স্পিন দিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বধ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৪৭.৩ ওভারে ২২২, দক্ষিণ আফ্রিকা : ৪২.৫ ওভারে ২২৩/৩, ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে জয়ী

একটা সময় ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকান দলে একজনও স্পিনার সুযোগ পেতেন না। সেই দক্ষিণ আফ্রিকা কাল দিলি্লর ফিরোজ শাহ কোটলায় মাঠে নামল তিনজন স্পেশালিস্ট স্পিনার নিয়ে। টসের আগেই এই বিস্ময়, টস জেতার পর অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ দিলেন আরেক বিস্ময়। প্রথম ওভারেই ঝকঝকে নতুন বল তুলে দিলেন সেই তিনজনের একজন ইয়োহান বোথাকে।


ক্রিস গেইল বোধহয় ঠিক প্রস্তুত ছিলেন না এ জন্য, স্টেইন-মরকেলদের গতিঝড়ের পরিবর্তে বোথার ঘূর্ণির সঙ্গে ঠিক মানিয়ে নেওয়ার আগেই তিনি আউট!
দিনের তৃতীয় বলেই স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়ে দলের সবচেয়ে বড় তারকার বিদায়েই আভাসটা ছিল। বদলে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা, আর গত কিছুদিনের অসহায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেনা রূপটাই যেন ফুটে উঠেছিল ওই বলে। ডেভন স্মিথ আর ব্র্যাভো ভাইদের লড়াই সত্ত্বেও সেই চেহারাটা আর বদলাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ_দক্ষিণ আফ্রিকান স্পিনারদের সামনে একের পর এক উইকেট হারিয়ে ১৫ বল বাকি থাকতেই তারা অলআউট। ২২২ রানের অতি সাধারণ পুঁজি নিয়ে আর লড়াই করতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলাররাও। এই বিশ্বকাপের প্রথম 'বড়' ম্যাচটা তাই ঠিক বড় ম্যাচের চেহারা নিতে পারেনি, এবি ডিভিলিয়ার্সের সেঞ্চুরিতে ৭.১ ওভার হাতে রেখেই ৭ উইকেটের সহজ জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
শুরুটা বোথার হাত ধরে হলেও অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার তিন স্পিনারের মধ্যে সেরা পারফরম্যান্স তাঁর নয় মোটেই! স্বপ্নের বিশ্বকাপে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমে স্বপ্নের মতোই অভিষেক হয়েছে পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া লেগস্পিনার ইমরান তাহিরের_ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই ৪১ রান দিয়ে চার উইকেট শিকার করেছেন এ তরুণ।
তবে তাঁর গল্পটা শুরু হয়েছে একটু পরে। তার আগে খানিকটা প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের 'নতুন লারা' ড্যারেন ব্র্যাভো, ডেভন স্মিথকে (৩৬) নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ১১১ রানের জুটি গড়ে ঘুরে দাঁড়ানোরই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। ৮২ বলে আটটি বাউন্ডারি আর একটি ছক্কায় সাজানো তাঁর ৭৩ রানের ইনিংসটা শেষ করে দিয়ে প্রোটিয়াদের দ্বিতীয়বারও ম্যাচে ফিরিয়েছেন সেই বোথা। এরপরই শুরু তাহিরের কীর্তি। যতবারই জুটি গড়ার আভাস দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা, তাহির ভেঙে দিয়েছেন সেটা। আর শেষ দিকে ফিরে স্টেইন (৩/২৪) সাফল্যের সঙ্গে মুড়ে দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ইনিংসের লেজটুকু।
জবাব দিতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরাও একই কৌশল প্রয়োগ করেছেন। নিজের তৃতীয় ওভারে জ্যাক ক্যালিসকে ফিরিয়েও দিয়েছেন, কিন্তু ঠিক বোথা হয়ে উঠতে পারেননি সুলেমান বেন। ২০ রানে প্রথম দুই উইকেট হারানোর পরও তাই কখনোই মনে হয়নি চাপে আছে স্মিথের দল। তৃতীয় উইকেটে স্মিথ (৪৫) আর ডিভিলিয়ার্সের ১১৯ রানের জুটিতেই তাই সব শেষ। শেষ দিকে বৃষ্টিতে কিছু সময়ের জন্য থেমে গিয়েছিল খেলা, কিন্তু 'নতুন' দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভয় দেখাতে পারেনি সেটা, কারণ তখন ওভারপ্রতি ২ রান করে মাত্র ২৪ রানের প্রয়োজন ছিল তাদের। বৃষ্টি শেষে মাঠে ফিরে সে রানটুকু তুলে নেওয়ার পথে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম আর ক্যারিয়ারে নবম সেঞ্চুরিটাও করেছেন ডিভিলিয়ার্স। দুটি ছক্কা আর আটটি বাউন্ডারিতে ১০৫ বলে ১০৭ রান তুলে অপরাজিত ছিলেন এ আসরে উইকেটকিপারের বাড়তি দায়িত্ব পাওয়া এ ডানহাতি।

দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্কোরকার্ড
টস : দক্ষিণ আফ্রিকা
ওয়েস্ট ইন্ডিজ রান বল ৪ ৬
গেইল ক ক্যালিস ব বোথা ২ ৩ ০ ০
স্মিথ ক এন্ড ব তাহির ৩৬ ৫৭ ৩ ০
ড্যা.ব্রাভো এলবিডবি্লউ বোথা ৭৩ ৮২ ৮ ১
সারওয়ান এলবিডবি্লউ তাহির ২ ১০ ০ ০
চন্দরপল ক পিটারসন ব তাহির ৩১ ৫১ ১ ১
ডো.ব্রাভো রান আউট ৪০ ৩৭ ১ ৩
থমাস ক ডুমিনি ব তাহির ১৫ ২৬ ১ ০
পোলার্ড এলবিডব্লউ স্টেইন ০ ১ ০ ০
স্যামি এলবিডব্লউ স্টেইন ০ ৪ ০ ০
বেন ক মরকেল ব স্টেইন ৬ ৮ ১ ০
রোচ অপরাজিত ২ ৬ ০ ০
অতিরিক্ত (বা-১, লেবা-৩, ও-১১) ১৫

মোট : (৪৭.৩ ওভার, অলআউট) ২২২
উইকেট পতন : ১/২, ২/১১৩ , ৩/১১৭, ৪/১২০, ৫/১৭৮, ৬/২০৯, ৭/২১৩, ৮/২১৩, ৯/২১৩ ।
বোলিং : বোথা ৯-০-৪৮-২, স্টেইন ৭.৩-১-২৪-৩, মরকেল ৮-০-৩৫-০, ক্যালিস ৩-০-২১-০, তাহির ১০-১-৪১-৪, পিটারসন ১০-০-৪৯-০।

দক্ষিণ আফ্রিকা রান বল ৪ ৬
দক্ষিণ আফ্রিকা রান বল ৪ ৬
আমলা ক থমাস ব রোচ ১৪ ১৫ ২ ০
স্মিথ বোল্ড পোলার্ড ৪৫ ৭৮ ২ ০
ক্যালিস ক স্যামি ব বেন ৪ ৭ ০ ০
ভিলিয়ার্স অপরাজিত ১০৭ ১০৫ ৮ ২
ডুমিনি অপরাজিত ৪২ ৫৩ ১ ০
অতিরিক্ত (লেবা-১০,নো-১) ১১

মোট : (৪২.৫ ওভার, ৩ উইকেট) ২২৩
উইকেট পতন : ১/১৫, ২/২০, ৩/১৩৯।
বোলিং : বেন ১০-০-৫১-১ , রোচ ৮-০-৪২-১ , ডো.ব্রাভো ২.১-০-১২-০ , স্যামি ৮-০-৪-০ , পোলার্ড ৭.৫-০-৩৭-১, গেইল ৬-০-২৬-০, স্মিথ ০.৫-০-৫-০।
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা সাত উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : এবি ডি ভিলিয়ার্স

No comments

Powered by Blogger.