দুর্ভাগা লিমন-ডিসির পরামর্শ অনৈতিক

কোনো সংবাদই যেন আমাদের এখন আর বিব্রত কিংবা বিচলিত করে না। পাঠক সংবাদপত্রের পাতায় যাবতীয় খারাপ খবর পড়তে এতটা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন যে, ভালো কিংবা সুখবর থাকলেও তা তাদের চোখ এড়িয়ে যায়।


দুর্ঘটনায় প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে, শহর বন্দর গ্রামে মানুষ খুন হচ্ছে, নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হচ্ছে_ এ যেন তেমন গুরুত্বপূর্ণ খবরই নয়। বার্তা সম্পাদক সন্ধ্যায় বার্তাকক্ষে গিয়ে জানতে চান সারাদেশে দুর্ঘটনায় কত লোক মারা গেছে। সিদ্ধান্ত তার প্রতিদিনের_ সব খবর মিলিয়ে একটি খবর হবে। শিরোনামও সহ-সম্পাদকদের মুখস্থ। প্রাত্যহিক দুর্যোগ-দুর্ঘটনার পাশাপাশি নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতার ঘটনাও যেন নির্বিকার গ্রহণ করতে হচ্ছে আমাদের! প্রশাসনযন্ত্রের নিষ্ঠুরতার শিকার লিমনকে ঘিরে সারাদেশ তোলপাড় হয়েছে। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও এই তরুণ দরিদ্র ছাত্রের প্রতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্মমতার বিরুদ্ধে ধিক্কার সোচ্চারিত হয়েছে। এ কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ও যথেষ্ট বিব্রত। মানবাধিকার লঙ্ঘনের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ওপরে তুলতে লিমনকে নির্যাতনের ঘটনার 'অবদান' কম নয়। যারা লিমনকে পঙ্গু করে একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে নিকষ অন্ধকারে ডুবিয়ে দিল, তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের 'পরামর্শ' দিয়ে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক যে কাজটি করেছেন, তা অমার্জনীয় বলেই আমরা মনে করি। এহেন ঔদ্ধত্যের পেছনে সম্ভবত তার ভেতরে ওপর মহলকে তোষামোদে তুষ্ট করার মানসিকতা কাজ করছে। একজন জেলা প্রশাসক হিসেবে অশোক কুমার বিশ্বাস যে কাজটি করলেন তা স্পষ্টতই তার দায়িত্ববহির্ভূত। এই দরিদ্র যুবকটির পাশে সারাদেশ। তাকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। জেলা প্রশাসকের এই অন্যায় আচরণে সঙ্গত কারণেই তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, জেলা প্রশাসকের এই 'পরামর্শ' অনৈতিক ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সংবিধানসম্মত অধিকারের লঙ্ঘন। আমরাও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এই অভিমতের সঙ্গে সহমত পোষণ করছি।
পঙ্গু লিমনের জীবনে ইতিমধ্যেই দুর্ভাগ্যের অমানিশা নেমে এসেছে। জীবনের নিরাপত্তার অভাবে সে তার প্রিয় গ্রাম ছেড়ে কাউখালীতে একটি ভাড়া করা বাড়িতে বসবাস করে সেখানেই পড়াশোনা করছে। কী দুর্ভাগ্য আমাদের_ লিমনের মতো এক অসহায় তরুণের জন্য আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারছি না। বিপদও তার পিছু ছাড়ছে না। ঝালকাঠির জেলা প্রশাসকের আচরণ আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.