র‌্যাবের উচিত মামলা প্রত্যাহার করা- লিমনকে রেহাই দিন

র‌্যাব সদস্যের গুলিতে এক পা হারানো তরুণ লিমন হোসেনের পরিবারের বিরুদ্ধে ইব্রাহিম হাওলাদার নামে র‌্যাবের সোর্স হিসেবে পরিচিত এক ব্যক্তির দায়ের করা একটি হত্যামামলা যে ভিত্তিহীন, সেটা মামলা দায়েরের সময়েই স্পষ্ট ছিল। গত বৃহস্পতিবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগের কোনো ভিত্তি না পেয়ে লিমনের পরিবারকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করায় এটুকু আশা জাগল যে পরিবারটি একটা বাড়তি ভোগান্তি থেকে নিষ্কৃতি পেতে যাচ্ছে।


কিন্তু লিমনের পরিবারের দীর্ঘতর দুর্ভোগের আসল কারণ যথাস্থানে রয়ে গেছে। ২০১১ সালের ২৩ মার্চ ১৬ বছরের লিমন র‌্যাবের কয়েকজন সদস্যের নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হয়; তার বাঁ পায়ে গুলি করা হয়। তার মা হেনোয়ারা বেগম র‌্যাবের ছয় সদস্যকে আসামি করে একটি মামলা করেন, উল্টো দিকে র‌্যাব লিমনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে। অভিযোগ, লিমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ‘সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়েছে’ এবং সে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রধারী।
র‌্যাবের হাতে লিমনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় সারা দেশে প্রতিবাদ হয়েছে। লিমনের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি প্রবল হয়ে উঠেছে। কিন্তু উল্টো ভিত্তিহীন অভিযোগে র‌্যাবের দায়ের করা মামলায় তার ও তার দরিদ্র পরিবারের পেরেশানির শেষ নেই। র‌্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, লিমন সন্ত্রাসী। কিন্তু লিমনের গ্রামবাসী, তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক-সহপাঠীসহ পরিচিত সবাই বলেছে, লিমন নিরীহ ছেলে। লিমন সন্ত্রাসী, না নিরীহ-নির্দোষ, এই তর্কে চাপা পড়ে গেছে এই সত্য যে কোনো সন্ত্রাসীকেও গুলি করার অধিকার র‌্যাব বা অন্য কোনো বাহিনীর নেই।
লিমনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা র‌্যাব এবং এ দেশের আইন প্রয়োগ ব্যবস্থার ভাবমূর্তির জন্য যেমন ক্ষতিকর হয়েছে, তেমনটি আগে কখনো ঘটেছে বলে আমাদের মনে পড়ে না। র‌্যাবের জন্য লিমনের একটি পা যেন কয়েক শ ‘ক্রসফায়ারে মৃত্যু’র চেয়ে বেশি বিব্রতকর সত্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। র‌্যাবের পক্ষে তাকে সন্ত্রাসী ও অবৈধ অস্ত্রধারী প্রমাণ সম্ভব হলে র‌্যাবের গুলি করার ন্যায্যতা প্রতিপন্ন হতে পারে—এই ভরসাতেই হয়তো তার বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা দুটো চালানো হচ্ছে।
সর্বশেষ, গত মাসের শেষ দিকে লিমনের পরিবারকে এমন একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যে র‌্যাবের বিরুদ্ধে তারা যেন মামলা প্রত্যাহার করে। বিনিময়ে লিমনের বিরুদ্ধে র‌্যাবের দায়ের করা মামলা দুটো থেকে তার অব্যাহতি বা ক্ষমার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু লিমনের পরিবার তাতে রাজি হয়নি। কারণটা সংগত এবং উচ্চমাত্রায় নৈতিক। র‌্যাব লিমনকে গুলি করেছে—লিমনের মা এই অন্যায়ের আইনি প্রতিকার চান। ন্যায়বিচারের প্রশ্নে আপস-মীমাংসার সুযোগ থাকতে পারে না; বরং র‌্যাবের শীর্ষ মহলের এই শুভ বোধের উদ্রেক হওয়া জরুরি যে লিমনের বিরুদ্ধে র‌্যাবের দায়ের করা ভিত্তিহীন মামলা দুটো প্রত্যাহার করে সত্য ও ন্যায়বিচারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা কর্তব্য।

No comments

Powered by Blogger.