যুক্তরাষ্ট্রে স্যান্ডির ছোবল-ক্রমেই চরমভাবাপন্ন হচ্ছে আবহাওয়া

গত সোমবার (২৯ অক্টোবর) স্থানীয় সময় রাত ৮টায় যুক্তরাষ্ট্রে আটলান্টিক জোনে চরম আঘাত হেনেছে শতাব্দীর ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডি। এ লেখার সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এতে মারা গেছে কমপক্ষে ৪৮ জন।


ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কয়েক হাজার কোটি ডলারের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিউ ইয়র্ক সিটি। সেখানকার উপকূলীয় এলাকায় বাতাসের সঙ্গে ১৪ ফুট উঁচু ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে। মোট ১৫টি অঙ্গরাজ্যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। প্রায় ৬৫ লাখ বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কিছু এলাকায় কয়েক ফুট উঁচু বরফের আস্তরণ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জনজীবন রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত ২৪ অক্টোবর সৃষ্টি হওয়া হারিকেন স্যান্ডি যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানার আগে জ্যামাইকা, হাইতি ও কিউবায় আঘাত হেনেছিল। সেসব আঘাতেও ৪৪ জনের প্রাণহানি এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনই এ ধরনের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের অন্যতম কারণ।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের যে ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, সে ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করার সম্ভবত আর কোনো সুযোগ নেই। স্যান্ডি যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানার মাত্র তিন দিন আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ঘূর্ণিঝড় সন তিন আঘাত হেনেছে। ফিলিপাইন, চীন ও ভিয়েতনামের অংশবিশেষে আঘাত হানা এ ঘূর্ণিঝড়েও ৩০ জনের প্রাণহানি ও ব্যাপক সম্পদহানি হয়েছে। দিন দিনই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যেমন বাড়ছে, তেমনি সাগরের আগ্রাসী রূপও ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি এগুলোর তীব্রতাও বাড়ছে। সাগরের বুকে জেগে থাকা বেশ কিছু দ্বীপ ও দ্বীপরাষ্ট্র এরই মধ্যে মনুষ্য বসবাসের উপযোগিতা হারিয়েছে। আরো অনেক দ্বীপই দ্রুত সে পথে এগিয়ে চলেছে। অথচ দুর্ভাগ্যজনক যে বিশ্ব নেতারা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চেষ্টার পরও জলবায়ু পরিবর্তনের লাগাম টেনে ধরার মতো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেননি। কিয়োটো প্রটোকল, মন্ট্রিয়ল প্রটোকলের মতো মহৎ উদ্যোগগুলোও কার্যত মাঠে মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই আগামী ৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ মুহূর্তে সেখানে ঘটে যাওয়া এ ভয়াবহ দুর্যোগ নির্বাচনী প্রচারণায় জলবায়ু পরিবর্তন রোধের বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণভাবে তুলে ধরবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন।
এদিকে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস সিডর ও আইলার ক্ষত বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে এখনো মুছে যায়নি, সেখানে এ মুহূর্তে নীলম নামে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট আরেকটি ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে। গতকাল রাতের দিকে এটির দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু উপকূল অতিক্রম করার কথা ছিল। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে এ ধরনের আরো অনেক ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। কে জানে এর কোনটি ভয়াবহ রূপে আবার আমাদের উপকূলে আছড়ে পড়বে, তছনছ করে দেবে উপকূলীয় জনজীবন। স্যান্ডির তাণ্ডব ও ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত কাটিয়ে ওঠার সামর্থ্য যুক্তরাষ্ট্রের আছে। দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতিও তাদের যথেষ্ট। কিন্তু আমরা কি তেমন দুর্যোগ মোকাবিলায় আদৌ সক্ষম? হাইতি ও জ্যামাইকায় লাখ লাখ মানুষ এখনো খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতিও খুব একটা তার ব্যতিক্রম নয়। আমাদের তাই জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রেক্ষাপটে স্থিতিশীল উন্নয়নের স্বার্থেই দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রে স্যান্ডির আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির শিকার মানুষের জন্য আমরা সহমর্মিতা জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, খুব দ্রুত তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।

No comments

Powered by Blogger.