রিপ্লেজ করতে হবে রাশিয়ার টেলিভিশনকে বাশার আল-আসাদ- একমাত্র ব্যালট বাক্সই আমার নিয়তি নির্ধারণ করতে পারে

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বলেছেন, তিনি কারও চাপে ক্ষমতা ছাড়বেন না। তিনি ক্ষমতায় থাকবেন কি না, সে ব্যাপারে জনগণই সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে একমাত্র ‘ব্যালট বাক্সই’ তাঁর নিয়তি নির্ধারণ করতে পারে। গতকাল শুক্রবার রাশিয়ার সরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আসাদ এসব কথা বলেন।


এদিকে সিরিয়ার সরকারবিরোধীদের তুরস্কভিত্তিক সংগঠন সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল (এসএনসি) বিরোধী সামরিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। পশ্চিমা ও উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো সিরিয়ার বিভিন্ন বিদ্রোহী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ফ্রি সিরিয়ান আর্মি (এফএসএ) নিয়ন্ত্রণকারী সামরিক পরিষদের প্রধান মুস্তাফা শেখ বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন অর্জনের বিষয়টি তাঁদের কাছে এই মুহূর্তে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে এফএসএকে পাঁচ ভাগে পৃথক করে সংগঠিত করা হচ্ছে। নেতা ও কর্মকর্তারা সাধারণ সেনাসদস্যদের কাছ থেকে দূরে সরে গেলে লক্ষ্য অর্জিত হবে না। ৭০ হাজার সেনা ও ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা সরকারের পক্ষ ত্যাগ করেছেন। তবে তাঁদের অর্ধেকই এখন কারাবন্দী রয়েছেন।
এদিকে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতাসহ এফএসএর কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বিদ্রোহীদের ঐক্যবদ্ধ করতে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে দেশটিতে যে শান্তিপূর্ণ গণবিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, ইসলামপন্থী জঙ্গিরা তার ফায়দা নিচ্ছে।
রাশিয়ার টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিরিয়ায় কোনো ধরনের ‘গৃহযুদ্ধ’ চলছে না উল্লেখ করে আসাদ বলেন, অভ্যন্তরীণ বিভক্তি মানেই গৃহযুদ্ধ নয়। বিদ্রোহীদের প্রতি বিদেশি সাহায্য অব্যাহত থাকলে বর্তমান সংকট আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। দেশের বাইরে থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, অর্থ সরবরাহের পাশাপাশি বিদ্রোহীদের রাজনৈতিক মদদ দেওয়া হচ্ছে। সিরিয়ার মতো ছোট একটি দেশের পক্ষে বিদেশি একাধিক শক্তির সঙ্গে লড়াইয়ে দ্রুত সমাপ্তি টানা সম্ভব নয়।
আসাদ আরও বলেন, তিনি ক্ষমতায় থাকবেন কি না, সে ব্যাপারে জনগণ ভোট দিতে পারেন। ভোটে যদি প্রমাণিত হয়, দেশবাসী তাঁকে চান না, তাহলে তিনি নিজেই সরে যাবেন।
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সমালোচনা করে আসাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী এরদোগান উসমানীয় সুলতানদের মতো আচরণ করছেন এবং নিজেকে তিনি একজন ‘খলিফা’ বলেই মনে করেন। তাঁর এ ধরনের মানসিকতাই আঙ্কারার সঙ্গে দামেস্কের সম্পর্কের অবনতির জন্য দায়ী।
সিরিয়ায় সাহায্য পাঠানোর ব্যাপারে জাতিসংঘের অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থা জেনেভায় বৈঠক করতে যাচ্ছে। জাপান গতকাল জানিয়েছে, সিরিয়ার বর্তমান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে টোকিওতে চলতি মাসেই একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২৬ সেনা কর্মকর্তার পক্ষত্যাগ: সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর দুই জেনারেলসহ ২৬ সেনা কর্মকর্তা সরকারপক্ষ ত্যাগ করে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছেন। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গতকাল এ কথা জানিয়েছে। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বাহিনী থেকে এটাই একযোগে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার পক্ষত্যাগের ঘটনা।
কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন: দুই জেনারেল, ১১ কর্নেল, দুই লেফটেন্যান্ট কর্নেল, দুই মেজর, চার ক্যাপ্টেন, পাঁচ লেফটেন্যান্ট। তাঁরা সপরিবারে গত বৃহস্পতিবার রাতভর সিরিয়া থেকে পালিয়ে চলে যান তুরস্কের সীমান্তবর্তী হাতায় প্রদেশে। তাঁদের সঙ্গে আরও কয়েকজন পদাতিক সেনাও তুরস্কে পালিয়ে যান। এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.