শুধু দুই শহরে গাদ্দাফির নিয়ন্ত্রণ by আলী ইমাম সুমন

লিবিয়ায় ১০ দিন ধরে চলমান বিক্ষোভের মুখে গাদ্দাফি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন বেশ কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি অনুযায়ী রাজধানী ত্রিপোলির একাংশ ও দক্ষিণাঞ্চলের সাভা শহর বাদে পুরো দেশ এখন গাদ্দাফির নিয়ন্ত্রণের বাইরে। গতকাল বৃহস্পতিবার টিভি ভাষণে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি চলমান এ বিক্ষোভের জন্য আল-কায়েদা ও এর নেতা ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করেছেন।


আর বিরোধীদের বিন লাদেনের অনুসারী আখ্যা দিয়েছেন।
লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির চারপাশে গাদ্দাফি-অনুগত সৈন্যরা ট্যাংক ও ভারী অস্ত্র নিয়ে কড়া পাহারায় থাকলেও রাজধানীর ৫০ কিলোমিটার দূরের একটি শহরে বিদ্রোহীরা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। গতকাল বিক্ষোভকারীরা ত্রিপোলির ৫০ কিলোমিটার দূরের জাওয়াইয়া শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিলে তা পুনরুদ্ধারে বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও গোলাবর্ষণ করে সেনাবাহিনী। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সেখানকার একটি মসজিদে এ হামলা চালানো হয়। হামলার ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা জানা যায়নি। গতকাল সকালে বিক্ষোভকারীরা দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর মিসরাতা দখলে নিয়ে বিজয় ঘোষণা করেছে। এ ছাড়াও তাবরুক নামের আরেকটি শহর নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তারা।
এর আগে গাদ্দাফিবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পূর্বাঞ্চলীয় শহর বেনগাজির বেশ কিছু সেনা ঘাঁটি থেকে সেনা ও পুলিশ বাহিনী বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ খবরে বেনগাজির বিভিন্ন এলাকায় আনন্দমিছিল করেছে বিদ্রোহীরা। 'ত্রিপোলির জন্য যুদ্ধ' ঘোষণা দিয়ে তারা নিয়ন্ত্রণে থাকা সেনা ঘাঁটি থেকে অস্ত্র লুট করে সংগঠিত হয়ে রাজধানীমুখী হচ্ছে। বিদ্রোহীরা গাদ্দাফি-সমর্থকদের সাফ জানিয়ে দিয়েছে, 'জয় অথবা মৃত্যু ছাড়া তারা আন্দোলন থেকে পিছপা হবে না।' তাদের এ আহ্বানে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি, দেশের মন্ত্রী-কূটনীতিক-সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা পদত্যাগ করে অন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন।
গতকাল গাদ্দাফির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন দেশের দুটি রণতরীর নাবিকরা। বেনগাজি শহরে হামলার জন্য ওই দুই রণতরীর কমান্ডারদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন গাদ্দাফি। তারা এ নির্দেশনা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। এ ছাড়া বেনগাজিতে বোমা ফেলতে অস্বীকৃতি জানান বিমানবাহিনীর পাইলটরা।
এদিকে বিদ্রোহীদের দমনে গত বুধবার গাদ্দাফির মুখপাত্র আবদুল্লাহ মেগরাহির কঠোর হুঁশিয়ারি, দমন-নিপীড়ন, চোরাগোপ্তা হামলা ও রক্তপাতের ঘটনায় প্রথমবারের মতো নিন্দা জানিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বুধবার টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি ক্ষমতাসীনদের দমন-পীড়ন নীতিকে 'নিষ্ঠুর ও অগ্রহণযোগ্য' আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক নিয়মের পরিপন্থী ও সাধারণ শিষ্টাচারবহির্ভূত। এ সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তিনি সহিংস ঘটনায় হস্তক্ষেপে তাঁর দেশের জাতীয় নিরাপত্তাদলকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে পুরো বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের দেশে গাদ্দাফির মালিকানাধীন সম্পদসহ লিবিয়ার যাবতীয় সম্পদ জব্দ করেছে। এ ছাড়া আমেরিকার কয়েকজন আইনপ্রণেতা লিবিয়ার বিরুদ্ধে বিমান উড্ডয়নমুক্ত এলাকাসহ সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে লিবিয়ায় আন্দোলনকারীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়নের তীব্র নিন্দা জানায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, অবিলম্বে লিবিয়া সরকারকে সহিংসতা বন্ধ করে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সহিংস আচরণ, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি সম্মান জানাতে হবে।
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা জানান, যদি প্রয়োজন হয়_লিবিয়ার ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে ইইউ প্রস্তুত।
গাদ্দাফি সরকারের দমন-নিপীড়ন ও কড়া সামরিক পাহারার কারণে রাজধানী ত্রিপোলি থেকে বিরোধীপক্ষ সরে যাওয়ায় পুরো রাজধানী এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গতকালও রাস্তাঘাট ছিল জনশূন্য। দোকানপাটসহ সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। মাঝেমধ্যে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সেনাবাহিনীর একাংশ নির্দেশনা অমান্য করে রাস্তায় নেমেছে।
এ অবস্থায় বুধবার থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ব্রিটেন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ বিমান ও জাহাজ পাঠিয়ে তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছে।

No comments

Powered by Blogger.