তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল-সাধারণ গ্রাহকদের কথা ভাবতে হবে

দেশে থ্রিজি বা তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তির বিপুল চাহিদা আছে। অনেক দিন ধরেই এ প্রযুক্তির জন্য অপেক্ষমাণ দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা। বিশেষত পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে থ্রিজি প্রযুক্তি চালু হওয়ার পর এদেশেও এর জন্য অপেক্ষা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত সরকারি মালিকানাধীন মোবাইল কোম্পানি টেলিটকের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো থ্রিজি প্রযুক্তি।


নানা বিপত্তি সত্ত্বেও থ্রিজি প্রযুক্তির আগমন প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে খুশির খবর বলেই বিবেচিত হচ্ছে। আশা করা যায়, খুব শিগগির বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে থ্রিজি সেবা দেশের সব মোবাইল ব্যবহারকারীর জন্য সুলভ হবে। টেলিটকের সেবা ব্যবস্থা নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে নানা অসন্তোষ থাকলেও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে থ্রিজি প্রযুক্তি বাজারজাতকরণে টেলিটকের অগ্রাধিকার সমর্থনযোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিদ্যমান বাজার ব্যবস্থায় স্থায়ীভাবে আকৃষ্ট করার মানসিকতা কি এ প্রতিষ্ঠানটি ধারণ করে? প্রথমেই থ্রিজি সেবাকে একটি মহার্ঘ বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ বাজারের নিয়মে এই সেবা সবার জন্য সুলভ করলে প্রতিষ্ঠানটি বাজারে একটি ইতিবাচক সাড়া ফেলতে পারত। অধিকসংখ্যক গ্রাহক ভালো সেবা পেলে টেলিটকেই স্থির থাকত। কিন্তু এ পর্যন্ত তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে, গ্রাহকরা থ্রিজি সেবার জন্য বেসরকারি অপারেটরদের অপেক্ষায় আছেন। পাশাপাশি, বিভিন্ন সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণেও টেলিটক সুবিবেচনার পরিচয় দিচ্ছে না। সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নয়নের অংশীদারিত্বে এ প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা থাকার কথা। আর তা করতে হলে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার দায়িত্ব তাদের। অথচ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বেসরকারি ওয়াইম্যাক্স কোম্পানিগুলোর চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি মূল্য ধার্য করেছে তারা। তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা যেখানে কমমূল্যে দ্রুতগতির সেবা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেখানে টেলিটকের উল্টোগতি সত্যিই দুঃখজনক। টেলিটকের দৃষ্টিভঙ্গি এমন হলে বেসরকারি মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাছে আরও সুলভ মূল্য আমরা কীভাবে প্রত্যাশা করব। দেশে ইন্টারনেট বিপ্লব সাধন করতে হলে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার মূল্য শিক্ষার্থীসহ নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে হবে। আর সেক্ষেত্রে মাসে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার প্যাকেজেই দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দেওয়া উচিত। এতে নতুন প্রযুক্তি যেমন জনপ্রিয় হবে, তেমনি বাজারও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সম্প্রসারিত হতে পারবে। এ ব্যবস্থা কার্যকর করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। আর এ উদ্যোগ কার্যকর করতে হবে টেলিটক থেকেই।

No comments

Powered by Blogger.