জাতিসংঘ খুলছে-পাতাল ট্রেন আংশিকভাবে চালু হচ্ছেঃ স্কুল খুলবে সোমবার

৩ দিন বন্ধ থাকার পর জাতিসংঘ সদর দফতর চালু হলো ১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার। একইদিন চালু হলো নিউইয়র্ক সিটির বিরাট সাবওয়ে ব্যবস্থার অংশবিশেষ। তবে সিটির ১১ লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে যেতে পারছে না শুক্রবার পর্যন্ত।

শনি ও রোববার সাপ্তাহিক ছুটি শেষে সোমবার ৫ নভেম্বর পাবলিক স্কুলে ক্লাস বসবে বলে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ জানিয়েছেন।
এভাবেই হারিকেন স্যান্ডির ভয়াবহতা কাটিয়ে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করছেন নিউইয়র্কবাসী। তবে ম্যানহাটানের আড়াই লক্ষাধিক মানুষকে আরো ক’দিন অন্ধকারে থাকতে হবে।

ব্রুকলীন এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের কিছু এলাকাতেও বিদ্যুৎ সরবরাহে বিলম্ব ঘটবে বলে সংশ্লিষ্টরা বলেন। একইভাবে ক্রমান্বয়ে জেগে উঠছে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত নিউজার্সীর বাংলাদেশী অধ্যুষিত আটলান্টিক সিটি, হবোকন এবং মন্টগোমারীর বিস্তির্ন এলাকা।

বুধবার ৩১ অক্টোবর অপরাহ্নে এ অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের অভয় দিয়েছেন যে, প্রশাসন তাদের পাশে রয়েছে। যে কোন সহায়তা তারা অবশ্যই পাবেন। উদ্ধার ও পুনর্বাসন তৎপরতা দ্রুত শুরুও তাগিদ দিয়েছেন বারাক ওবামা।

১ নভেম্বর ভোর রাতে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, হারিকেন স্যান্ডির আঘাতে এখন পর্যন্ত ৬৭ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। এর মধ্যে নিউইয়র্ক সিটিতেই ৩০ জন। এ সিটির ক্ষতির পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে সিটি মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ প্রাথমিক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করেন। নিহতদের মধ্যে নিউজার্সী-৮, কানেকটিকাটে ৪ জন রয়েছেন।

প্রাণহানীর ঘটনা আরো বাড়বে বলে উদ্ধার কর্মীরা আশংকা করছেন। কারণ, এখনও অনেক এলাকার সাথে যোগাযোগই স্থাপিত হয়নি। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আর্থিক ক্ষতি হতে পারে ৬ বিলিয়ন ডলারের মত-রাজ্য গভর্ণর ক্যুমোর আশংকা। নিউজার্সীর ১৭ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৮ লাখের বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনস্থাপিত হয়েছে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে।

নভেম্বরের ৯ তারিখের মধ্যে সকলের বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনস্থাপিত করা সম্ভব হবে বলে অঙ্গরাজ্য গভর্ণর ক্রিস ক্রিস্টি আশাবাদ পোষণ করেন। কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ১৮ হাজার গ্রাহক অন্ধকারে রয়েছেন। স্যান্ডি আক্রান্ত অঙ্গরাজ্যসমূহে সর্বমোট ৬০ লাখ মানুষ এখনও অন্ধকারে রয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে বলা হয়েছে।

এদিকে নিউইয়র্ক সিটির জন্যে সামান্য হলেও একটি সুসংবাদ দিয়েছেন মেট্রপলিটন ট্র্যাঞ্জিট অথরিটি (এমটিএ) চেয়ারম্যান যোসেফ লোহটা। তিনি বলেছেন, ১ নভেম্বর সকাল থেকে ব্রুকলীন এবং ম্যানহাটানের ৩৪ স্ট্রীটের মধ্যে সাবওয়ে চলাচল করবে প্রতি ১০ মিনিট অন্তর। তবে সবগুলো ট্রেন চলবে না।

