বদলে যাও বদলে দাও মিছিল- রাসায়নিক ও ভেজালমুক্ত খাদ্য অবশ্যই সম্ভব by মো. শহিদুল হক

‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’ ব্লগে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ও নির্বাচিত সাতটি ইস্যু নিয়ে অব্যাহত আলোচনা হচ্ছে। আজ রাসায়নিক ও ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চয়তা গড়ে তোলার ওপর একটি বিশ্লেষণাত্মক অভিমতসহ আরও দুজন লেখকের নির্বাচিত মন্তব্য ছাপা হলো।


বর্তমানে কোন খাদ্যে কী মেশানো হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার ছাড়া সবাই জানে। সরকার যদি জানতই, তাহলে দেশে ভেজাল চলত না। এখানে তালিকা দিয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ, সব ধরনের খাদ্যেই ভেজাল। এখন বরফেই ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। পত্রিকায় প্রকাশ, ৪০ শতাংশ ওষুধের মানই নেই। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত খাদ্যসামগ্রীগুলোর শুল্ক ভবনেই নামমাত্র ফরমালিনসহ দু-একটি পরীক্ষা করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
আমাদের দেশে রাস্তায় রাস্তায় ফল, মাছ, সবজির বাজার। এদের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা যে-ই হোক না কেন, সে যদি আন্তরিক হয়ও, তার পরও মাছ বিক্রেতা কখন গোপনে ফরমালিন মেশাবে, ফল বিক্রেতা কখন কার্বাইড মেশাবে এটা খেয়াল রাখা সম্ভব নয়। একমাত্র বাজার ছাড়া কোথাও কেউ কোনো কিছু বিক্রি করতে পারবে না। সোজা কথা, এটাকে এমন পর্যায়ে নিতে হবে যেন জনস্বাস্থ্য বিভাগ সহজেই তাদের পরিদর্শন যখন-তখন করতে পারে। প্রতিটি বাজারেই বাজার সমিতির মাধ্যমে ‘স্বাস্থ্য পরিবীক্ষণ বিভাগ’ ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। কোনো পাইকারি দোকান খুচরা বিক্রতার কাছে উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া কিছু বিক্রি করতে পারবে না। যাঁদের বিদেশের অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরা এটা জেনে থাকবেন।
অন্য দেশগুলো কীভাবে ম্যানেজ করছে, সেটা জানতে হবে। আমাদের দোকান/মার্কেটের সংখ্যা এত বেশি যে একবার জরিমানা করার পর আবার তার কাছে ফিরে আসতে পাঁচ বছর সময় লেগে যাবে। তারপর আবার জরিমানার পরিমাণও কম। ব্যবসায়ী হিসাব করেন, জরিমানা দিলাম ২০ হাজার কিন্তু লাভ হলো ৫০ লাখ টাকা। এ ধরনের ব্যবস্থায় অপরাধকে উৎসাহিত করা হয়। অবশ্যই ব্যবসায়ের পরিধি ও উৎপাদনের পরিমাণের ওপর আনুপাতিক হারে জরিমানা করতে হবে, যেন পাঁচ বছরের ব্যবসা এর ভেতরে চলে আসে। তখনই অপরাধ দূর হবে।
আমাদের দেশে রাস্তাতেই গরু জবাই চলে। যে কেউ যেখনে-সেখানে স্বাধীনভাবে মাংস বিক্রি করতে পারে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নিজ উদ্যোগে করতে পারে কি না, যাচাই করে দেখেন। এভাবে চললে, ফরমালিন মেশানো মরা গরু, মুরগি সবাইকে খেতেই হবে। একমাত্র সিটি করপোরেশন গরু জবাইয়ের জায়গাগুলো নিশ্চিত করবে এবং এই প্রতিষ্ঠানকে কঠিন জবাবদিহির মধ্যে রাখতে হবে। দায়িত্বগুলো এমনভাবে বণ্টন করা প্রয়োজন, যে কারও পক্ষে দায়িত্ব অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
