একটি অস্ত্রোপচার ও ১৭ জাতের ওষুধ আত্মসাৎ

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন রাজশাহী নগরীর দড়িখরবোনা এলাকার আবুল কাশেম। গত ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচারের কথা ছিল। চিকিৎসাপত্রে লেখা ২০ ধরনের ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে না পারায় ওই দিন তাঁর অস্ত্রোপচার হয়নি।


অথচ ২০টির মধ্যে ১৭টি ওষুধই হাসপাতালের স্টোরে ছিল। কিন্তু ওই ওষুধ রোগীর নামে তুলে নিয়েছে সরবরাহ (ডেলিভারি) সংশ্লিষ্ট চক্র।
অভিযোগ পেয়ে রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে ওষুধ আত্মসাতের ঘটনা শনাক্ত করেন। ওষুধ সরবরাহ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ক্লিনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (সিএ) শহিদুল ইসলাম খান, ওয়ার্ড ইনচার্জ মামুনুর রশিদ ও জ্যেষ্ঠ ভাণ্ডাররক্ষক (স্টোরকিপার) এ বি এম মুনসুর রহমান। তাঁদের মধ্যে ঠিক কে বা কারা ওই ওষুধ তুলে নিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রোগীর অভিভাবকের দেওয়া তথ্য উল্লেখ করে দুই সংসদ সদস্য জানান, অস্ত্রোপচারের আগের দিন ২১ ফেব্রুয়ারি সিএ শহিদুল ইসলাম খান ২০ ধরনের ওষুধের একটি চিকিৎসাপত্র ধরিয়ে দেন রোগীর অভিভাবক আবদুল মোমিনের হাতে। এ সময় তাঁকে জানানো হয়, হাসপাতালে কোনো ওষুধ নেই। বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। এসব ওষুধের দাম প্রায় ১০ হাজার টাকা হওয়ায় তা কিনতে পারেননি মোমিন। এ কারণে আবুল কাশেমের অস্ত্রোপচার হয়নি। মোমিন বিষয়টি মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহাফুজুর রহমান লোটনকে জানান। তিনি গত বুধবার চিকিৎসাপত্র নিয়ে হাসপাতালের স্টোরে যান। তখন স্টোরকিপার এ বি এম মুনসুর রহমান তাঁকে জানান, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ওই রোগীর নামে স্টোরে থাকা ১৭ ধরনের ওষুধ তুলে নেওয়া হয়েছে। ওষুধ নিয়ে যাওয়ার একটি নথিও তিনি লোটনকে দেখান। কিন্তু কে নিয়েছে, সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
বিষয়টি নিয়ে লোটন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর গতকাল সকালে ওষুধ সরবরাহের রিসিভ কপির ফটোকপি ও চিকিৎসাপত্র নিয়ে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেন দুই সংসদ সদস্য। তাঁদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার আশরাফুল আলম সিদ্দিকী ডেকে পাঠান অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান ডা. বি কে দাম, সিএ শহিদুল ইসলাম খান, ওয়ার্ড ইনচার্জ মামুনুর রশিদ ও স্টোরকিপার এ বি এম মুনসুর রহমানকে। তখন মুনসুর রহমান ওষুধ তোলার ঘটনা পরিচালক ও দুই সংসদ সদস্যকে জানান। শহিদুল ইসলাম খান বলেন, ওয়ার্ড ইনচার্জের কথামতোই ওষুধের চিকিৎসাপত্র লিখে দেওয়া হয়েছে। এর জবাবে ওয়ার্ড ইনচার্জ মামুনুর রশিদ বলেন, 'স্টোরে কী কী ওষুধ আছে, তার তালিকা ডাক্তারদের কাছেই থাকে। ওই ওষুধ কে নিয়ে এসেছে, তা আমি জানি না।' বিভাগীয় প্রধান ডা. বি কে দাম তখন শহিদুল ইসলাম খান ও মামুনুর রশিদের কর্মকাণ্ডের জন্য সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। এরপর হাসপাতাল থেকে আগের চিকিৎসাপত্র অনুযায়ী রোগী কাশেমকে ১৭ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। আজ শুক্রবার তাঁর অস্ত্রোপচারের দিন ধার্য করা হয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশরাফ আলম সিদ্দিকী বলেন, ঘটনাটি সত্যিই দুঃখজনক। এ ব্যাপারে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালের সব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.