২৩টির মধ্যে ১৪টি সাবওয়ে চালু থাকবে ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। শুক্রবারের পর হয়তো সবগুলো সাবওয়ে চলতে সক্ষম হবে-আশাবাদ এমটিএ চেয়ারম্যানের। পাবলিক বাস সার্ভিস স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি সাবওয়ে চালু হলে নিউইয়র্ক সিটির স্থবিরতা কাটিয়ে উঠা অনেকাংশে সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সকলে। উল্লেখ্য, দৈনিক গড়ে ৭৪ লাখ মানুষ এই সিটির সাবওয়ে ব্যবহার করেন। অপরদিকে, বাইরে থেকে ম্যানহাটান তথা জাতিসংঘের শহরে ঢুকতে হলে প্রতিটি প্রাইভেট কারে কমপক্ষে ৩ জন যাত্রী থাকতে হবে-এ বিধি চালু করেছে কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ রাস্তায় অপেক্ষমান লোকজনকে প্রাইভেট কারে নিয়ে ম্যানহাটানকে সচল রাখার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে সাবওয়ে পুরোপুরি চালু না হওয়া পর্যন্ত। এ ব্যবস্থার আওতায় ইয়েলো ট্যাক্সি ড্রাইভাররাও যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠাতে পারবেন।

নিউইয়র্ক সিটির ক্ষতিগ্রস্ত অন্যতম এলাকা হচ্ছে স্ট্যাটেন আইল্যান্ড বরো। সেখানকার অধিবাসী (নর্থ আমেরিকান ট্র্যাভেল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-নাটাব’র  সভাপতি) নাজমুল হুদা এনাকে বলেন, আড়াই দিন অন্ধকারে থেকে বুধবার দুপুরে কুইন্সে এসেছি। গাড়ি চালিয়ে ২৫ মিনিটের রাস্তা আসতে ৩ ঘন্টা লেগেছে। নাজমুল হুদা বলেন, আমার বাসা ডেঞ্জার জোনের বাইরে ছিল বলে জলোচ্ছ্বাসের শিকার হইনি। তবে ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায়ই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখনও বিদ্যুৎ পাইনি। এজন্যে পরিবার নিয়ে সরে পড়েছি।

স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের ডেঞ্জার জোনের ৪০০ গজ দূর টঙ্গেন হিলের অধিবাসী নির্মাণ ব্যবসায়ী নূর হোসেন বুধবার রাতে (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল) এনাকে বলেন, আমার বাসার বেসমেন্টে পানি উঠেছে। বিদ্যুৎ নেই। এজন্যে আমি ব্রুকলীনে অবস্থান নিয়েছি স্বজনের বাসায়। নূর হোসেন বলেন, আমার কয়েকজন ভাড়াটের বাড়ি সয়লাব হয়ে গেছে পানিতে। ক্ষতি হয়েছে ভবনের। নাজমুল হুদা এবং নূর হোসেন বলেন, স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত সেন্ট জর্জ, সাউথ বীচ, ফাদার ক্যাপাডোনা বুলোভার্ড প্রভৃতি এলাকায় বেশ কিছু বাংলাদেশী বসবাস করেন। তাদের অবস্থা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

বিধ্বস্ত জনপদে ফিরতে পারছেন না বাংলাদেশীরা
এনা জানায়, নিউজার্সীর সাউথজার্সীর বিরাট এলাকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানকার আটলান্টিক সিটিতে ৩ সহস্রাধিক বাংলাদেশীর বাড়ি পানিতে ডুবে গিয়েছিল। এখনও বেসমেন্ট পানিতে পূর্ণ।

৩১ অক্টোবর দুপুরে ফিরেছিলেন সাউথজার্সী বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বাবুল এবং আটলান্টিক সিটি বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি আকবর হোসাইন। তারা উভয়ে এনাকে জানান, প্রথম তলা পর্যন্ত পানি উঠেছিল।

পানি নেমে গেছে। তবে বেসমেন্ট এখনও পানিতে ভর্তি। প্রতিটি বাড়িই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক বাড়ির দরজা-জানালা ভেঙ্গে গেছে। ছাদ পড়ে যাবার উপক্রমও হয়েছে। ভেতরের আসবাবপত্র পচে যাবার উপক্রম হয়েছে। তারা জানান, আমরা ফিরতে চাই। কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই কোন বাড়িতে। এজন্যে ফেরার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।

শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত বাড়ির বাইরে অনেক দূর বসবাসের মাধ্যমে হাপিয়ে উঠেছি। জহিরুল ইসলাম বাবুল বলেন, এ সিটির ক্যাসিনোগুলোও বন্ধ। তাই বাড়িতে ফেরার পরও কয়েকদিন বেকার থাকতে হবে অনেককে। এ ক্ষতির কোন সীমা-পরিসীমা নেই।

No comments

Powered by Blogger.