আবেদনময়ী শরীর দেখিয়ে পুরুষ শিকার করতেন মডেল প্রিয়াংকা by ইমরান আলী

মিডিয়াতে কোনো সুখ্যাতি না থাকলেও বর্তমানে তাকে নিয়ে চলছে ব্যাপক গুঞ্জন। বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট, ডলার ও টাকাসহ তিন লিবিয়ান নাগরিকের সঙ্গে আটক হন মডেল পরিচয় দানকারী প্রিয়াংকা। মূলত তার আটকের পর থেকে মিডিয়াসহ সব মহলেই তাকে নিয়ে চলছে আলোচনা।

সবার কাছে এখন একটিই প্রশ্ন, কে এই প্রিয়াংকা। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদে তার সম্পর্কে পেয়েছেন চাঞ্চল্যকর তথ্য। যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর মডেলিংয়ে জড়িয়ে পড়েন প্রিয়াংকা। পরে আর তার পড়াশোনা হয়নি। কিন্তু তিনি বাংলা ও ইংরেজিতে স্মার্টভাবে কথা বলার কারণে অনেকেই সহজেই তার প্রেমে পড়ে যায়। আর এই সুযোগে প্রিয়াংকা কামিয়ে নেন টাকা। মডেলিং করার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর ধরে করে আসছেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রিয়াংকার বাড়ি নরসিংদীতে। তার পিতার নাম আসাদুজ্জামান। সম্প্রতি তার পিতা মারা গেছেন। আর প্রিয়াংকার পুরো নাম প্রিয়াংকা জামান। প্রিয়াংকারা দুই বোন। এর মধ্যে ছোট তিনি। বড় বোনও মডেলিংয়ে জড়িত। রাজধানীর শান্তিনগরের ৩১ নম্বর বাড়িতে থাকেন তারা। এখানে তার বাসা হলেও মূলত চলাফেরা করতেন রাজধানীর অভিজাত ও কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত বনানী, গুলশান ও বারিধারা এলাকায়। 

প্রিয়াংকাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শহিদুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, হোটেল রূপসী বাংলায় এক ডিসকো পার্টিতে লিবীয়ার নাগরিক সামিরের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় প্রিয়াংকার। আর এখান থেকেই সামিরের সঙ্গে প্রেম হয় তার। যা এখন পর্যন্ত বিদ্যমান। আটকের সময়ও সামির ও জামান একই রুমে ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে প্রিয়াংকা জানিয়েছেন, এক সময় তিনি বিটিভির ছায়াছন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। ফেমাস টিভির মডেল, আরএফএল-পিভিসির বিজ্ঞাপন মডেলও ছিলেন। কৃষ্ণচুড়া ড্রেস হাউসের ফটোসেশন, মাধুরী জুয়েলার্সেও মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও একুশে টেলিভিশনে প্রচারিত ‘আজিজ সুপার মার্কেট’ নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। আর আট বছর ধরে রয়েছেন এ পেশায়।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, মডেল পেশার আড়ালে রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবের পার্টিতে অবাধ যাতায়াত করতেন প্রিয়াংকা। আর এখান থেকে যৌবনের উন্মাদনা দিয়ে পুরষ শিকার করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য। চেহারায় সুদর্শনা আর কথায় স্মার্ট সর্বোপরি আবেদনময়ী শরীর নিয়ে নিজেকে উপস্থাপনের কারণে সহজেই পুরুষরা তার প্রেমে পড়ে যেতেন। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন প্রিয়াংকা। 

এফএম রেডিওর আরজেদের মতো বাংলা ইংরেজি মিশিয়ে নানা ভঙ্গিমা করে কথা বলতেন তিনি। দামি পোশাক আর দামি গহনা পরে দামি মোবাইল হাতে টার্গেটকৃত খদ্দেরদের সঙ্গে কথা বলতেন। এতে করে খদ্দেররাও বিভ্রান্ত হতেন।

জানা গেছে, ওই সকল পার্টিতে যারা যেতেন তাদের মধ্যে বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করতেন প্রিয়াংকা। এই টার্গেটকে সামনে রেখেই প্রিয়াংকা কিছু সিন্ডিকেটে জড়িয়ে যান। আর এসব সিন্ডিকেটে তার নিয়মিত বিচরণও আছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, প্রিয়াংকাসহ আটক তিন লিবিয় নাগরিকদের রিমান্ডের এখনো তিন দিন বাকি রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তাদের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মঙ্গলবার গভীর রাতে দেশি-বিদেশি মুদ্রা এবং বিভিন্ন সরঞ্জামসহ গুলশানের লেকশো’র নামের আবাসিক হোটেল থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রাপাচারকারী ও অবৈধভাবে জনশক্তি রফতানিচক্রের সদস্য লিবিয়ার নাগরিক সামির আহমেদ ওরফে ওমর, আমারা মাহমুদ ওরফে আমারা, মোবারক ফার্স সেলিম ও বাংলাদেশি নাগরিক মডেল প্রিয়াংকা জামানকে আটক করে।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬৮৪টি বাংলাদেশি পাসপোর্টসহ এক লাখ একাশি হাজার তিনশ’ চার মার্কিন ডলার, দশ লাখ ছেষট্টি হাজার পাঁচশ’ দুই টাকা, আট লিবিয়ান দিনার, সাতটি মোবাইল সেট, একটি ল্যাপটপ, দুইটি আইপ্যাড, একটি ব্ল্যাকবেরি নোটপ্যাড, দুই বোতল ভদকা, দুইটি মাস্টার কার্ড, সাতটি আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মালামালের মোট মূল্য প্রায় এক কোটি ষাট লাখ টাকা।

বুধবার ডিবি পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। সেখানে ডিবি জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘ দিন ধরে পরস্পরের যোগসাজশে অবৈধভাবে লিবিয়ায় মানুষ পাচার করে আসার কথা স্বীকার করেছেন। তবে গ্রেফতারকৃত তিন লিবিয় নাগরিক কাগজপত্র নিয়ে এ দেশে ব্যবসা করতে এসেছেন বলে দাবি করলেও তারা নিজেদের পাসপোর্ট দেখাতে ব্যর্থ হন।

রাজধানীর বিভিন্ন দামী হোটেলে ডিজে পার্টিতে অংশ নেওয়া মডেল প্রিয়াংকা জামান সাংবাদিকদের জানান, বিজ্ঞাপনের মডেলিং করাই তার পেশা। ধারাবাহিক ‘আজিজ সুপার মার্কেট’ নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। ৭ মাস আগে রূপসী বাংলা হোটেলে এক অনুষ্ঠানে পরিচয়ের সূত্রে মুবারক স্যালসের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। এরপর থেকে নিয়মিত মুবারকের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হতো।

গ্রেফতারকৃতদের নামে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে গুলশান থানায় মামলা করা হয়।

বর্তমানে তারা ৬ দিনের রিমান্ডে গোয়েন্দা হেফাজতে রয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.