গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্মরণীয় নাম by তন্ময় হক

১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। চলছে অবরোধ কর্মসূচি। ১০ নভেম্বর ঢাকায় স্বৈরাচারবিরোধী এক মিছিলের আয়োজন করা হয়। ২৬ বছরের তরুণ নূর হোসেন সেই প্রতিবাদ মিছিলের একজন।


স্বৈরাচারবিরোধী প্রতিবাদী মিছিলে তিনি নিজেকে হাজির করেন ভিন্নভাবে। বুকে সাদা রঙে লিখিয়ে নেন 'স্বৈরাচার নিপাত যাক'। পিঠে লেখা 'গণতন্ত্র মুক্তি পাক'। স্বৈরাচারবিরোধী সেই মিছিল স্লোগানে স্লোগানে এগিয়ে যাচ্ছিল। ঢাকা জিপিওর সামনে জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি পেঁৗছতেই স্বৈরশাসকের মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনীর গুলিতে রাজপথে লুটিয়ে পড়েন নূর হোসেন। নিহত হন নূর হোসেন। কিন্তু তার এই মৃত্যু স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে আরও ত্বরান্বিত করে। ২৬ বছরের তরুণ নূর হোসেন হয়ে ওঠেন স্বৈরাচারবিরোধী জোরদার আন্দোলনের প্রতীক। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে ১০ নভেম্বর গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্মরণীয় নাম নূর হোসেন।
নূর হোসেন ১৯৬১ সালে ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিল অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল। বাবা মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন অটোরিকশাচালক। পরিবারের অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার জন্যই অষ্টম শ্রেণীর পর আর পড়ালেখা করেননি। তারপর বাবার পেশার দিকেই মনোযোগ ছিল। সেজন্য মোটরচালক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। নূর হোসেনের মায়ের নাম মরিয়ম বিবি। পড়ালেখা খুব বেশিদূর করতে না পারলেও নূর হোসেন রাজনীতিসচেতন ছিলেন। সেজন্যই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি যোগ দিয়েছিলেন।
নূর হোসেন যে স্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেই জিরো পয়েন্টের নামকরণ করা হয়েছে নূর হোসেন স্কয়ার হিসেবে। গণতান্ত্রিক যে কোনো আন্দোলনের জন্য তিনি এক অনুপ্রেরণার নাম। নূর হোসেন বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

No comments

Powered by Blogger.