ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডি-দুর্যোগ মোকাবেলায় চাই বৈশ্বিক ঐক্য

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের ১৩টি রাজ্য ও কানাডায় আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডির সৃষ্ট বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে এই বেদনাদায়ক বার্তা স্পষ্ট হয়েছে যে, প্রকৃতির রুদ্ররোষ থেকে আমরা কেউই নিরাপদ নই।


গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে যেমন সিডর, আইলা; তেমনই যুক্তরাষ্ট্রেও একের পর এক আঘাত হেনেছে ক্যাটরিনা, রিটা ও আইরিনের মতো প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়। সর্বশেষ স্যান্ডির অভিঘাত ও ক্ষয়ক্ষতি সাম্প্রতিককালের সব রেকর্ড ভাঙতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়ের পরম্পরাও। অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই একটি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনেছিল। আবার শেষ সপ্তাহে আমেরিকান উপকূলে স্যান্ডির আগমন। সেই অভিঘাত শেষ হতে না হতেই ভারতে হাজির হয়েছে নিলম। কেবল বাংলাদেশ, ভারত বা যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের বিভিন্ন উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও শক্তি বেড়ে যাওয়ার এসব নজির জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আমাদের। তারা বারবারই বলে এসেছেন যে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে এ ধরনের ঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়তেই থাকবে। মেরু ও পার্বত্যাঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে স্থায়ীভাবে তলিয়ে যেতে পারে উপকূলীয় বিস্তীর্ণ অঞ্চল। খাদ্য, স্বাস্থ্য ও বসতি ঝুঁকিও কম নয়। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলার মূল সূত্র গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে একটি বৈশ্বিক চুক্তি সম্ভবপরই হয়ে উঠছে না। স্যান্ডিতে আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রই এর প্রধান প্রতিবন্ধক। প্রবৃদ্ধির দোহাই দিয়ে দেশটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক একটি চুক্তি স্বাক্ষরে রাজি হচ্ছে না। ওয়াশিংটনের মতো প্রভাবশালী পক্ষের অনীহার কারণেই কিন্তু কোপেনহেগেন, কানকুন ও ডারবানের বিশ্ব জলবায়ু সন্মেলন সফল হতে পারেনি। এ ধরনের অবস্থান যে যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রভাবশালী রাষ্ট্রের জন্যও আত্মঘাতী_ বিভিন্ন নামে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের কাছে বারবার দেশটির উপকূল অসহায় হয়ে পড়ার মধ্য দিয়েই তা প্রমাণ হচ্ছে। আমরা আশা করব, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা সাধারণ নাগরিকের জীবন ও সম্পদহানি আমলে নিয়ে একটি আইনগত বাধ্যতামূলক বৈশ্বিক উদ্যোগের ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করবেন। আমরা জানি, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহেই কাতারের রাজধানী দোহায় বসছে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ১৮তম বৈশ্বিক সম্মেলন। বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি বিপন্ন দেশগুলো সেখানে আরেকবার বৈশ্বিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। স্যান্ডির বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও তাতে শামিল হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.