উজানের পানি ও ভারী বর্ষণে দুই জেলায় বন্যা

উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও তিন দিনের টানা ভারী বর্ষণে রংপুর ও নীলফামারীতে বন্যা দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাটে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর ভাঙন নগররক্ষা বাঁধে আঘাত হেনেছে।


আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
রংপুর: গতকাল রোববার রংপুর সদর উপজেলার গান্নারপাড় এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, তিন দিনের বর্ষণ ও নদীর পানির তোড়ে গঙ্গাচড়া-মহিপুর পাকা সড়কটি ভেঙে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাঁশের পাইলিং করে, বালুর বস্তা ফেলে মূল বাঁধকে রক্ষার চেষ্টা করলেও তা ভেস্তে গেছে। মহিপুর-গঙ্গাচড়া সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গেছে। নদীর পানি মূল বাঁধে আঘাত করায় নদীপারের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। লোকজন ঘরবাড়ির মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।
গান্নারপাড় এলাকার সবুজ মিয়া নৌকায় করে বাড়ির মালামাল সরিয়ে নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কী আর করার আছে! হামারগুলার ভাগ্যত খালি বাড়িঘর সরে নেওয়া লাগে।’ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার মনে হয় আসল বাঁধটা ভাঙি যাইবে।’ গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু জাফর জানান, যথাসময়ে কাজ করার পরও ভাঙন মূল বাঁধে আঘাত হেনেছে। বিষয়টি পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। রংপুর পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, পাকা সড়কটির ভাঙন রক্ষায় বাঁশের পাইলিং ও বালুর বস্তা ফেলা হলেও তা ভেস্তে গেছে। এখন মূল বাঁধকে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নীলফামারী: তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল জেলার ডিমলা উপজেলার ডালিয়ায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে দুপুর ১২টায় পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে ডিমলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ও জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তাবেষ্টিত প্রায় ১৫টি গ্রামের সহস্রাধিক ঘরবাড়ি হাঁটু ও কোমরপানির নিচে তলিয়ে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাউবো তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি ফটক খুলে রেখেছে। ডিমলার ডালিয়ায় অবস্থিত পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ঝারশিংহেরশ্বর ও পূর্ব ছাতনাই গ্রামের সাতটি ওয়ার্ডে প্রায় ৭৫০ পরিবার চার দিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।’
লালমনিরহাট: জেলার তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান ও রতনাই নদীতে পানি বেড়ে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হাতিবান্ধায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এনায়েত উল্লাহ জানান, আজ (রোববার) দুপুর ১২টায় তিস্তা ও ধরলা নদীর পানিপ্রবাহের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে। হঠাৎ কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বেড়েছে।
জেলা প্রশাসক মোখলেছার রহমান সরকার জানান, জেলার নদ-নদীর পানি বাড়া-কমার দিকে নজর রাখা হচ্ছে। তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইলেও ধরলার পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.