পিলখানা ট্র্যাজেডি-সাজা ভোগকারীরা নজরদারিতে-আজ সেই ভয়াল ২৫ ফেব্রুয়ারি by ওমর ফারুক

সেই ভয়াল ২৫ ফেব্রুয়ারি আজ। ২০০৯ সালের এই দিনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (তৎকালীন বিডিআর) সদর দপ্তরে বিদ্রোহীদের বুলেট কেড়ে নিয়েছিল ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনের প্রাণ। আকস্মিক এই ঘটনার শোকে স্তম্ভিত হয়েছিল সারা দেশ। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় বনানী কবরস্থানে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সকাল সাড়ে ১১টায় পিলখানায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।


আসামিদের সাজা শেষেও গোয়েন্দা নজরদারি বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা শেষে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর গোয়েন্দা নজরদারির জন্য বিজিবির তরফ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যারা সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর কারাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাজার মেয়াদসহ সাজাপ্রাপ্তদের তালিকা পাঠানো হচ্ছে।'
বিডিআর সূত্র জানায়, সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকে ইতিমধ্যে সাজার মেয়াদ শেষে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন।
যাঁরা কম দিনের সাজা পেয়েছেন তাঁদের অনেকেই এখন বেরিয়ে যাওয়ার পক্রিয়ায় রয়েছেন। তাঁরা কারাগার থেকে বেরিয়ে কী করছেন তার খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
বিজিবির এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, সাজাপ্রাপ্তরা অস্ত্র চালানোয় প্রশিক্ষিত। সাজা ভোগের কারণে মনস্তাত্তি্বক করণেই তাঁদের মনে প্রতিশোধ প্রবণতা কাজ করবে। এ ছাড়া কোনো অপরাধী চক্র তাদেরকে দলভুক্ত করার চেষ্টাও করতে পারে। এবং সে দলে যোগ দিয়ে তাঁরা অপরাধী চক্রকে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। এ কারণে মুক্তি-পরবর্তী সব আসামির কর্মকাণ্ডের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, এসব জওয়ানকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা জঙ্গিরা টার্গেট করতে পারে। দলে কাউকে নিতে পারলে সহজেই প্রশিক্ষকও পেয়ে যাবে তারা। এ ছাড়া বিদ্রোহের ঘটনায় যেহেতু তাঁরা শাস্তি পেয়েছেন, ফলে তাঁদের মনে জেদও কাজ করতে পারে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই তাঁদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখা জরুরি।'
বিজিবি সূত্র জানায়, বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় ছয় হাজার ৫২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার বাইরের ব্যাটালিয়নগুলোতে রয়েছে এক হাজার ৯৫৪ জন। তাঁদের মধ্যে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৬৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁদের সাজার মেয়াদ চার মাস থেকে এক বছরের মধ্যে। পঞ্চগড়ের ২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের রায় ঘোষণা করা হয়েছে আট মাস আগে। সেখানে যাঁরা চার মাসের সাজা পেয়েছেন, তাঁরা এরই মধ্যে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন। ঢাকার বাইরের কয়েকটি ব্যাটালিয়নের রায় হওয়ার পর পাঁচ-ছয় মাস পেরিয়েও গেছে।
মামলা ও বিচার : বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নিউ মার্কেট থানায় হত্যা, অগি্নসংযোগ, লুটপাট, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। একই থানায় বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। দুটি মামলারই চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে দুটি মামলার অধিকতর তদন্ত চলছে। পাশাপাশি বিডিআরের নিজস্ব আইনে বিদ্রোহে অংশ নেওয়া দেশের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নগুলোর জড়িত ছয় হাজার ৫২ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়। এরই মধ্যে ৫৮টি ইউনিটের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৭টি ইউনিটের বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এতে এক হাজার ৬৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বিডিআর আইনে বিদ্রোহের শাস্তি ছিল সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড। এই সর্বোচ্চ শাস্তি পেয়েছেন ১৭৭ জন। বর্তমানে ৩০টি ব্যাটালিয়নের বিচার কার্যক্রম চলছে। বিজিবি আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি করা হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।
অন্যদিকে নিউ মার্কেট থানায় দায়ের করা মামলার বিচার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশের মাঠে তৈরি করা ভবনের স্থাপিত আদালতে। আদালত মামলার অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্র মতে, নতুন করে আগে বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ৭০-৮০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় অন্তর্ভুক্তির মতো অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখন তা যাচাই-বাছাই চলছে।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কলের কণ্ঠকে জানান, ৫০ জনের মতো আসামি নতুন করে যোগ হতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে। এর আগে সিআইডি ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল, তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। ওই চার্জশিটে বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ২৩ জন সাধারণ নাগরিকও রয়েছেন। আসামিদের মধ্যে ২১ জন পলাতক।
নাম পরিবর্তন : বিডিআর বিদ্রোহে বাহিনীর নাম কলংকিত হওয়ায় সেটি পরিবর্তন করে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড করা হয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পিলখানায় বিজিবির নিজস্ব পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে নতুন নাম নিয়ে এই বাহিনী যাত্রা শুরু করেছে। বিজিবি মহাপরিচালক জানিয়েছেন, কুখ্যাত ১৩, ২৪, ৩৬ ও ৪৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন অবলুপ্ত করা হবে।
বিডিআর সূত্র জানায়, বিডিআর বিদ্রোহ মামলার বিচার কার্যক্রম শেষে এই চারটি ব্যাটালিয়নকে বিলুপ্ত করা হবে

No comments

Powered by Blogger.