ভেজাল নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা এত বিশাল সুসংগঠিত বাহিনী কোথায় পাব? আমাদের দেশে পুলিশের সংখ্যা এমনিতেই কম। পুলিশ আছে হয়তো এক লাখ ২০ হাজার। প্রয়োজন পাঁচ-ছয় লাখ। ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচার বিভাগে পাঠিয়ে দিতে হবে। পুলিশের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে। অনেকে বলবেন, পুলিশ তো নির্ভরযোগ্য নয়। তবে আমাদের পুলিশের ওপর পূর্ণ আস্থা আছে। বাংলাদেশের আস্থায় আনার ব্যবস্থাপনা নেই। গত ২৭ জুন পুলিশ-প্রধানের খবর অনুষ্ঠানে (সম্ভবত বৈশাখী চ্যানেলে) তিনি বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হলে পুলিশ ভালো কাজ করতে পারবে। এটাই অপ্রিয় সত্য কথা। রাজনৈতিক নেতারা যদি পুলিশের আইন সংস্কার করে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করেন, তাহলে সবকিছুই ঠিকঠাক চলবে। পৃথিবীর সব দেশে পুলিশ কি মানুষের বন্ধু নয়? আমাদের দেশে না হওয়াটাই রাজনৈতিক। একটা তথ্য নিশ্চিতভাবে জানবেন, পৃথিবীর যেকোনো দেশের তুলনায় আমাদের উপমহাদেশের মানুষ কম অপরাধপ্রবণ। সরকারের পূর্ণ সমর্থন থাকলে, অপরাধ দূর করার জন্য ১০০ জন ম্যাজিস্ট্রেটই যথেষ্ট।
সিটি মেয়রের অধীনে প্রতিটি সংস্থার পুলিশ-বিচার বিভাগ সবই আলাদা হতে হবে। একসময় কম মানুষ ছিল, কোনো রকম খুঁড়িয়ে চলছিল। বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে এখন সবই ‘আন্তর্জাতিক’ মানে নিয়ে যেতে হবে। অবকাঠামো তৈরি না করে, গরিব দেশ বলবেন কিংবা অশিক্ষিত ড্রাইভার দিয়ে গাড়ি চালাবেন, আর দুর্ঘটনা হবে না, এটা সম্ভব নয়। বাস্তবতার তাগিদে শুধু শিল্প-পুলিশের আইন পাস হয়েছে। একইভাবে, অন্যান্য জরুরি সেবা খাতের কাঠামো তৈরি না করলে আমাদের ভেজাল খেতেই হবে।
প্রতিটি জেলায় বিএসটিআই অফিস নির্মাণের বিষয়টি সরকার ইচ্ছা করে দুর্বল করে রেখেছে। তারা কোথায়, কার কাছে জবাবদিহি করে বা আদৌ করে কি না, সাধারণ মানুষের জানা নেই। ৬৪টি জেলায় এই সংস্থার অফিস, প্রয়োজনীয় লোকবলসহ ভেজাল পরীক্ষার আধুনিক যন্ত্রপাতি লাগবে। দেশে কি মানুষের অভাব রয়েছে? এখানে সামাজিক সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততা ও স্বেচ্ছাসেবী কর্মী নেওয়ারও সুযোগ আছে। তবে ব্যক্তি খাতে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারকেই এটা করতে হবে। পৃথিবীর সব দেশই তা-ই করছে।
সাধারণ মানুষের সস্তা খাবার মানসিকতাও বড় একটি বাধা। হয়তো অভাব থেকেই এটা হয়েছে। এই সস্তার মানসিকতাকে ব্যবহার করে একটা শ্রেণী টাকা লুটছে। বিদশেও ফুটপাতে সব বিক্রি হয়। কিন্তু তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণে, এরা প্রতিদিন সরকারকে কর দিচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক সংগঠনের চাঁদাবাজেরা অবৈধভাবে এ টাকা তোলে। সরকার কিছু পায় না। সঠিক নিয়ম না থাকার কারণে এ দেশে ভেজাল হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে কোন ধরনের ব্যবসা কোথায় হবে, এটার একটা পরিসংখ্যান নেওয়ার পর সরকার তা অনুমোদন দেয়। পুরোটাই তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। সরকার ব্যবসায়ীকে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়। ফলে ব্যবসায়ীরা ভেজালের মতো বাজে কাজ করে না। আমাদের দেশে সরকার সবাইকে বিক্রির সুযোগ করে দিলেও শেষ পর্যন্ত কেউ লাভ করতে পারে না।
একটা প্রভাবশালী মহল দেশে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, জীবনরক্ষাকারী ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি ও তৈরি করছে। এরা মানুষের স্বাস্থ্যের বারোটা বাজিয়ে ভেজাল জিনিস বাজারজাত করে প্রচুর টাকা আয় করছে। এরা কখনো চাইবে না ‘ভোক্তা-অধিকার আইন’ কার্যকর হোক। সংগ্রামের মাধ্যমে এটা চালু না করা পর্যন্ত আমাদের মুক্তি নেই।
মো. শহিদুল হক: বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক।
mshm50@gmail.comই-মেইল: bjbd@prothom-alo.info
facebook.com/bjbdmichhil

