে। সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে সংসদের অবস্থান সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারের মতো বিরোধী দলও দায়িত্ব এড়াতে পারে না। সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত যেমন রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়েছে, তেমনি বিরোধী দলের একগুঁয়ে মনোভাবও সে অস্থিরতা জিইয়ে রেখেছে। অস্থিরতার পরিণতি হিসেবে আগামী নির্বাচন নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে আশার কথা, সরকার ও বিরোধী দল উভয়েই সচেতন। কোনো অগণতান্ত্রিক ও অনির্বাচিত শক্তি যাতে রাজনৈতিক বিবাদের ফায়দা তুলতে না পারে, সে কথা শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অনেকবারই বলেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য সংলাপের ব্যাপারে তারা কতটুকু আন্তরিক_ সে প্রশ্ন উঠতে পারে। আমরা মনে করি, বিবাদ জিইয়ে রাখা উচিত নয়। গণতান্ত্রিক পথে দেশের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত পরস্পরের কাছাকাছি আসতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আর এ আলোচনার শ্রেষ্ঠ ফোরাম সংসদ। সংসদে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই রাজনৈতিক বিবাদ নিষ্পন্ন হওয়া উচিত। বিরোধী দল রাজপথের আন্দোলনের পাশাপাশি সংসদে যোগ দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। আশা করি, তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে। সরকারের উচিত বিরোধী দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আলোচনার পথ খুলে দেওয়া। আলোচনার পাশাপাশি সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্যও এটি জরুরি। রাজপথের জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি নয়, বরং সংসদে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হলে সেটিই সবার জন্য স্বস্তিদায়ক হবে। এ জন্য উভয় পক্ষকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দলীয় অবস্থানের ঊধর্ে্ব জাতীয় স্বার্থই এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে বিবেচ্য। জাতীয় স্বার্থে বড় সমস্যার আশু সমাধানই কাম্য।

No comments

Powered by Blogger.