হাই ক্লাস কলগার্ল by সিরাজুল ইসলাম

২২ বছর বয়সী মডেল কন্যা প্রিয়াংকা জামান একজন হাই ক্লাস কলগার্ল। লিবীয় নাগরিক সামির আহমেদ ওমরের সঙ্গে  ৭-৮ মাস আগে এক ডিজে পার্টিতে তার পরিচয়। ওই পার্টি হয়েছিল রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে। তার সঙ্গে গত কয়েক মাস সে নিয়মিত রাত কাটিয়েছে রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোতে। অন্য বন্ধুদের সঙ্গেও এভাবে রাত কাটানোর অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

৬ দিনের রিমান্ডে মহানগর গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন পরিচয়ই প্রকাশ পেয়েছে প্রিয়াংকার। এ সব তথ্য জানিয়েছে সে নিজেই। সে জানিয়েছে, ছোটবেলাতেই তার পিতা আসাদুজ্জামান মারা যান। গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের রঙ্গুর বাজার আলভি গ্রামে। শিশুকাল থেকেই বড় হয়েছে ঢাকায়। বর্তমান ঠিকানা ৩১/১ সার্কুলার রোডের সিদ্ধেশ্বরীতে। প্রিয়াংকা জানায়, স্কুলে পড়া অবস্থায় ১৩ বছর বয়সে তার প্রথম বিয়ে হয়। তার একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান  রয়েছে। তাদের বয়স ৭ ও ৫ বছর। তারা নানীর কাছে বেড়ে উঠছে। বিলাসী জীবনের আকাঙক্ষার কারণে ৩-৪ বছরের ওই সংসার ভেঙে যায়। পরে সে আবার স্কুলে ভর্তি হয়। ২০০৪ সালে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। এর আগে ৮ বছর বয়সে বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর মাধ্যমে নাচ শিখতে শুরু করে। ২০০৭ সালে বিটিভিতে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে। মুস্তাফিজুর রহমান পরিচালিত ‘ছায়াছন্দ’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই উপস্থাপনা জগতে তার হাতেখড়ি। ‘আজিজ মার্কেট’ নাটকের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পরিচিতি। মডেল হিসেবে কাজ করেছেন আরএফএল, মাধুরী জুয়েলার্স প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে। ফটোশপে অংশ নিয়েছেন কৃষ্ণচূড়া ড্রেস হাউজসহ কয়েকটি হাউজে। রূপসী বাংলা, রেডিসনসহ পাঁচতারকা হোটেল ছাড়া অন্য কোন স্থানে এখন সে ডিজে পার্টিতে অংশ নেয় না।
দেশীয় খাবারে অনীহা: প্রিয়াংকাসহ লিবীয় নাগরিকরা রিমান্ডে আসার পর দেশীয় খাবার খেতে অপারগতা প্রকাশ করে। তারা চাইনিজসহ বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড খেতে চায়। ডিবি কর্মকর্তারা ওইসব খাবার দিতে কোনভাবেই রাজি নয়। এক পর্যায়ে ঈদের দিন থেকে তারা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে তাদের স্যালাইন পুশের ভয় দেখানো হলে দেশীয় খাবার গ্রহণ করে।
অসুস্থ ওমরের বায়না: প্রিয়াংকার বয়ফ্রেন্ড ওমর গতকাল সকাল থেকে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানায়, সে প্রচণ্ড পেটব্যথায় ভুগছে। তাকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করা হলে বায়না ধরে, প্রিয়াংকাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কিছুতেই ওমরের সঙ্গে হাসপাতালে প্রিয়াংকাকে নিয়ে যেতে রাজি হয়নি। অন্যদিকে ওমর কিছুতেই প্রিয়াংকাকে ছাড়া হাসপাতালে যাবে না। পরে দুপুর পর্যন্ত মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ের পশ্চিম পাশের একটি রুমে প্রিয়াংকাকে নিয়ে যাওয়া হয় ওমরের সান্নিধ্যে। ওই রুমে ওমরের হাত, পা ও কপাল টিপে দেয় প্রিয়াংকা। ওই সময় পুলিশের ২ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা সদস্য তাদের সামনে ছিল। অপর ২ লিবীয় নাগরিক আমারা মোহাম্মদ আমারা এবং মোবারক ফার্গ সেলিমকে বারান্দায় বসিয়ে রাখা হয়। আমারা ও মোবারক সেখানে বসে ধূমপান করে অলস সময় কাটিয়েছে। পরে বেলা ২টার দিকে প্রিয়াংকাকে ছাড়াই ওমরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মায়ের তদবির: মডেল কন্যা প্রিয়াংকাকে ডিবি’র জাল থেকে মুক্ত করতে নানাভাবে তদবির করছেন তার মা। কাজে লাগানো হচ্ছে অভিজাত পরিবারে থাকা প্রিয়াংকার বয়ফ্রেন্ডদের। গতকাল সকালে তার মা নিজে ডিবি কার্যালয়ে এসে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার কাছে নিজের অসহায়ত্বের কথা ব্যক্ত করে বলেছেন, আমার কোন ছেলে নেই। আমার নিজেরও কোন আয়ের উৎস নেই। দুই মেয়ের উপার্জনে আমার সংসার চলে। আমি জানতাম না মেয়ে বিপথে চলে গেছে। জানতাম- প্রিয়াংকা যেসব টাকা-পয়সা উপার্জন করছে সবই বৈধভাবে করছে। অভিনয়, ফ্যাশন শো’ এবং ফটোশপে অংশ নেয়া ছাড়া সে কোন অবৈধ পথে টাকা উপার্জন করছে তা জানতাম না। আমার মেয়েকে যদি একবারের মতো ক্ষমা করেন তবে তাকে আর বিপথে যেতে দেবো না। তবে প্রিয়াংকার মায়ের এসব আকুতিতে মন গলেনি সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তার।
গোয়েন্দা কর্মকর্তার বক্তব্য: ডিবি পুলিশের উপ-কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, মডেল কন্যাসহ ৩ লিবীয় নাগরিকের ৬ দিনের রিমান্ড আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) শেষ হচ্ছে। রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করা হবে। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, ৬৮৪টি বাংলাদেশী পাসপোর্ট, ১ লাখ ৮১ হাজার ৩০৪ ইউএস ডলার, ১০ লাখ ৬৬ হাজার ৫০২ টাকা, ৮ লিবিয়ান দিনার, ২ কাতারীয় রিয়াল, ৭টি মোবাইল সেট, ১টি ল্যাপটপ, ২টি আইপ্যাড, ১টি ব্ল্যাকবেরি নোটপ্যাড, ২ বোতল সুইডিশ ভদকা, ২টি মাস্টার কার্ড এবং ৭টি আইডি কার্ডসহ ২৩শে অক্টোবর দিবাগত গভীর রাতে রাজধানীর হোটেল লেক শোর থেকে প্রিয়াংকাসহ ৩ লিবীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধারকৃত অর্থের বৈধতা এবং লিবীয় নাগরিকদের কোন পাসপোর্ট এখনও পর্যন্ত তারা দেখাতে পারেনি। মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম মনে করেন, অঢেল অর্থ সম্পদ ও বিলাসী জীবন লাভের প্রত্যাশায় প্রিয়াংকা জড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক পাচারকারী ও প্রতারক দলের সদস্যদের সঙ্গে। লিবিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে তারা দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশের নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অনেকে লিবিয়া গিয়ে বৈধতা লাভে ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরে আসছে। এ চক্রের সঙ্গে দেশীয় কিছু ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সি জড়িত আছে।

No comments

Powered by Blogger.