ব্লগ থেকে...
নির্বাচিত মন্তব্য
আজকাল ভালোবাসায় সফলতা না পেলে অনেক ছেলে সেই প্রেমিকার ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। এটা খুবই ঘৃণ্য ও নিচুমনের একটি কাজ। এ নিয়ে আমরা আবার মেয়টিকেও অনেক দোষারোপ করি। কিন্তু একটি ছেলে বা একটি মেয়ের ভালোবাসাবাসিতে আবেগপূর্ণ কিছু ঘটনা হয়ে যায়। বন্ধুরাও চলাফেরার সময় হাসিচ্ছলে মোবাইলে ছবি তুলে ফেলে। সব ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পায় না। যেকোনো কারণে ভেঙে যেতে পারে। মেয়েটির কোনো কারণে অন্যত্র বিয়ে হতেই পারে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ছবিগুলো প্রকাশ করা বিবেকহীনতার পরিচয়। আমাদের সঠিক শিক্ষার প্রয়োজন। যারা এই ঘৃণ্য কাজ করে, তাদের মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তি দেওয়া উচিত।
আরিফুর রহমান
tunaman7787@gmail.com

নির্বাচিত প্রস্তাব
খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণের অপরাধে চলমান ভ্রাম্যমাণ আদালতে শাস্তি দিয়ে বিচার করা হয় না। শুধু জরিমানা করা হচ্ছে। এই অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইনকে যুগোপযোগী করতে হবে। শাস্তির আইনটি দেশবাসীকে ব্যাপকভাবে জানাতে হবে। প্রয়োজন নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে সারা দেশে ঘোঘণা দিয়ে একযোগে অভিযান চালানো। যেমন, অমুক তারিখের পর থেকে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল বা বিষাক্ত কিছু মিশ্রণ কোনো ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা যদি প্রমাণিত হয়, তবে তাদের এ অপরাধের জামিন নামঞ্জুর ও প্রয়োজনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ভোগ করতে হবে। সব মিডিয়াসহ, আবাসিক এলাকায় মাইকিং করে নতুন আইনের খবর জানাতে হবে। ফলে দেশের মানুষ এই অপরাধ ও আইন সম্পর্কে জানবে। আইন জানা না থাকা আমাদের বড় একটি সমস্যা।
আল মাসঊদ খান
masud700@live.com

নিজের মত দিন...
ব্লগে
www.bodlejaobodledao.com
চলতি বিষয়—
 বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ চাই
 সাইবার অপরাধমুক্ত দেশ চাই
 রাসায়নিক ও ভেজালমুক্ত খাবার চাই
 নৌ-দুর্ঘটনা বন্ধ করতেই হবে

জনমত জরিপের ফলাফল
বদলে যাও বদলে দাও মিছিলের ওয়েবসাইটে নতুন তিনটি জনমত শুরু হয়েছে চলতি সপ্তাহে। আপনিও অংশ নিন জরিপে।
ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চয়তায় প্রতিটি জেলায় খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন?

 হ্যাঁ ৭৪%  না ৯%
 মন্তব্য নেই ১৭%
২৫ জুলাই, ২০১২ পর্যন্ত
আপনি কি মনে করেন, বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠন অপরিহার্য?
 হ্যাঁ ৭৫%  না ১১%
 মন্তব্য নেই ১৪%
২৫ জুলাই, ২০১২ পর্যন্ত
আপনি কি মনে করেন, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে এখনই সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন জরুরি?
 হ্যাঁ ৮৩%  না ৮%
 মন্তব্য নেই ৯%
২৫ জুলাই, ২০১২ পর্যন্ত
www.bodlejaobodledao.com

No comments

Powered by Blogger.