বান্দরবানে শেখ হাসিনা-ধর্মীয় উসকানি দিয়ে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা জনগণ রুখবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমরা সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সব ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করেছি। কাজেই ধর্মীয় উসকানি দিয়ে বিভেদ সৃষ্টির জন্য যত অপচেষ্টাই করা হোক, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বলীয়ান বাংলার মানুষ তা রুখে দেবে।' গতকাল শনিবার বান্দরবানে এক জনসভায় তিনি সম্প্রতি রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলার ঘটনা স্মরণ করে এ কথা বলেন।


শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে ২০২১ সালে বিশ্বের অন্যতম প্রধান মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর আজকের শিক্ষিত ভোটাররা আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাবে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বাংলার সচেতন মানুষ ইতিমধ্যে সব পক্ষকে চিনে ফেলেছে। কাজেই অপপ্রচার আর ষড়যন্ত্র করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই।
বান্দরবান রাজার মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ এই সমাবেশের আয়োজন করে। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর বান্দরবানে এটি তাঁর প্রথম সফর। বান্দরবানে তাঁর বিশাল জনসমাবেশটি অনেকটা নির্বাচনী জনসভায় রূপ নেয়। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী রুমা ও থানচি উপজেলা সফর করেন। সেখানে তিনি সাঙ্গু নদীর ওপর নির্মাণ সম্পন্ন দুটি সেতুর উদ্বোধন করেন এবং সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। তিনি রুমা কলেজ সংস্কারের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতাভুক্ত এবং থানচি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের ঘোষণা দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা ক্ষমতায় এলে কৃষি, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, চিকিৎসা, নারী ও শিশুর অধিকার, সর্বজনীন মানবাধিকার, শিল্প, সংস্কৃতি সব খাতে একে একে উন্নতি ঘটতে থাকে। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে অরাজকতা, নৈরাজ্য, খুন, অপহরণ এবং সম্পদ লুটের ঘটনা ঘটে। গত চার বছরে আমরা চার লাখ লোকের চাকরি দিয়েছি। কর্মসংস্থান করেছি আরো ৫৮ লাখ যুবকের। এরাই ২০২১ সালে বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছি। আমরা মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজিত দুই যুগের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি করেছি।' শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সমাধান প্রক্রিয়া চলছে। অবশিষ্ট বিষয়গুলো শিগগির নিষ্পত্তি করা হবে।' তিনি বলেন, '১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে এক বছরের মাথায় আমরা শান্তিচুক্তি করেছি। অস্ত্রের হাতকে কর্মীর হাতিয়ারে পরিণত করে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি করেছি। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিয়েছি। এখন ইন্টারনেট আর ব্রডব্যান্ড সংযোজন করে এ অঞ্চলের মানুষকে আরো একধাপ এগিয়ে দিয়েছি। পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য আরো ১০টি বিভাগ জেলা পরিষদে হস্তান্তর করা হয়েছে।'
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পর্যটন মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর এমপি এবং চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী বক্তব্য দেন।
বান্দরবান হবে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র
থানচি সেতু উদ্বোধনকালে শেখ হাসিনা বলেন, বান্দরবানকে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। থানচি সেতু বান্দরবানের সাতটি থানাকে একত্র করেছে। এর ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নতি ঘটেছে। এতে এই অঞ্চলের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে। শেখ হাসিনা বলেন, অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান শহর বরাবরই অবহেলিত ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম বছরেই থানচি সেতুর নির্মাণ শুরু হয়। সেনাবাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে সেতুটি দ্রুত নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে।
থানচি উচ্চ বিদ্যালয়কে শিগগির সরকারি করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য অচিরেই রাঙামাটিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং বান্দরবানের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ স্থাপন করা হবে। স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত থানচি সেতু বিচ্ছিন্ন বান্দরবানের সাতটি জনপদকে একত্র করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বান্দরবান-থানচি সড়কের কাফ্রুপাড়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত দেশের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত অবকাশকেন্দ্র নীলগিরিতে স্থানীয় আদিবাসী শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।

No comments

Powered by Blogger.