অধিকার আদায়ের প্রতীক মালালা

পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার ১৫ বছর বয়সী মেয়ে মালালা ইউসুফজাই। শিক্ষা গ্রহণে শত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি এক কিশোরী সে। তালেবানের হামলার ঘটনা তাকে বিশ্ব দরবারে তুলে এনেছে। এখন মালালা বিশ্বের সব কন্যাশিশুর শিক্ষার অধিকারের প্রতীক। ১০ নভেম্বর সারাবিশ্বে পালিত হলো 'মালালা দিবস'। মালালার স্বপ্নের প্রতি একাত্মতা আমাদের দেশেও।


তাকে নিয়ে দেশের বিশিষ্টজনদের ভাবনার কথা
তুলে ধরছেন আ হ ম ফয়সল
আয়েশা খানম
সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
আমাদের দেশে নারীশিক্ষা আন্দোলন শুরু করেছেন বেগম রোকেয়া। পাকিস্তানে মালালা সাহসের পরিচয় দিয়েছে। তার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মালালা ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। আমাদের দেশে মালালার কথা বলতে হলে আগে স্কুলে মেয়েদের ঝরে পড়া বন্ধ করতে হবে, তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। মেয়েরা যাতে লেখাপড়া করতে পারে সে জন্য তাদের সাহস দিতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশে কোটি কোটি মালালা তৈরি হবে। কেবল মালালা দিবস ঘোষণা করলে বা পালন করলে হবে না, যারা মালালার বিরোধিতা করেছে; জাতিসংঘ তাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নিয়েছে সেটি দেখার বিষয়। জঙ্গিবাদ বন্ধে জাতিসংঘ কী কাজ করছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ।
রাশেদা কে. চৌধুরী
নির্বাহী প্রধান, গণসাক্ষরতা অভিযান
পাকিস্তানের ৩০ লাখ কন্যাশিশু স্কুলে লেখাপড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। মালালা তাদের এই অধিকার বাস্তবায়নের প্রতীক। গণমাধ্যম মালালাকে তুলে ধরেছে বলে বিশ্ব তাকে জেনেছে। এখন তাকে দেখে শিক্ষানুরাগীরা একত্রিত হয়েছেন। আমাদের দেশে মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে সুন্দর নীতিমালা রয়েছে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা রয়েছে, জঙ্গি প্রতিবন্ধকতা নেই তবে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ছেলেদের থেকে শতকরা ১১ ভাগ মেয়ে বেশি লেখাপড়া করছে। কিন্তু দশম শ্রেণীতে উঠলে ছেলেদের থেকে শতকরা ১১ ভাগ মেয়ে কমে যাচ্ছে। যার পেছনে রয়েছে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, অসচেতনতা, বিনিয়োগের অভাব। দেশে এখনও ১৫ বছর বয়সে ৬০ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। মালালা মেয়েদের শিক্ষার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। মালালা দিবসটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। মালালা আমাদের জন্য হাতিয়ার।
জাহেদা আহমদ
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমাদের দেশেও নারীরা অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করতে গিয়ে হিংস্রতার শিকার হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে মালালা প্রতীক হয়ে উঠেছে। আমরা তাকে সমর্থন জানাই, অভিবাদন জানাই। নারীরা সুবিধাবঞ্চিত, বিশেষ করে মুসলিম সমাজে নারীশিক্ষা অধিকারের ক্ষেত্রে। নারীদের মালালার পথ ধরে হাঁটতে হবে, কোন নারী যেন শিক্ষা অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়। মালালা দিবসটি আমাদের দেশেও পালন করতে হবে। মালালার ঘটনা শুনে নতুন প্রজন্ম শিখবে। নারীশিক্ষা সম্প্রসারণে ব্যাপক প্রচারে জন্য সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতি বছর মালালা দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে সমঅধিকারের ক্ষেত্রে মালালার কথা আমাদের স্মরণ রাখতে হবে।
ড. সাদেকা হালিম
সদস্য, তথ্য কমিশন বাংলাদেশ
ব্যক্তিগতভাবে আমি মালালাকে অভিনন্দন জানাই। মালালা পাকিস্তানের দুর্গম, জঙ্গি ও তালেবানের একটি এলাকায় থেকেও সনাতনী জীবন যাপন থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছে। সে শুধু নিজের জন্য নয়, সমষ্টিগতভাবে নারীশিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রেখেছে। তার ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয় হলেও আমি নিজে পাকিস্তান গিয়ে দেখেছি, সেখানে নারীকে মূল্যায়ন করা হয় না। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশ অনেকটা এগিয়ে। তার পেছনে কাজ করেছে আমাদের দেশের বেসরকারি সংগঠনগুলো। আমাদের দেশেও মালালা দিবসটি পালন করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে মালালার প্রতিবাদের ভাষা ছড়িয়ে দিতে হবে, যা থেকে অন্যরা শিক্ষা নেবে। স্কুলের শিক্ষকরা এ দায়িত্বটি পালন করতে পারেন। পাশাপাশি মিডিয়াগুলোও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। হ

No comments

Powered by Blogger.