গাজায় ইসরায়েলি হামলা-দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাচ্ছে

গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় গত পাঁচ দিনে অন্তত ৩৮ ফিলিস্তিনি মারা গেছে। বিপরীতে গাজা থেকে ছোড়া রকেটে মারা গেছে তিন ইসরায়েলি। এ কয়েক দিনে গাজা থেকে হামাস সদস্যদের ছোড়া প্রায় ৬০০ রকেটের জবাবে ইসরায়েল ১৮০টিরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে।


রকেট হামলার কারণে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তার জবাব দিতে ইসরায়েল হামাসের সদর দপ্তর গুঁড়িয়ে দেওয়া ছাড়াও জনবসতি লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েলের আগ্রাসী আচরণ দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে আবারও অলিক কল্পনা প্রমাণিত করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গত কয়েক দিনের বিমান হামলাকে ন্যায্যতা দিতে ইসরায়েল দাবি করছে, গাজার বিদ্রোহীদের রকেট হামলা থেকে 'আত্মরক্ষার' জন্যই তারা বোমা বর্ষণ করছে। অন্যতম মিত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে রকেট হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে গাজার বিদ্রোহীদের প্রতি। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিজ নিজ গা বাঁচিয়ে উভয় পক্ষকে সহনশীলতা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে নতুন করে এই এলাকায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে, তা চোখের আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের এক পক্ষের।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক সাময়িকী জেকোবিনে ম্যাক্স আজি নামের এক বিশ্লেষক বলেন, সর্বশেষ সংঘাতের জন্য হামাসকে দায়ী করার বিষয়টি নির্জলা মিথ্যা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো গাজা উপত্যকার গত ১০ নভেম্বরের পরের ঘটনাপ্রবাহ ফলাও করে প্রচার করছে। কিন্তু এর আগেই ইসরায়েলি বাহিনী উসকানিমূলক তৎপরতা চালিয়েছে। গত ৪ নভেম্বর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ফিলিস্তিনের মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে হত্যা করে অসন্তোষ তৈরি করে। ৮ নভেম্বর ফুটবল খেলতে গিয়ে ১৩ বছরের এক বালক আইডিএফের হাতে মারা পড়ে। দানাবেঁধে ওঠা ক্ষোভ থেকেই রকেট হামলা করে স্থানীয় বিদ্রোহীরা। জবাবে পুরোদস্তুর প্রস্তুতি নিয়ে অবরুদ্ধ গাজাবাসীর ওপর হামলে পড়ে ইসরায়েলি সেনারা। বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে ৭৫ হাজার রিজার্ভ সেনাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
রকেট হামলা বন্ধের কথা বলে এর আগেও গাজাকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চালিয়েছে ইসরায়েল। ২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২২ দিনের ইসরায়েলি হামলায় এক হাজার ৪০০ বেসামরিক ফিলিস্তিনি মারা যায়। অপারেশন 'কাস্ট লিড' নামের ওই অভিযান সম্পর্কে ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র মার্ক রেজেভ বলেন, 'বেসামরিক লোকদের বাঁচিয়ে শুধু শত্রুদের লক্ষ্যে পরিণত করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছি।' আর এবারের অপারেশন 'পিলার অব ডিফেন্স' সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমি আপনাদের জিজ্ঞেস করতে চাই- নিজেদের জনগণকে লক্ষ্য করে দিনের পর দিন হামলা হলে কী করা উচিত আপনাদের?' অথচ অপারেশন কাস্ট লিডে প্রতি ৪০০ ফিলিস্তিনি হতাহতের তুলনায় ইসরায়েলি হতাহতের অনুপাত ছিল একজন।
ফিলিস্তিনপন্থী বিশ্লেষকরা জানান, গত ৬০ বছর ধরেই ফিলিস্তিনের ব্যাপারে ইসরায়েল 'আগে হামলা, পরে অশ্রুপাত' নীতিতে চলছে। ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় যদিও তারা দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের কথা বলছে, কিন্তু এ ধরনের সমাধান বাস্তবায়নের জন্য তারা কোনো ধরনের ছাড় দিতেই প্রস্তুত নয়। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগের সীমানা নিয়ে সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ের দাবি নিয়ে এ মাসের শেষের দিকে জাতিসংঘে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলের এ হামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না, সে ব্যাপারে গভীর সন্দেহ তৈরি করেছে। সূত্র : আলজাজিরা।

No comments

Powered by Blogger.